নিজস্ব প্রতিবেদক
শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপনে ইসলামের দৃষ্টান্ত অনন্য। এজন্য ইসলামকে বলা হয় শান্তির ধর্ম। সহমর্মিতার ধর্ম। সম্প্রীতির ধর্ম। মানুষের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের ধর্ম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা শান্তি স্থাপনের কথা উল্লেখ করে অশান্তি সৃষ্টি না করতে বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তোমরা তাতে বিপর্যয় ঘটিয়েও না, তাকে (আল্লাহকে) ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকবে। নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সুরা আরাফ : ৫৬)।
অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা, মানুষের বাঁচার অধিকারকে বিঘ্নিত করা ইসলাম কখনও পছন্দ করে না। অশান্তি সৃষ্টিকারীদের নিন্দা করে আল্লাহ বলেন, যখন সে প্রস্থান করে তখন সে চেষ্টা করে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি এবং শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু নিপাত করতে পারে। আর আল্লাহ অশান্তি দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।’ (সুরা বাকারা : ২০৫)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা কাসাস : ৭৭)
মানুষের মৌলিক অধিকারের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে জীবনের নিরাপত্তা। জীবনের নিরাপত্তা বিধানে মানুষকে এগিয়ে আসতে ইসলাম উদ্বুদ্ধ করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যে ব্যক্তি কারও প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন (বিশ্বের) সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা : ৩২)। অপরদিকে যারা মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, তাদের ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা নিসা : ৯৩)
ইসলামে মানুষের একটি জীবনকে সব মানুষের জীবন বলে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এ জন্য একটি অন্যায় হত্যাকে ইসলাম বিশ্বমানবতাকে হত্যার সমতুল্য বলে ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা : ৩২)। আল্লাহ আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত বান্দা তারাই যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে না।’ (সুরা ফুরকান : ৬৮)
একজন মানুষের অধিকার রয়েছে আল্লাহর দেওয়া এ পৃথিবীর আলো-বাতাস গ্রহণের। মানুষ ইসলামের পথে আসুক বা না আসুক, তবে তার বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। এ জন্য ইসলাম অমুসলিমদের জীবনেরও নিরাপত্তা দিয়েছে। এ সম্পর্কে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।’ (বুখারি : ৩১৬৬)।
মানব হত্যা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রম উৎখাত করতে ইসলাম শুধু পরকালীন ভয় দেখায়নি, বরং কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে পরকালের শাস্তির পাশাপাশি পার্থিব জীবনেও তার জন্য মৃত্যুদণ্ড (কিসাস) কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের জন্য কিসাসের বিধান দেওয়া হলো।’ (সুরা বাকারা : ১৭৮)। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে- তাদের হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হবে কিংবা তাদের দেশান্তরিত করা (বন্দি) হবে।’ (সুরা মায়েদা : ৩৩)। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এ কথাই প্রতীয়মান হয়, ইসলামে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান তো দূরে, বরং সন্ত্রাস-জঙ্গিদের শাস্তি বিধানে ইসলাম বরাবরই সিদ্ধহস্ত।