বিশেষ প্রতিবেদক
ফেনীতে দিনে-দুপুরে চুরিসহ ছিনতাইয়ের ঘটনা বড়েছে। বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছিনতাইকারী চক্র। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে ফেনী শহরবাসী। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত এমনকি দিনে-দুপুরেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ফেনীর পুলিশ প্রশাসন কার্যত ভূমিকা রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে মনে করেন ভুক্তভোগিরা। তাদের দাবি, গোয়েন্দারা ছিনতাই প্রতিরোধে তৎপর থাকলেও থানা পুলিশের দায়িত্ব অবহেলা রয়েছে।
সাম্প্রতিক ঘটনা:
গত ২ নভেম্বর ভোরের দিকে শহরের কলেজ রোডে জয়ন্ত দেবনাথ নামে এক টেক্সটাইল প্রকৌশলীকে কুপিয়ে আহত করে ছিনতাইকারীরা। এসময় তার কাছ থেকে মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। ঘটনায় প্রকৌশলী মারাত্মক আহত হয়। জয়ন্ত দেবনাথ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান সহকারি কাম হিসাবরক্ষক শঙ্কর দেবনাথের ছেলে। তিনি ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। পরে শঙ্কর দেবনাথ বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে সোহেল (১৯) ও জুটন নাগকে (২৮) আটক করে। জানা যায়, জয়ন্ত দেবনাথ ভোরের দিকে ফেনীর মহিপালে নেমে একটি অটোরিকশাযোগে ফেনী জেনারেল হাসপাতলের স্টাফ কোয়ার্টারে নিজ বাসায় ফিরছিলো। পথিমধ্যে ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে ফেনী কলেজের সামনে এলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ৩-৪ জনের একটি ছিনতাইকারী চক্র অটোরিকশার গতিরোধ করে রামদা ও চাপাতি দিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে। এসময় তার কাছ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল সেট, ৭০ হাজার টাকা দামের একটি ল্যাপটপ, একটি ২ হাজার টাকা দামের বাটন মোবাইল ফোন ও নগদ ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
গত ৩১ অক্টোবর ফেনী শহরের পাঠানবাড়ি রোডে খান প্যালেসে দিনে-দুপুরে প্রবাসীর বাসায় দুধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। ওইদিন সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে ভবনের ষষ্ঠ তলায় কুয়েত প্রবাসী কবির আহমেদের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিজ ভাড়া বাসা থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যান কুয়েত প্রবাসী কবির আহমেদ খন্দকারের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার। কয়েক ঘন্টা পর সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ফিরে তিনি দেখেন বাসার তালা কাটা। দুর্বৃত্তরা তার ঘরে প্রবেশ করে ২০ ভরি স্বর্ণ, নগদ ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও দুটি ব্যাংক ভেঙে প্রায় ৫০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে। চুরির ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চললেও এখনও উদ্ধার সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।
গত ৮ অক্টোবর শহরের ইসলামপুর রোডস্থ মা ট্রেডার্সে চুরির ঘটনা ঘটে। দোকানের মালিক আমির হোসেন আরমান বলেন, চোর সকাল ৬টার দিকে দোকানের পেছনের টিনের চাল কেটে দোকানে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে দোকান থেকে নগদ টাকা ও মালামাল নিয়ে যায়।
১২ নভেম্বর মঙ্গলবার শহরের আদালত পাড়ায় খাজুরিয়া এলাকায় পৌর মৎস্য আড়তের এক কর্মচারীর কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় চাপাতিসহ দুধর্ষ ছিনতাইকারী মো. আল আমিন প্রকাশ ফরহাদ হোসেন প্রকাশ গুরাইয়াকে (২৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল বুধবার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে তার বিরুদ্ধে আড়ত কর্মচারী মো. রিপন (৩৭) বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ফেনী মডেল থানার (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা।
আসামি আল আমিন প্রকাশ ফরহাদ হোসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টের মৃত মো. ফরিদ প্রকাশ হুমায়ুন কবিরের ছেলে। বর্তমানে সে ফেনী পৌরসভার গুদাম কোয়ার্টার এলাকর মির্ধা বাড়িতে ভাড়া থাকে। ফেনী মডেল থানার ওসি জানান, গ্রেপ্তারকৃত আল আমিনের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলাসহ ১৬টি ছিনতাই, চুরি ও ডাকাতি মামলা রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। ছিনতাইকারীদের উৎপাত কমাতে দেওয়ানগঞ্জ রেলক্রসিং এলাকায় ঝোপ পরিষ্কার ও সড়ক বাতি স্থাপনের উদ্যোগ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ফেনী মৎস্য আড়ত কর্মচারী রিপনের বাড়ি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে। বর্তমানে তিনি খাজুরিয়া আদালত পাড়ায় ভাড়া থাকেন। রিপন জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে পৌর মৎস্য আড়তে যাওয়ার সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী তার গতিরোধ করে চাপাতি দেখিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তার চিৎকার শুনে পুলিশের টহল ও আশপাশের লোকজনএসে ওই ছিনতাইকারীকে চাপাতিসহ আটক করে। পরে তার বিরুদ্ধে রিপন বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা গোয়েন্দা শাখার পুলিশ পরিদর্শক মো. সামসুজামান জানান, ফেনীর স্টেশন রোড, রেলগেইট, বিরিঞ্চি ও ধর্মপুর এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন জন-কোলাহলপূর্ণ স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য আসে। গত একসপ্তাহে অভিযান চালিয়ে পাঁচজন মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তিনি জানান, ছিনতাই কিছুটা বেড়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি। বর্তমানে পুলিশের টহলও বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশ তৎপর রয়েছে।
জানা গেছে, ছিনতাইকারীরা কখনো মোটরসাইকেল, কখনো প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসযোগে পথচারী বা রাস্তায় অপেক্ষমাণ ব্যক্তির কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী, গলার চেইন, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এক্ষেত্রে দূরদূরান্ত থেকে আসা পথচারী ও মানুষের মনে সার্বক্ষণিক একটি ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করে।
ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানান, গত কয়েকদিনে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় মাদকসেবী ১০-১২জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।




