কামরুল আরেফিন
সদ্য ঘোষিত সোনাগাজী-দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গত রোববার দুপুরে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের বিষয়ে জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জয়নাল আবদিন বাবলু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন সেন্টু ও সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভূঁঞা, সোনাগাজী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর হোসেন বাবর, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এয়াছিন কমিশনার ও সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন নির্বাচিত করার বিষয় উল্লেখ করা হয়। এছাড়া দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক মাদু ও সদস্য সচিব কামরুল উদ্দিন, দাগনভূঞা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান বাবুল, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সাইফুর রহমান স্বপন ও সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির বাবু এর নাম উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। ঘোষিত সোনাগাজী-দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দিতে দেখা গিয়েছে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের। এদিকে রোববার তাৎক্ষণিকভাবে সোনাগাজী উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপির ৪টি ইউনিটের ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে অগঠনতান্ত্রিক ও পকেট কমিটি উল্লেখ করে ঘোষিত কমিটি প্রত্যাহারের দাবিতে দুই উপজেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে। সোনাগাজী পৌর চত্বর থেকে ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখানের দাবিতে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিন উদ্দিন দোলন, সোনাগাজী পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল মোবারক ভিপি দুলাল, সোনাগাজী উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন লন্ডনী, সোনাগাজী উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি নুরুল হুদা ও সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কামরুল ইসলাম। মিছিল শেষে সোনাগাজী জিরোপয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হন দলীয় নেতাকর্মীরা। সমাবেশ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীরা সোনাগাজী উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন।
দাগনভূঞায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পৌর শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বাজারের জিরো পয়েন্ট এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাজারের ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও পথচারীরা। ঘটনার পর থেকে বাজারে পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সন্ধ্যার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিতে দেখা গেছে।
সমাবেশে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক অভিযোগ করে বলেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়কের স্বাক্ষর ছাড়া দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে পকেট কমিটি করা হয়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি, যাদের স্থান দেওয়া হয়েছে তাদের কয়েকজন বিগত সময়ে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে চলেছে। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিল তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বিক্ষোভে সমাবেশে ঘোষিত কমিটিগুলো প্রত্যাহার করে ত্যাগী ও বঞ্চিতদের নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান বক্তারা।
এসময় দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। বিক্ষোভে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন আলো, আবু হায়দার পলিনসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিকদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও কৃষক দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন। সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে দাগনভূঞা জিরো পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এদিকে কমিটি ঘোষণার পর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার তার ফেসবুক আইডি থেকে সোনাগাজী-দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপি ও সোনাগাজী-দাগনভূঞা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে অগঠনতান্ত্রিক উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দেন।
গত রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহারের দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, আজকে ফেনী জেলা বিএনপি সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল স্বাক্ষরিত দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর, সোনাগাজী উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ ও অগঠনতান্ত্রিক, সদস্য সচিবের একক স্বাক্ষরে কমিটি হতে পারে না। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, সারাদিন বিভ্রান্তি নিয়ে কাটালাম, মনে হচ্ছে দলে আরো সমন্বয় ও যোগাযোগ জরুরী।