নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি হচ্ছে আবার কোথাও অবনতি ঘটেছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় পানি নামতে শুরু করেছে। জেলা শহরের প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি কিছুটা নেমে গেছে। এদিকে উজান থেকে পানি আসা অব্যাহত থাকায় দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। পানি ফুলেফেঁপে একের পর এক এলাকা প্লাবিত করছে। পুরো জেলার ৮০ শতাংশ মানুষ পানিবন্ধী আছে বলে জানাগেছে।স্থায়ী আশ্রয়নকেন্দ্র ছাড়াও স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় বানভাসি মানুষের তিলধারণের ঠাঁই নেই। এখনো মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও শতশত স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিচ্ছে উদ্ধার তৎপরতায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও উদ্ধার কাজের জন্য ১০টি বিশেষায়িত হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। উদ্ধারের পাশাপাশি চলছে ত্রান কার্যক্রম। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ত্রাণ বিতরণ করছেন। এখন পর্ষন্ত তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেলেও এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।এদিকে ফনীতে দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। চারদিকে পানি ও খাদ্যের জন্য হাহাকার। বিশেষ করে শহরের কিছু এলাকা থেকে পানি কমলেও বিভন্ন ঘর-বাড়ি এখন পানিতে তলিয়ে আছে।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপুল থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত এখনও রয়েছে কোমড় পানি। মহাসড়কে তৃতীয় দিনের মতো যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেল লাইন তলিয়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে তৃতীয় দিনের মতো রেল চলাচল। মহাসড়কের লেমুয়া ব্রীজ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানাগেছে। যেকোন মুহুর্তে বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। পুরো জেলার মানুষের স্বজনরা তাদের পরিজনকে পানিবন্ধী থেকে উদ্ধার করতে ও তাদের জন্য একটু পানি ও খাদ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জনকে খবর পাঠিয়ে আকুল মিনতি করছে।পরশুরাম ও ফুলগাজী থেকে পানি অনেকটাই নেমে গেছে। শহরের প্রধান সড়কগুলো এখনও বুক ও হাঁটু পানির নিচে। পানিবন্ধী মানুষগুলো এখন বাসা বাড়ি থেকে কেউ বের হতে পারছে না।গত চারদিন ধরে ফেনীতে নেই মোবাইল নেট ওয়ার্ক। মাঝেমধ্যে শহরে কিছু মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও সারা জেলায় নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। প্রায় পুরো জেলায় নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। শহরের মহিপাল ছাড়া অন্য কোথায় বিদ্যুৎ না থাকায় বহুতল ভবনের বাসীন্দারা পড়েছে মহা বিপদে। যাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে তারা যে যার মতো করে স্থান ত্যাগ করছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষজন কে কিভাবে আছেন মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় কেউ জানতে পারছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হচ্ছে না ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না। পানবন্ধীদের বিমান বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে শুকনো খাওয়ার দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। হঠাৎ শহর বন্যা কবলিত হওয়ায় প্রায় প্রতিটি বাসায় তীব্র খাদ্য সংকট ও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানি না থাকায় পয়োনিষ্কাষন সহ যাবতীয় কাজ করতে পারছে না মানুষ।ফেনীতে কম করে এক হাজার বোট আসলেও এদের অধিকাংশই শো অফ ও সেলফি তুলতে ব্যাস্ত বলে জানাগেছে। তাদের বিপদগ্রস্থরা পায়ে ধরেও বোট নিয়ে উদ্ধার কাজে সম্পৃক্ত করতে পারছেন না বলে জানাগেছ। অনেকে স্বেচ্ছাসেবকদের বোট দিয়ে কিছু বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে চাইলেও তারা কর্নপাত করছেন না বলে জানাগেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে রাত গভীর হলে হামলে পড়ছে ডাকাতরা। বিভিন্ন মসজিদ থেকে ও বাসাবাড়ি থেকে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুনা যাচ্ছে গতকয়েকদিন ধরে।এই পর্যন্ত বন্যায় ফেনীতে তিনজন মৃত্যু বরণ করেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানাগেছে। এদের মধ্যে একজন ফুলগাজীতে বন্যার প্রথম দিন মৃত্যু বরণ করে। শিফু নামে এক প্রতিবন্ধী নারী বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু বরণ করে। তিনি সদর উপজেলার উত্তর ধলিয়া গ্রামের লতিফ হাজী বাড়ির মৃত নুরুল আমিনের মেয়ে। লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ৮ নম্বর করপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিন শ্যামপুর গ্রামের আলিমুদ্দিন ব্যাপারী বাড়ির সাইফুল ইসলাম সাগর ফেনীতে দুর্গতদের উদ্ধার করতে এসে জোয়ারে ভেসে যায় বলে জানাগেছে। সাইফুল করপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা বলে জানাগেছে।