৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> টপ নিউজ >> মতামত
  • শেখ হাসিনা একাই লড়ছেন, আওয়ামী লীগ কোথায়?
  • শেখ হাসিনা একাই লড়ছেন, আওয়ামী লীগ কোথায়?

    দৈনিক আমার ফেনী

    বিপ্লব কুমার পাল

    সালটা ২০১৯, ১৭ ডিসেম্বর। বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা। প্রধান অতিথি দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। ভাষণ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা হলো। মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নামে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত পুরো মিলনায়তন। মাইকের সামনে দাঁড়ালেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তখনও এতটুকু কমেনি স্লোগানের তরঙ্গ। এরপর বক্তৃতা শুরু করলেন তিনি।

    সাবলিল বক্তব্যে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নেতাদের একজনও কেন এগিয়ে এসে সাহসী ভূমিকা রাখেননি—সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বললেন, এটা (আওয়ামী লীগ) এত বড় একটি সংগঠন…কত নেতা! তাঁরা তখন কোথায় ছিলেন? মাঝেমধ্যে এর উত্তর আমি খুঁজে ফিরি; কেউ একজনও সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলেন না। সাধারণ মানুষ সব সময় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। তিনি প্রশ্ন রাখলেন, ৩২ নম্বরের (ধানমন্ডি) মেঝেতে তাঁর মরদেহ পড়ে ছিল, কেন? এর জবাব আমি আজও পাইনি।

    শেখ হাসিনা এমন প্রশ্ন আবারও তুলেছিলেন ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ড স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, “১৫ আগস্ট ৩২ নম্বর ওই ধানমণ্ডি। লাশগুলো তো পড়েছিল। কত স্লোগান- বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে, আমরা আছি সেখানে। অনেক স্লোগান তো হচ্ছিল। কোথায় ছিল সেই মানুষগুলি? একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার? একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি?”

    বঙ্গবন্ধু কন্যার এই প্রশ্নের উত্তর এখনও দিতে পারেনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীরা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হারানোর সেই শোক থেকে শিক্ষা নিতে পেরেছে কি আওয়ামী লীগ? আমার দৃষ্টিতে মনে হয়- কোনো শিক্ষাই নেয়নি টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলের নেতাকর্মীরা। ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনের নামে সহিংসতার ঘটনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রায় নিরব ভূমিকা এটাই প্রমাণ করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ প্রতিহত করতে তো পারেনি, এমনটি জাতির পিতার হত্যার প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি, জানাজাও পড়েনি। ঠিক একই ভাবে ২০২৪ সালে জুলাই নাশকতার প্রতিহত করতে সংগঠন হিসেবে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলটির একমাত্র সৌভাগ্য হলো- মাথার উপর এখনও বটবৃক্ষ হয়ে রয়েছেন শেখ হাসিনা।

    কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু থেকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়নি আওয়ামী লীগ। ছাত্র আন্দোলকে ছাত্রলীগকে দিয়ে প্রতিহত করার সিন্ধান্ত যে আওয়ামী লীগের ভুল ছিল সেটাও প্রমাণিত। ছাত্র আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতেই যদি চায় তাহলে সেভাবে করলো না কেন আওয়ামী লীগ? মাঝ পথে কেন সরে দাঁড়ালো? ওই সঙ্কটময় মুহূর্তে ছাত্রলীগকে হল থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে ছাত্রনেতাদের জীবন বাঁচিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা না হলে- চট্টগ্রামে যেভাবে ছাদ থেকে ছাত্রলীগেরে কর্মীদের নিচে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছিলে, সেটিই হয়তো ঘটতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাণ যেতো বহু ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের। জুলাইয়ের সহিংসতা তারই ইঙ্গিত দেয়।

    সারা দেশে এতো বড় নাশকতা হলো, অথচ মাঠে দেখা যায়নি আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীদের। দেশ যখন জ্বলছিল তখন নিজেদের নিরাপদে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেত্বত্ব, মন্ত্রী, এমপিরা। সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কথায় নারায়ণগঞ্জে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে পানি খায় সেখানেও ভয়াবহ নাশকতা হলো, কোনো প্রতিরোধ হলো না। একই ভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, গাজীপুর, নরসিংদী, মাদারীপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায় কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলো না আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উপর যখন শুকুনের হামলা তখন কি করছিলেন আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী? তারা যদি এক সঙ্গে নাশকতাকারীদের প্রতিরোধ করতেন তাহলে ইতিহাসটা হতে পারতো অন্যরকম। অল্প কিছু নেতা-কর্মী এই নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। বহু কর্মী মারাত্মক আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

    আওয়ামী লীগ শূন্য প্রায় ফাঁকা মাঠে দীর্ঘ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেছে জামায়াত-বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী। তারা অস্ত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ কর্মী, ছাত্র-জনতাকে। কারণ “লাশ” তাদের রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার। আর সেটি করতেও পেরেছে জামায়াত-বিএনপি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের গায়ে রক্তের দাগ লাগাতে পেরেছে। রাজনৈতিক জীবনে এই রক্তের দাগ বয়ে বেড়াতে হবে শেখ হাসিনাকে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণকে স্বাধীনতা এনে দেওয়া আওয়ামী লীগ দলটি এর দায় এড়াতে পারে না।

    এবার ফিরি শেখ হাসিনার প্রশ্ন প্রসঙ্গে। ২০১৯ সালে তিনি নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন- বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময় আওয়ামী লীগের নেতারা কোথায় ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নেতাদের একজনও কেন এগিয়ে এসে সাহসী ভূমিকা রাখেননি? তিনি জানতেন লড়াইটা আসলে নিজেকেই করতে হয়। যেমনটি করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সারা জীবন জেল, নির্যাতন সহ্য করেছেন। তাঁকে বারবার যেতে হয়েছে ফাঁসির মঞ্চে। কিন্তু কখনই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করে সম্পদের পাহাড় গড়ছি আর বড় বড় কথা বলতে পারছি।

    বাবার দেখানো পথে হেঁটে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। এখনও হচ্ছেন। তাঁকে হত্যা করতে বারবার হামলা হয়েছে। গ্রেনেড হামলা করে তাঁকেসহ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন উন্নয়নের শিখরে। এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ। বিশ্ব মোড়লের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে দেশটির নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর করে দেখিয়েছে। মেট্রো রেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে বাংলাদেশের সক্ষমতাকে জানান দিয়েছে বিশ্ব দরবারে।

    দেশের এই অগ্রগতি থমকে দিতে “জুলাই সহিংসতা” দেখেছে পুরো বিশ্ব। লাশ নিয়ে রাজনীতি আর নাশকতা করে শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে তা নৎসাত করার চেষ্টা করছেন। সহিংসতা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে না নামলেও পুরো ঘটনা সামলে নেয়ার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকালে ছুটে যাচ্ছেন নাশকতার আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থাপনা দেখতে, পরক্ষণেই ছুটে যাচ্ছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। ভরসা দিচ্ছেন আহতদের; তাদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছেন। দিয়েছেন সব রকম সহায়তার আশ্বাস। একই ভাবে নিহতদের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান-স্বজনদের গণভবনে এনে সান্তনা দিয়েছেন। তাদের হাতে যেমন তুলে দিয়েছেন আর্থিক সহায়তা, তেমনি হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি কোটা আন্দোলনকে ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দেশব্যাপী শোক পালন করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ঠেকাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গণভবনে তাঁর সঙ্গে বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।’

    এদিকে রোববার ঢাকার সব ওয়ার্ডে জমায়েত এবং দেশের সব জেলা ও মহানগরীতে জমায়েতের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। পরদিন সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোকমিছিল করবে দলটি। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আবারও বসতে চায় আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসতে খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। এজন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন ভয়ঙ্কর বিপদের সময় পাশের মানুষটিও হয়তো পাশে থাকবেন না। যেমনটি দেখেছিলেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর। তাই একাই ছুটে যাচ্ছেন প্রতিটি ঘটনার কাছে। দেশের মানুষকে একটিই বার্তা দিচ্ছেন- তা হলো শেখ হাসিনার কাছে সবার আগে দেশ ও দেশের মানুষ। তাদের জন্য মঙ্গলের জন্য তার রাজনীতির। যার শুরুটা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে।

    আজকের এই সঙ্কটময় সময়ের মতো এমন অসংখ্য কণ্টকাকীর্ণ পথ বহুবার তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে অনেক কষ্ট। ১৯৭৫ সালে ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। ৮১-এর ১৭ মে দেশে ফেরা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। কিন্তু শত বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। এরপর দেশবাসীকে সামরিক শাসনবিরোধী গণআন্দোলন সংগঠিত করেন। ১৯৮৩ সালে একটানা ১৫ দিন তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ৮৪-এর ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বরে তাঁকে পুনরায় গৃহবন্দি করা হয়। ৮৫-এর মার্চে তাকে তিন মাস গৃহবন্দি রাখা হয়। ১৯৮৮ থেকে ২০০৪-এর ২১ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ১৯ বার হামলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই ভয় করেননি তিনি, অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি।

    সরকারে থেকেও বিভিন্ন সংকট সততার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠনের পরই বিডিআর বিদ্রোহের মতো ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘাত বাধিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণহানি এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের ওপর জোর দিয়েছিলেন। এরপর বিডিআর বিদ্রোহের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়। কিন্তু অপরাধীদের ছেড়ে দেননি প্রধানমন্ত্রী। তাদের আইনের মুখোমুখি করেছিলেন। পিলখানায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার দায়ে বিডিআরের ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল আদালত।

    ২০১৩ সালের ৫মে ১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধের পর মতিঝিলে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল হেফাজতকর্মীরা। তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাদের না ওঠার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, সরকারের পতন ঘটিয়ে ঘরে ফিরতে। মতিঝিল থেকে পল্টন এলাকায় চলে হেফাজতকর্মীদের তাণ্ডব। বহু প্রতিষ্ঠান, দোকান, গাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা, কেটে ফেলে সড়ক দ্বীপের গাছ, উপড়ে ফেলে সড়ক বিভাজক। শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য হেফাজত নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠক করে সরকার। কিন্তু শান্তির এই পথটিকে সরকারের দুর্বলতা ভেবেছিল হেফাজত। এরপর কোনো প্রাণহানি না ঘটিয়ে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে শাপলা চত্বর খালি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হেফাজত কর্মীর অধিকাংশ ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ সাহায্যও করেছিল।

    ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামাতের সহিংসতা এবং পেট্রোল বোমায় নিহত হয় প্রায় দুশ নিরীহ মানুষ। সরকারি অফিস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাতের দোকান তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির, চার্চ, প্যাগোডা। ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে এবং ফিসপ্লেট খুলে শতশত বগি এবং রেলইঞ্জিন ধ্বংস করে। নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুলে আগুন দেওয়া হয়। প্রিসাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা করে নাশকতাকারীরা। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আবার একই কায়দায় সহিংসতা হয়। পেট্রোল বোমা এবং ককটেল হামলায় নিহত হয় ৫৫ জন। ৬৬৪টি যানবাহন পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সবকিছু প্রতিহত করে আবারও উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনেন শেখ হাসিনা।

    ২০১৮ সালে ৮ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামে। যা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এক পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং কোটা ব্যবস্থা পুনর্মুল্যায়নের আশ্বাস দেন। এতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে সরকারকে ধন্যবাদ জানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাদার অব এডুকেশন বলে আখ্যায়িত করে। তবে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে সরকার। ওই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে সুপারিশ দেয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি হয়। এতে করে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়।

    ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের সংঘর্ষে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয়। এছাড়া আহত হয় ১০ জন শিক্ষার্থী। এরপর শুরু হয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন। ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত চলা আন্দোলন গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। ৯ দফা দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করে। যে আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যায় মৃত্যুদণ্ড এবং বেপরোয়াভাবে চালিয়ে কারো মৃত্যু ঘটালে সর্বোচ্চ ৫ বছর দণ্ডের বিধান রাখা হয়।

    দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বানচাল করতে দেশে ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এক দিকে চলছিল বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলন, অন্যদিকে সরাসরি মাঠে নেমেছিল বিশ্ব মোড়লের রাষ্ট্রদূত। বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দিয়ে নাশকতা করা হয়। গান পাউডার দিয়ে ট্রেনে আগুন দিয়ে বহু মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ভয়াবহত সহিংসতা হয়। প্রধান বিচারপতির বাসভবন, সরকারি অফিস, হাসপাতালে হামলা হয়। পুলিশসহ নিহত হয় অনেকে। এরপর শক্ত হাতে হামলাকারীদের প্রতিহত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে বিএনপি ছাড়াই ভোট হয়। আবার সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা।

    বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে পুর্নগঠন থেকে শুরু করে অসংখ্য মনুষ্যসৃষ্ট সংকট সততার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন শেখ হাসিনা। কে পাশে আছেন আর কে নেই সেটি তিনি গুরুত্ব দেননি। তিনি শুধু গুরুত্ব দিয়েছেন দেশ ও জনগণের মঙ্গলের কথা। ২০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। একটি কাজ যদি কেউ টানা পাঁচ বছর করেন তিনি দক্ষতা অর্জন করবেন- এটাই স্বাভাবিক। আর শেখ হাসিনা একটি কাজ করছেন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে। তাঁর চেয়ে দেশ পরিচালনা করার দক্ষতা আর কার আছে? ষড়যন্ত্র সামলে নিয়ে ঠিকই দেশকে নিয়ে যাবেন উন্নয়নের শিখরে।

    লেখক: গণমাধ্যমকর্মী।

    আরও পড়ুন

    যুবকদের প্রশংসা করলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ
    ফেনীতে বন্যাদুর্গতদের বিজিবির চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান
    ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি
    বানের জলে ভাসিয়ে দেয়া হলো শিফুকে
    দাগনভূঞায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিলো বিনা
    মিরসরাইয়ের ঝর্ণায় ঘুরতে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই পর্যটকের মৃত্যু
    পরশুরাম ও ফুলগাজীতে তৃতীয় দফায় বন্যা
    ডেইলি মুহুরী ডট কমের উদ্বোধন