৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • চিত্র বিচিত্র >> টপ নিউজ >> সোশ্যাল মিডিয়া
  • আলমগীর-শাবানা ও কুদরত আলী দপ্তরি
  • তানভীর আলাদিনের ছোট গল্প

    আলমগীর-শাবানা ও কুদরত আলী দপ্তরি

    দৈনিক আমার ফেনী

    // তানভীর আলাদিন //
    কই যাইবেন স্যার? আসেন, আমার রিকশায় আসেন, দৈনিক বাংলার মোড়ে প্রায় বৃদ্ধ ধরণের রিকশাওয়ালাটার ডাক শুনে চেরাগ আলী উঠতে গিয়ে একটু হোচট খেলেন। তার মনে হচ্ছে এই রিকশাওয়ালাকে তিনি আগে অন্য কোথাও দেখেছেন? কিন্তু মনে করতে পারছিলেন না, সাত-পাঁচ ভাবতে-ভাবতে উঠে বললেন- চলো, খিলগাঁও রেল গেইটে চলো।
    রিকশা চলতে-চলতে ফকিরাপুল এসে সিগনালে আঁটকে গেলো। চেরাগ আলীর মাথায় তখনো ঘুরছে এই রিকশাওয়ালাকে তিনি আগে কোথায় দেখেছেন, তার কাছে মনে হচ্ছে লোকটা তার খুব চেনা। কিন্তু কে…?
    হঠাৎ তার মনে হলো, আরে এই লোকটাতো তাদের প্রাইমারি স্কুলের দপ্তরি ছিলেন! কোনো স্যার না থাকলে তিনি বদলি শিক্ষক হিসেবে ক্লাসও নিতেন।
    রিকশা জ্যাম ছেড়ে পুলিশ হাসপাতালের গেইটের সামনে আসতেই চেরাগ আলী বললেন, রিকশা থামান। রিকশা থামতেই চেরাগ আলী রিকশা থেকে নেমে জানতে চাইলেন, আপনি কী কুদরত আলী ভাই না?
    ঢাকা শহরে অপরিচিত লোকের মুখে নিজের নামটা শুনে লোকটা চমকে উঠলেন! তিনি চেরাগ আলীকে বললেন, কে আপনি বাবা?
    -কুদরত ভাই, আমি চেরাগ আলী, মির্জা চৌধুরীর নাতী, আপনার স্কুলের ছাত্র ছিলাম, চিনেছেন?
    কুদরত আলী ড্যাব-ড্যাব করে চেরাগ আলীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন লজ্জা মাখা দৃষ্টিতে।
    -তা কুদরত ভাই আপনার এই অবস্থা কেন?
    -ভাইরে কপালের দোষ!
    -মানেটা কী?
    -ভাবছিলাম ঢাকা শহরটা আমাদের উপজেলা শহর থেকে অনেক বড়, এখানে রিকশা চালাতে গেলে কেউ চিনবো না, কিন্তু মাত্র দেড় মাসেই ধরা পড়ে গেলাম!
    -তা আপনি রিকশা চালাচ্ছেন কেন?
    -কইলাম না কপালের দোষে গো ভাই…!
    -তা কি হলো এমন যে কপালকে দোষ দিচ্ছেন? বলতে আপত্তি না থাকলে, বলতে পারেন।
    -তোমার ভাবী, মানে আমার বিবি সাহেবের শখ হলো ছেলেকে বিয়ে করাবেন তার ফুপাতো বোনের মেয়েকে। মেয়ে নাকি নায়িকা শাবানা ফেল। আমাকে বললো, দেইখো আলমের বাপ, এই মাইয়া ঘরে বউ হইয়া আইলে আমাগো আলমের লগে এক্কেরে আলমগীর-শাবানার মতো মানাইবো, সংসারটা সুখে-শান্তিতে ভরপুর থাকবো।
    তারপর ওই মেয়ের সঙ্গে ছেলেকে বিয়ে করালাম। এক মাসের মাথায় আলমের মা টুপ করে মরে গেলো! আলম চট্টগ্রামে একটা গার্মেন্টেসের কাটিং মাস্টার ছিলো, ভালোই দিনকাল কাটতে ছিলো।
    করেনাভাইরাসের কারণে গত এপ্রিলের ১ তারিখে আলমের গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায়। সে বাড়ি ফিরে আসে। হঠাৎ বেকার হয়ে সে কেমন জানি বদলে গেলো!
    এপ্রিলের ২৫ তারিখ মাগরিবের পরে আমি যখন ঘরে ডুকলাম, তখন আলম আর তার বউ আমার কাছে এসে বললো, তাদের হাতে নগদ কোনো টাকা পয়সা নাই। আমাকেই আগামীকাল থেকে বাজারের দায়িত্বটা নিতে হবে। আমি বললাম, সংসার চালানোর টাকা আমি কোথায় পাবো? যা ছিলো তার একটা বড় অংশ তোমাদের বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে, আর বাকিটা তোমার মায়ের চিকিৎসায়, আমার কাছেতো কোনো টাকা পয়সা নাই।
    বউটা বললো, তাহলেতো আর আপনাকে আমরা খাওয়াতে পারবো না! আপনার খাবার আর ওষুধের চিন্তা আপনিই করুন…!
    সত্যি-সত্যি ওরা আমাকে খাবার দেয়া বন্ধ করে দিলো! টানা পাঁচদিন হোটেলে খেলাম। হাতে তেমন আর টাকা পয়সাও নাই। এদিকে লোকজন আমার হোটেলে খাওয়া নিয়ে ফিস্ফাস করছে। মানসম্মান যায়-যায় অবস্থা।
    পঞ্চম দিনের রাতের খাবার খেয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলাম আলমের মায়ের কবরে, সেখানে গিয়ে অনকক্ষণ কাঁদলাম। ফজরের আজান হতেই ওঠে এলাম। আসার সময় আলমের মায়েরে বললাম, ‘বউরে তুই বলেছিলি সংসারে তোর পোলা নায়ক আলমগীর আর তার বউটা নায়িকা শাবানা হইবো, তোর লক্ষ্মীর সংসারটা অনেক সুখের হইবো, কিন্তু হইলো নারে বউ, হইলো না, এখন তোর পোলা ভিলেন মিজু আহমেদ আর তার বউটা রিনা খান হইয়া গেছে…! আমি চলে যাচ্ছি যে দিকে দুই চোখ যায়! দেশে এখন একটা মরণ রোগ করোনা আইছে, জানি না বাঁচুম কিনা, বাঁচতে মনও চাইতাছে নারে বউ, খালি তোর কাছে যাইতে মনটা কান্দেরে বউ, খালি মনটা কান্দে…।’
    -ঢাকায় এলেন কবে?
    -ওইদিনেই কুমিল্লা বিশ্বরোডে আইসা একটা এ্যাম্বুলেন্স পাইলাম, দু’শো টাকা ভাড়া দিয়ে ওটাতে করে ঢাকায় চলে আসলাম। করোনার কারণে চাকরি-বাকরি দেয়াতো কেউ দূরে থাক, মানুষ কথা কইতেও ভয় পাইতাছে।
    তারপর মেরাদিয়ার একটা গ্যারেজে গিয়া মিস্ত্রিরে হাতে পায়ে ধইরা এই রিকশাটা ভাড়ায় নিলাম আজ দেড় মাস, পেসেঞ্জার কম, রিকশা ভাড়া আর খাওনের টাকা হলেই গ্যারেজে রিকশাটা রাইখা ওইখানেই ঘুমিয়ে যাই।
    চেরাগ আলী তার পকেট থেকে দু’টো ৫শ’ টাকার নোট বের করে কুদরত আলীর হাতে দিলেন, সেই সঙ্গে তার ভিজিটিং কার্ডটা দিয়ে বললেন, এটা রাখুন, আজ আর রিকশা চালানোর দরকার নেই, গ্যারেজেই চলে যান। এই ভিজিটিং কার্ডে আমার ফোন নম্বর আছে, দরকার হলে ফোন দিয়েন। এখনতো কেউ চাকরি-বাকরি দেবে না, করোনা চলে যাক, তখন না হয় একটা কিছু ব্যবস্থা করা যাবে। তাছাড়া এই করোনায় কে বাঁচি, কে মরি তারও কোনা ঠিক ঠিকানা নেই।
    তাহলে কুদরত ভাই আপনি এখন চলে যান, আমি আর আপনার রিকশায় সওয়ারি হতে পারবোনা, আমি অন্য একটা রিকশায় চলে যেতে পারবো।
    তড়িঘড়ি করে চেরাগ আলী অন্য একটা রিকশায় উঠে বসলেন, কুদরত আলী তখনো রিকশা নিয়ে পুলিশ হাসপাতালের সামনে হা করে দাঁড়িয়ে আছেন।
    ২৫ জুন দুপুরে থানা থেকে একটা ফোন এলো চেরাগ আলীর কাছে, ফোনের অপর প্রান্থ থেকে তাকে জানানো হলো, গতকাল সন্ধ্যায় ট্রাকের ধাক্কায় এক বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা মারা গেছেন, বয়স আনুমানিক ৬৫ বছরের মতো…।
    -তা আমাকে এসব বলছেন কেন?
    -আপনাকে বলছি, এই জন্য যে লাশটার পকেটে আপনার একট ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে। ভাবলাম, আপনি যদি লোকটাকে চেনেন, জানেন, তাহলে আর আঞ্জুমান মফিদুলকে দিয়ে বেওয়ারিশ দাফন করার দরকার হতো না।
    চেরাগ আলী মনটা হু-হু করে কেঁদে ওঠে, সে বুঝে যায় লাশটা নিশ্চয়ই কুদরত আলী দপ্তরির হবে। কিন্তু থানা পুলিশের ঝামেলায় পড়ার ভয়ে সে টেলিফোনের লাইনে থাকা পুলিশ অফিসারকে বললেন, দেখুন- আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, আমার কার্ড কেনো কোনো রিকশাওয়ালার পকেটে থাকবে? আপনাদের মনে হয় কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। এ কথা বলেই চেরাগ আলী তার সেলফোনের লাইনটা কেটে দিলেন।
    লেখক : ন্যাশনাল নিউজ ডেস্ক ইন-চার্জ, বাসস।

    আরও পড়ুন

    যুবকদের প্রশংসা করলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ
    ফেনীতে বন্যাদুর্গতদের বিজিবির চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান
    ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি
    বানের জলে ভাসিয়ে দেয়া হলো শিফুকে
    দাগনভূঞায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিলো বিনা
    মিরসরাইয়ের ঝর্ণায় ঘুরতে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই পর্যটকের মৃত্যু
    পরশুরাম ও ফুলগাজীতে তৃতীয় দফায় বন্যা
    ডেইলি মুহুরী ডট কমের উদ্বোধন