১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
শিরোনাম
ফেনী নদী থেকে উদ্ধার মৃত শ্রমিক আবু বক্কর না প্রনপ দে আমরা ফেনীবাসী’র সভাপতি এয়াকুব নবি, সেক্রেটারি একরামুল চৌদ্দগ্রামের  উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ভুঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা গ্রেফতার ফেনীর পুরাতন জেলগেটের সামনে থেকে গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে সোনাগাজীতে ইমামকে মেরে মসজিদের ক্যাশের চাবি ছিনিয়ে নিলো সন্ত্রাসীরা ফুলগাজীতে শ্যালকের ছুরিকাঘাতে ভগ্নিপতির মৃত্যু অ্যাডভোকেট সাজু ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিনকে কারাগারে প্রেরণ তেমুহনী থেকে ডিবির অভিযানে তিন মাদক কারবারি আটক অ্যাডভোকেট শাহাজাহান সাজু গ্রেপ্তার ফেনী সমিতি ইউকে’র নবনির্বাচিত কমিটির সম্মানে সংবর্ধনা
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> টপ নিউজ >> দেশজুড়ে
  • সিন্ডিকেটে সর্বনাশ প্রাণি ও মৎস খাত
  • সিন্ডিকেটে সর্বনাশ প্রাণি ও মৎস খাত

    দৈনিক আমার ফেনী

    জমির বেগ

    প্রাণি ও মৎস শিল্পের ব্যাপক বিকাশ দেশে দুই দশক ধরে দেখা দিয়েছে। সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মুরগী ও গরুর খামার এবং মাছের ঘের। গত কয়েক বছরে প্রাণি ও মৎস খাদ্যের দাম লাগামহীন ও অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে। একদিনের মুরগীর বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধিসহ নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশে বিশেষ করে পোলট্রি শিল্প প্রায় বন্ধের দিকে এগুচ্ছে।

    এক একটি খামার ছিল এক একটি মানুষের ও পরিবারে স্বপ্ন। জানা যায়, দেশে পোলট্রি শিল্পে বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ শিল্পটি দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে। এই শিল্প থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ১ কোটির বেশি মানুষ। প্রায় ৬০ লাখ মানুষ কর্মরত রয়েছেন এই শিল্পে।

    প্রাণি ও মৎস খাদ্যের দাম গত তিন বছরে বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। দিশেহারা খামারিরা তখন লাভের আশা বাদ দিয়ে আসল নিয়ে টানাটানি করছিল। গত কয়েক মাস পোলট্রি খামারিরা কিছুটা লাভের মুখ দেখে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর হঠাৎ বয়লার, সোনালী মুরগীর দাম কমে যাওয়ায় আবার বিপাকে পড়ে তারা। খামারীরা জানান, মুরগির যে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বলে প্রচার হচ্ছে তার চেয়ে বেশি তাদের উৎপাদন খরচ।

    ফেনী জেলা পোলট্রি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কামরুল আলম জানান, গত দুই বছরে দেশে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ফিড মেইলও। যেগুলো টিকে আছে তারা অনেক কষ্টে টিকে আছে। গত সরকারের আমলে শুধু বেড়েই চলেছিলো প্রাণি ও মৎস খাদ্যের দাম। দাম নিয়ন্ত্রনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ তারা। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে বহুজাতিক বড় কোম্পানী ও দেশীয় কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। না হলে এই শিল্পকে বাঁচানো যাবে না। তিনি আরো বলেন, ফিড বিক্রির উপকরণের দাম আন্তজার্তিক বাজারে উঠানামা করে। কোম্পানিরা কোন উপকরনের দাম বাড়লে ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়। উপকরনের দাম কমলে আর কমায় না। গত কয়েক বছর শুধু দাম বাড়িয়েই চলেছে একবারও কমায়নি। প্রতিমাসে ফিডের দাম নির্ধারণ করার দাবী জানান তিনি।

    বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিল’র (বিপিআইসিসি) তথ্য মতে দেশে নিবন্ধিত হাঁস মুরগীর খামার রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার। নিবন্ধন-অনিবন্ধন মিলে আছে এক লাখের বেশি। লোকসানে ব্যবসা করতে না পেরে ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।

    সূত্রে জানাগেছে, প্রাণিখাদ্য শিল্পের ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। কাঁচামালের দাম ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে একটি অসাধু সিন্ডিকেট হু হু করে প্রাণিখাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে । কাঁচামালের দাম বাড়ার অজুহাতে তারা প্রাণি খাদ্যের দাম তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়।

    খামারীদের মধ্যে যারা অনেক বছর সুনামের সহিত ব্যবসা করে আসছেন তাদের মধ্যে অনেকেই এই ব্যবসাকে পরিকল্পীতভাবে ধবংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তারা চোখ তুলছেন বহুজাতিক ও বড় বড় প্রাণিখাদ্য উৎপাদকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দিকে। তাদের অভিযোগ বড় বড় খামারিরা নিজেরাই বড় বড় খামার তৈরী করছেন। ছোট ছাট খামারিদের ধবংস করতে তারা ইচ্ছাকৃত খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

    বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, প্রাণিখাদ্যের প্রধান প্রধান উপাদান, ভুট্টার কেজি ২০ টাকা থেকে ৩৫-৪০ টাকা, সয়াবিন মিলের দাম ৩৭ টাকা থেকে ৭০ টাকা, রাইস পলিস ২১ টাকা থেকে ৩৭ টাকা হয়েছে। ৫০-৫৫ টাকার পোলট্রি মিল ১১০-১১৫ টাকা হয়েছে। ১০০ টাকার ফিশ মিলের দাম হয়েছে ১৫০ টাকা। গত দুই বছরে সয়াবিন মিলের দাম বেড়েছে (৮৮) শতাংশ, অন্য কাঁচামালের দাম বেড়েছে ১২৩ শতাংশ। ফিড তৈরীর মেডিসিনের দাম বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

    খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামারিরা গুনছে লোকশান। খামারিরা লোকশান গুনলেও তাদের রক্ত পানি করা ব্যাবসার ফসল পকেটে যাচ্ছে মধ্যস্ততাকারীদের।

    সূত্রে আরো জানাগেছে, বহুজাতিক কয়েকটি কোম্পানি নিজেদের চাহিদা মতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সয়ামিলের সংকট অনেকটা কৃত্রিম। দেশের সয়ামিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন বীজ আমদানি করে শুল্কমুক্তভাবে। প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন তেল উৎপাদনের পাশাপাশি উপজাত হিসেবে পাওয়া সয়ামিল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করত একসময়। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারণে শূন্য শুল্ক সুবিধায় আনা সয়াবিন বীজ থেকে উৎপাদিত সয়ামিন বেশি মুনাফার লোভে রপ্তানি করে দিচ্ছে তারা। এই কাজটি তিন থেকে চারটি সোয়াবিন তিলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করে থাকে।

    সোনাগাজীর বক্তারমুন্সির ফিড ও পোলট্রি ব্যবসায়ী আরিফ এটারপ্রাইজের স্বত্বাধিকার আরিফুর রহমান আরিফ দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে প্রাণিখাদ্যের ও পোলট্রির ব্যবসা করে আসছেন। তিনি জানান, খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তা লাগাম টেনে ধরে যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে আনতে হবে। ৫০ কেজি ওজনের ফিডের দাম বর্তমানে অযৌক্তিকভাবে তিন হাজার ৬০০ টাকার উপরে বিক্রি করা হচ্ছে। ৫০ কেজির দাম দুই হাজার থেকে দুই হাজার ১০০ টাকার মধ্যে আনতে হবে। তাহলেইে বাজার নিজ থেকেই নিয়ন্ত্রন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, একটি ডিম উৎপাদন করতে প্রায় নয় টাকার মতো খরচ হচ্ছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানের খরচ ৮টাকার মতো। মুরগী যে দামে খামারিরা বিক্রি করছে তাতেও লাভ নেই। সবকিছুর দাম বেড়েছে লাগামহীন ভাবে। কিভাবে এই ব্যবসাটি টিকে রাখবো তা নিয়েই চিন্তিত।

    দাউদপুর ফিড মেইলের স্বত্তাধিকার নাজমুল করিম জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফিড মেইলগুলো তাদের উৎপাদন প্রায় ২০ শতাংশ কমিয়ে ফেলেছে। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ফিড মিল বন্ধ হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান। নানান অনিয়ম ও উপকরণের মূল বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক খামার। বন্ধের পথেও রয়েছে অনেক খামার।

    ২৫ বছর ধরে ব্যবসা করছেন এরশাদ (ছদœনাম)। ব্যবসার আয়তনও বেড়েছে তিন থেকে চারগুন। ২০ থেকে ২৫ হাজার মুরগীর খামারও ছিলো তার। ভালো লাভও হয়েছে। খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় আস্তে আস্তে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। চেষ্টা ছিল খাদ্যের দাম কমলে আবার নতুন ভাবে শুরু করবে। দামতো কমেইনি বরঞ্চ অনেক বেড়েছে। বাধ্য হয়ে ব্যবসাই বন্ধ করে দিতে হয়েছে তাকে।

    একই অবস্থা গাবাদি পশুর দামেও। দাম বেড়েছে গম ভুসি, কুঁড়া, ডালের ও খইলের দাম। ২৫ কেজির এক বস্তা খাদ্যের দাম ছিল ৭০০-৮০০ টাকা। বর্তমানে তার দাম ১১০০-১২০০টাকা।

    মাছ ব্যবসায়ী কাশেম বলেন সকাল হলেই হাজার হাজার টাকার খাদ্য ঢেলে দিতে হয় পানিতে। যে হারে খাদ্য দেয়া হচ্ছে ঘেরে, সে হারেতো মাছের দাম বাড়ছেনা। বর্তমানে গ্রাহককে দ্বিগুন দামে মাছ ক্রয় করতে হচ্ছে। খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের কিছু করার নেই। নিজেদেরর কাছেও কষ্ট লাগে এতো দামে মাছ বিক্রি করতে। তারপরও লাভ নেই।

    বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাণি ও মৎস সম্পদ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এই শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত প্রয়োজনীয় কাঁচামালের উপর শুল্ক সুবিধা বাড়াতে হবে। সামগ্রীর যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর আমদানি কর কমাতে হবে। বাজার মনিটরিং ও সুষ্ঠু নীতিমালার মধ্যে আনতে হবে। তারা বলেন, শিল্পটি ধবংস হয়ে গেলে যেমন আমাদের পুষ্টির সমস্যা পড়তে হবে, তেমনি লাখ লাখ ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়বে। তাদের উপর নির্ভরশীল কোটি জনসাধারণ পড়বে খাদ্য ও অর্থ সমস্যায়।

    আরও পড়ুন

    ফেনী নদী থেকে উদ্ধার মৃত শ্রমিক আবু বক্কর না প্রনপ দে
    আমরা ফেনীবাসী’র সভাপতি এয়াকুব নবি, সেক্রেটারি একরামুল
    চৌদ্দগ্রামের  উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ভুঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা গ্রেফতার
    ফেনীর পুরাতন জেলগেটের সামনে থেকে গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে
    সোনাগাজীতে ইমামকে মেরে মসজিদের ক্যাশের চাবি ছিনিয়ে নিলো সন্ত্রাসীরা
    ফুলগাজীতে শ্যালকের ছুরিকাঘাতে ভগ্নিপতির মৃত্যু
    অ্যাডভোকেট সাজু ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিনকে কারাগারে প্রেরণ
    তেমুহনী থেকে ডিবির অভিযানে তিন মাদক কারবারি আটক