১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> টপ নিউজ >> দেশজুড়ে
  • আজ নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত
  • নিষিদ্ধ হয়েছিলো আরো দুইবার

    আজ নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত

    দৈনিক আমার ফেনী

    জমির বেগ

    সরকারের এক নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবিরকে আজ বুধবার (৩১ জুলাই) নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানাগেছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এটা ঠিক যে বুধবারের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি কিছুক্ষণ পরে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসবো। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। সেটা যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, তখন বলবো। তিনি আরো বলেন কোন পক্রিয়ায় জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে এ প্রশ্নের জবাব রয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, এই দলটাকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে। কোনো দলকে যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সেটি নির্বাহী আদেশেই হয়। সেটি কোনো বিচার বিভাগীয় আদেশে হয় না। এর আগে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশবিরোধী নৈরাজ্য, অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে একমত হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ১৪ দল।

    জামায়াত নিষিদ্ধ হয়েছিলো আরো দুইবার:

    ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানে অন্তত দুই বার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আদালত দলটির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর মৃত্যুদন্ডের রায়ও দিয়েছিলো। যদিও তাকে সেই শাস্তি ভোগ করতে হয়নি।

    বাংলাদেশেও স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ হয়েছিল জামায়াত। তবে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দলটি আবার সক্রিয় হয়। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে জামায়াতের বিচারের দাবি উঠলেও সেই বিচারের প্রক্রিয়া এখনও ঝুলে আছে। নিষিদ্ধ না হলেও ২০১৩ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারিয়েছে। ফলে তারা দলীয়ভাবে আর কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। ১৯৮৬ সালের পর থেকে প্রায় প্রতিটি সংসদে জামায়াত ছিল। ২০০৮ সালের সংসদে দুটি আসনে জিতেছিল তারা। এরপর আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।
    যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক রায়ে জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ বলা হলেও দল হিসাবে বিচারের এখতিয়ার এই আদালতের নেই বলে জানান। সেজন্য আইন সংশোধন করে শুধু ব্যক্তি নয়, দলের যুদ্ধাপরাধের বিচারের পথ করার দাবিও উঠেছিল শাহবাগ আন্দোলন থেকে।

    সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার পর নতুন করে আলোচনায় আসে দলটি নিষিদ্ধের বিষয় নিয়ে। এই আন্দোলনের মধ্যে সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা-আগুন দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াত ও বিএনপিকে দায়ী করার পর সোমবার ১৪ দলের এক বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানান, বুধবার মধ্যে নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হবে।

    জামায়াত ইসলামের জন্ম কাহিনী ও কখন নিষিদ্ধ হয়:

    ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট অখন্ড ভারতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা করা হয়। মওদুদীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা দলটির নাম তখন ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। মওদুদীর জন্ম বর্তমান ভারতের মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গবাদ শহরে। তার পড়াশোনার শুরু মাদ্রাসায়। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বেশি দূর না এগোলেও ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল তার।

    দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তি ভারত ভাগের পর পাকিস্তানে গিয়ে জামায়াতের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে থাকেন মওদুদী। ইসলামী ভাবাদর্শে দল গঠনকারী মওদুদী ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কুফল হিসাবে দেখতেন।

    পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে ইসলামী সংবিধান ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার আওয়াজ তুলে ১৯৪৮ সালে গ্রেফতার হন মওদুদী। কিন্তু ১৯৪৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পর ১৯৪৯ সালে মওদুদী মুক্তি পান এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।

    এরপর মওদুদীর নেতৃত্বে আহমদিয়াদের ‘অমুসলিম’ ঘোষণার দাবি ওঠে। তা কেন্দ্র করে লাহোরে দাঙ্গা বাধে। তাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ২ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। সেই ঘটনায় সামরিক আদালতে মওদুদীর মৃত্যুদ-াদেশ হয়েছিল। কিন্তু সে রায় আর কার্যকর হয়নি।

    ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক হিসেবে আইয়ুব খান ক্ষমতা নেওয়ার পর সব ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেন। তাতে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল। নিষিদ্ধের আদেশে বলা হয়েছিল, জামায়াত ও দলটির নেতারা রাষ্ট্রীয় সংহতি ও ঐক্য বিনষ্টের কাজে সক্রিয় ছিলেন। রাষ্ট্রের শত্রুদের কাছ থেকে দলটির অর্থ নেওয়ার প্রমাণও রয়েছে।

    আইয়ুব খানের আমলে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইনের বিরোধিতা করে পরিস্থিতি নাজুক করার চেষ্টা চালালে ১৯৬৪ সালে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। পাকিস্তানের দৈনিক ডনের সূত্রে জানা যায়, তখন নির্বাহী আদেশ ‘বেআইনি সংগঠন’ হিসাবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ধর্মীয় সব দল নিষিদ্ধ করলে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়।

    ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের সরকার মওদুদীকে আবার কারাগারে পাঠালেও পরে মুক্তিও দেওয়া হয় তাকে। মওদুদী ৭৫ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান।

    পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসাবে এখনও সক্রিয় আছে। তবে তাদের প্রভাব দিন দিনই কমছে। এই বছরের শুরুতে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে ২৪৩টিতে প্রার্থী দিলেও একটি আসনেও জিততে পারেনি দলটি।

    একাত্তর ও পরবর্তীতে জামায়াতের ভূমিকা:

    একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামায়াত। শুধু তাই নয়, বাঙালি হত্যাযজ্ঞে পাকিস্তানিদের সহায়তার ভূমিকাও নিয়েছিল দলটি। বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ে জামায়াতের প্রত্যক্ষ ভূমিকার বিষয়টিও আলোচিত।

    স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার ধর্মীয় সব দল নিষিদ্ধ করলে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়। তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর বাংলাদেশের যে উল্টোযাত্রা শুরু হয়, তাতে পুনর্বাসিত হয় জামায়াত। জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াত সক্রিয় ওঠার পর এইচ এম এরশাদের আমলে দলটি সংসদেও আসন নেয়। এরপর ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রীও করা হয় দলটির দুই নেতাকে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়াকে একাত্তরের লাখো শহীদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ বলে পরে মন্তব্য এসেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের মামলার এক রায়ে। ওই দুজন পরে যুদ্ধাপরাধে দোষি সাব্যস্ত হয়ে ফাঁসিতে ঝুলেছেন।

    বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষনেতা গোলাম আযম পাকিস্তান থেকে এরশাদ আমলে ফিরলেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর আমিরের দায়িত্ব নেন। তার প্রতিবাদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে উঠলে সেখান থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জোরাল হয়ে ওঠে।

    ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিলে একে একে ধরা পড়ে জামায়াতের শীর্ষনেতারা। বিচারে মৃত্যুদ- হয় দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদসহ কয়েকজন শীর্ষনেতার। গোলাম আযম ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাভোগের মধ্যে মারা যান।

    যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলন থেকে জামায়াত এবং দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের দাবি আবার জোরেশোরে ওঠে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হলেও তা সেই দাবি পূরণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কোনও লক্ষণ এতদিন দেখা যায়নি।

    আরও পড়ুন

    জাফর উল্লাহ সিদ্দিকির পরিবারকে পুনরায় হুমকি
    নিজ গ্রামে সংবর্ধনা পেলেন ক্রিকেটার আল ফাহাদ
    ফেনীতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর আকস্মিক মৃত্যু
    পরশুরামে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
    ইট ভাটা ও ব্রিক ফিল্ডে উচ্ছেদ অভিযান
    পরশুরামে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ এলাকার মাটি সাবাড়
    ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ বছর ধরে বিকল এক্স-রে মেশিন
    বিএনপির কমিটি ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া