১লা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> টপ নিউজ >> মতামত
  • সমাধান কোন পথে? হোক না আদালতে
  • সমাধান কোন পথে? হোক না আদালতে

    দৈনিক আমার ফেনী

    পলাশ আহসান

    সোমবার আবার রাজপেথে নামলো শিক্ষার্থীরা। এবার দাবি ৯ দফা। ব্যানার কিন্ত সেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। অথচ ২২শে জুলাইয়ে আদালেতের রায় এবং ২৩শে জুলাই এর প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে এই ব্যানারের আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বার বার নানা দফা আসছে। নানা সমন্বয়কের নামে বিবৃতি আসছে। বার বার দফা বদলাচ্ছে সমন্বয়কের নাম বদলাচ্ছে। পাশাপাশি থাকছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একমূখী প্রচার। সেখানে কোন যুক্তি কাজ করছে না। ওই এলাকা এখন এমন হয়েছে, সেখানে কেউ যুক্তি দিতে গেলে ভয়াবহ বুলিংএর শিকার হচ্ছেন।

    আলোচনার সুবিধার জন্যে কিছু পুরোনো কথা বলতেই হচ্ছে। যদিও আন্দোলন এখন আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নেই, একথা শিক্ষার্থীরাও কখনও কখনও স্বীকার করেছে। তবুও বলছি সেই ৫ই জুন ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিলের রায়ের দিন থেকে শুরু শিক্ষার্থীরা দাবি করেই গেছে, আর সরকার মেনেই গেছে। এর মধ্যে একটার পর একটা ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনা ডেকে এনেছে। যার কোনটিই প্রিতীকর নয়। দেশ আজ একটি ভয়াবহতার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশ ১৫০ শের বেশি মরদেহের ভার বইছে। ৭৪টি সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো কঙ্কালসার অবস্থায় রয়েছে।

    এই সব কিছুর দায় আমরা দেশের সবাই চাপাচ্ছি সরকারের কাঁধে। অন্য পক্ষ শিক্ষার্থীরা। তাদের কোন দায় কেউ দিচ্ছি না। সরকারও এখনও দেয়নি। কোমলমতি বলে দায়ের আঁচ থেকে দূরে রেখেছে। যদিও আদালতও শিক্ষার্থীদের কিছু বলেনি। কিন্তু পর্যবেক্ষণে বলেছে আইন বুঝতে না পারায় আজকের এই পরিস্থিতি। তবু সরকার এরই মধ্যে দায় কাঁধে নিয়ে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনেছে। যেগুলো মানেনি, সেগুলো মুহূর্তেই মানা সম্ভব নয় বলেই হয়তো মানেনি। কিন্তু মানবে না বলেনি।

    এরইমধ্যে রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফরিদপুর থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকায়ও দিয়েছে। কিন্ত সরকারি ভাষ্যে নিরাপত্তা জনিত কারণে সমন্বয়করা পুলিশি হেফাজতে থাকায় সেই ঘোষণা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তাতেও সমস্যা নেই। তাদের সঙ্গে তাদের পরিবার দেখা করতে পেরেছে। সেখান থেকে ফিরে তারা সুস্থ আছেন বলেও জানিয়েছেন অভিভাবকরা। এরই মধ্যে আদালতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের দ্রুত পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার।

    এরই মধ্যে সরকার নিহতদের স্মরণে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। নিহতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। তবুও আন্দোলনের নামে মাঠে নেমেছে কেউ কেউ। আমি ধরে নিচ্ছি সমন্বয়কদের দিয়ে জোর করে কথা বলানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করা উদ্বীগ্ন মা বাবা ভাইয়েরা মিথ্যা বলেছেন। কিন্তু সেটা তো প্রমানিত নয়। সত্য হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনার কথাও তো ভাবা যায়। যদি এতদিন ধরে আন্দোলনের সামনে থেকে পরিচিত হওয়া সমন্বয়কেরা বের হয়ে বলেন আমরা স্বেচ্ছায় ওই ঘোষণা দিয়েছি। তখন আমাদের এই সন্দেহবাদীরা কি বলবেন? আন্দোলনের সময়তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না।

    সোমবার যে রকম পরিস্থিতি দেখা গেলো, তাতে যদি আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটে তখনও নিশ্চয়ই দায় শক্ত কাঁধের সরকারের ওপর চাপানো হবে। এই সন্দেহের জবাবে আমি যদি বলতে চাই, আবারও নানা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দায় চাপানোর জন্যেই এই সন্দেহ। নিশ্চয়ই এখন আমাকে অনেক গালি দেবেন। দিন, তবু এত কিছুর পর আবার এই মাঠে নামাকে আমি নামানো হয়েছে বলেই সন্দেহ করতে চাই। পাঠক কেন এতে সন্দেহ? এই প্রশ্ন থেকে একটু একটু করে পেছনে যান, দেখবেন পুরো আন্দোলন চলার গল্পের মধ্যে আপনার সামনে হাজারটা উত্তর এসে দাঁড়াবে। কিন্তু যৌক্তিক সেসব উত্তর আপনি কাউকে শোনাতে পারবেন না।

    বিশ্লেষণের সময় এখন নয়। তাই আপাতত শুধু বর্তমানে থাকতে চাই। বলতে চাই, একটি নিভু নিভু আগুন এখন একটা শ্রেণি খুঁচিয়ে উষ্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে। নানা ব্যানার ব্যবহার করে তারা আগুন নিভতে দিতে চাইছে না। যেসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসছে, তাদেরকেও কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। নিহতদের পরিবারের চেয়ে বড় স্বজন হয়ে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে। পাঠক নিশ্চয়ই ভাবছেন কী লাভ তাদের এই আগুন জ্বালিয়ে? সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যের কথা বলছি না। কারণ সেটা আমি যেমন জানি আপনারাও জানেন। কিন্তু এই যত খুচরা ব্যানার এখন দরদী হয়ে মাঠে আসছে, তাদের উদ্দেশ্য কতটুকু সৎ সে প্রশ্ন এখন আপনারাই তুলবেন। তাদের প্রত্যেকের ছবি গণমাধ্যমে আসছে। দেখুন প্রায় সবাই আপনাদের চেনা। খোঁজ নিলেই জানবেন সরকারের প্রতি কার কি ক্ষোভ রয়েছে।

    একটি সরকারের থাকা না থাকা চাওয়া, যার যার রাজনৈতিক মত। এই মত প্রকাশের রাজনৈতিক পথ রয়েছে। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে সরকার বদল করতে হলে পেছনের দরজা খোঁজা তো কোন সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। অথচ সেই কাজটি ক্রমশ সামনে আসছে। এমনভাবে আসছে যেন সত্য মনে হয়। দেশে সীমিত আকারে কারফিউ চলছে। একইভাবে ইন্টারনেটও খোলা। বৈধভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢোকা যাচ্ছে না। কিন্তু অবৈধভাবে ঢোকা যাচ্ছে। অনেকেই ঢুকছেন। নানা কথা লিখছেন। যেসব কথার বিষয়বস্তু হচ্ছে, সরকারের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক সেটা মিথ্যা। গণমাধ্যমে যাই প্রচার হোক সেটা মিথ্যা। শুধু তাদের মত বিপ্লবীরা যা বলবে সেটাই সত্য। কিন্তু কেন সত্য? সেই ব্যাখ্যা নেই।

    অবৈধভাবে ঢোকা একজনের ফেসবুকের ওয়ালে দেখলাম, একজন নিজেকে কোটা আন্দোলনের কর্মী দাবি করে বর্তমান সন্দেহমূলক কর্মসূচিকে বলছেন ‘গণঅভ্যুত্থানের কর্মসূচি’! তিনি ৯টি দাবির কথা লিখেছেন। পাশাপাশি একজন সমন্বয়কের কথা লিখেছেন যার নাম এই প্রথমবারের মত শুনলাম। এই আন্দোলনে আফিস মাহতাব নামে একজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে দেখেছি। শুনলাম তিনিও এই আন্দোলনের সমন্বয়ক। আপনারা নিশ্চয়ই তাকে চেনেন। সেই যে ছেলেটা প্রকাশ্য সরকারি পাঠ্যপুস্তক ছিঁড়লো এবং সবাইকে ছিঁড়তে বললো। তার দর্শন নিয়ে এখানে প্রশ্ন করছি না। শুধু বলছি তিনি স্বাভাবিক চিন্তার মানুষ নন। তিনি ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ পরায়ন চিন্তা করেন এবং মানুষকে এরকম প্রতিশোধ পরায়ন হতে উৎসাহ দেন। বইএ কোন ভুল থাকলে তিনি ধরিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে ছিঁড়তে এবং সবাইকে ছিঁড়ে ফেলতে বলতে পারেন ?

    কোটা আন্দোলনে কতজন সমন্বয়ক আছেন সেব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। কিন্তু অনেকেই যে সামনে আসেনি এবং কেন আসেনিনি তা মোটামুটি নিশ্চিত বোঝা যায়। পাঠক আপনাদের আরও একবার বলবো, নিজের মনে প্রশ্ন তৈরি করতে। কেন আদালতের রায়ের পর সবাই একটু ধৈর্য ধরলো না? কেন সমাধানের একটু আগে প্রধানমন্ত্রীর সরল কথার ভুল ব্যাখ্যা করে আন্দোলন উত্তাল করলো? কেন সব দাবি মেনে নেয়ার পরেও আন্দোলন শেষ হচ্ছে না?

    কোটা নিয়ে আন্দোলনের সার্বিক স্বস্তি আমার মনে হচ্ছে একটু একটু করে আদালতের দিকে এগোচ্ছে। কারণ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া সমন্বয়কদের দ্রুত পরিবারে পাঠানো নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা অফিসে প্রকাশ্যে খাওয়া দাওয়া নিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। তাই এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অন্যদিকে মোড় দেয়ার চেষ্টাওতো আদালতের নজরে আসা উচিত। আমি বিশ্বাস করি সেটা নিশ্চয়ই এসেছে। এখন নিশ্চয়ই আদালত আরেকটি পর্যবেক্ষণ দিতে পারে যে “সরকার শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ করেছে, এনিয়ে আর কোন অস্থিরতা কাম্য নয়” আমি আইনজ্ঞ নই। জানি না আমার এই আহবান আইনত কি না? হলে ক্ষমা চাই। কিন্তু বলতে চাই, আমিসহ বহু মানুষ আছে এই দেশে, যারা মনেপ্রাণে চান না এই ইস্যুতে আর একটি মৃত্য্তুা দূরের কথা, আর এক ফোটা রক্ত ঝরুক।

    লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

    আরও পড়ুন

    মাতুভূঞায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
    ফেনীতে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত
    ইসলামী আন্দোলনের আমীর গণ বিপ্লবের মহানায়ক ছিলেন: মাও. জাফরী
    কোম্পানীগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে ছুরিকাঘাত, আহত-৪
    কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বনাম জেলা ছাত্রদলের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ
    মহিপালে গণহত্যা মামলায় সাবেক কাউন্সিলর বাহার গ্রেফতার
    ফেনী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ!
    ফেনীতে ছুরিকাঘাতে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, আতঙ্কে শহরবাসী