জমির বেগ
প্রবাসীদের মধ্যে অনেকেই যুগযুগ ধরে অবৈধ চ্যানেলে বা হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠিয়ে আসছেন। আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে ‘হুন্ডি’ অবৈধ হওয়ার পরও বিভিন্ন কারনে অনেকে হুন্ডিতেই টাকা পাঠান। চলতি মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে হঠাৎ সরকার হঠাতে যারা মাঠে তৎপরতা চালিয়েছেন, তারা এখন একটি মিশনে নেমেছেন প্রবাসীরা যেন দেশে টাকা না পাঠায়। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ও কিছু না বুঝা মানুষকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসীদের উৎসাহিত করছেন দেশে টাকা না পাঠাতে। দেশে টাকা না পাঠিলে কিভাবে তাদের পরিবার চলবে সেজন্যও তারা দিচ্ছেন বিভিন্ন শলাপরামর্শ। আবার বলছেন, পরিবারের প্রয়োজনে যদি টাকা পাঠাতেই হয় তাহলে যেন হুন্ডিতে পাঠায়। আসল কথা বিদেশে অবৈধভাবে টাকা পাচারকারীরা মরিয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসাকে রমরমা করে তাদের অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা বিদেশে পাচার করতে।
যারা না বুঝে হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা কি কখন ভেবে দেখেছেন, অবৈধ পথে হুন্ডিতে টাকা পাঠালে আসলে কার লাভ? আপনি নিশ্চয় জানেন না, হুন্ডিতে টাকা পাঠালে সবচেয়ে বেশি লাভবান দেশের দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের।
হুন্ডি (ঐঁহফর) হলো একটি নীতি বহির্ভূত এবং দেশের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর ব্যবস্থা। এটি ইরষষ ড়ভ ঊীপযধহমব বা বিনিময় বিল নামেও পরিচিত। পূর্বে বাণিজ্যিক লেনদেন এবং ঋন আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। এখনও ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে এটি সাধারণভাবে অবৈধ উদ্দেশ্যে এবং আইন দ্বারা নিষিদ্ধ। গবৎৎরধস ডবনংঃবৎ এ বলা হয়েছে- অ হবমড়ঃরধনষব রহংঃৎঁসবহঃ, নরষষ ড়ভ বীপযধহমব, ড়ৎ ঢ়ৎড়সরংংড়ৎু হড়ঃব ড়ভ ওহফরধ রং ঁংবফ বংঢ়বপরধষষু রহ ঃযব রহঃবৎহধষ ভরহধহপব ড়ভ ঃৎধফব. অর্থাৎ একটি ইন্ডিয়ান হস্তান্তরযোগ্য দলিল, বিনিময় বিল বা প্রমিজরি নোট যা বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহৃত হয়। ডরশরঢ়বফরধ তে বলা হয়েছে- অ ঐঁহফর রং ধ ভরহধহপরধষ রহংঃৎঁসবহঃ ঃযধঃ ফবাবষড়ঢ়বফ রহ গবফরবাধষ ওহফরধ ভড়ৎ ঁংব রহ ঃৎধফব ধহফ পৎবফরঃ ঃৎধহংধপঃরড়হং. অর্থাৎ হুন্ডি একটি আর্থিক দলিল যা মধ্যযুগে ভারতে বাণিজ্য ও ক্রেডিট লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হতো।
হুন্ডি কী, দেশে হুন্ডির বিস্তার থামছে না কেন?
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের একটি আলোচিত ইস্যু রিজার্ভ সঙ্কট। রিজার্ভ সঙ্কটের জন্য রফতানির থেকে আমদানি বেশি হওয়ার পাশাপাশি আলোচিত হচ্ছে দেশ থেকে টাকা পাচার ও বিদেশ থেকে অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠানোর বিষয়টি। আর এই কর্মকা-ের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে হুন্ডির নাম। বলা হচ্ছে, দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার এবং বিদেশ থেকে অবৈধভাবে দেশে রেমিট্যান্স ঢুকছে মূলত হুন্ডির মাধ্যমে। এর ফলে সরকার একদিকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে। পাশাপাশি প্রবাসীরা তাদের আয় দেশে পাঠালেও হুন্ডির কারণে তা যোগ হচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ভা-ারে। সরকারের কোনো পদক্ষেপেই থামছে না হুন্ডির দৌরাত্ম্য। বরং প্রযক্তির সহায়তা এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ফাঁকফোকরে দিন দিন আরও ফুলে ফেঁপে উঠছে হুন্ডির কারবার।
হুন্ডিতে টাকা পাঠালে সবচেয়ে বেশি লাভবান দেশের দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের এ কথাটির অর্থ বুঝতে হলে হলে আপনাকে আগে বুঝতে হবে হুন্ডি কিভাবে হয়। ধরুন, কোন এক দুর্নীতিবাজ আকবর বাংলাদেশে দুর্নীতি করে একশত কোটি টাকা বানিয়েছে। এ টাকা সে বিদেশে পাচার করবে। সে কিন্তু এত টাকা সে ব্যাগে করে বিদেশে নিতে পারবে না। বৈধ পথে ব্যাংকের মাধ্যমেও সে বিদেশ এতো টাকা পাঠাতে পারবে না। তখন সে হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করবে। বিদেশে হুন্ডি দালালরা আমাদের দেশের শতশত প্রবাসীর সাথে যোগাযোগ করবে। নেটওয়ার্ক করবে। তারা দুর্নীতিবাজ আকবরের বাংলাদেশি একশত কোটি টাকা তাদের বাংলাদেশের এজেন্টের মাধ্যমে আপনাদের পরিবারের একাউন্টে জমা করবে। আপনার মতো হাজার হাজার ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া সমপরিমাণ টাকা আকবরের একাউন্টে জমা দিবেন। এর মাধ্যমে কি হবে? বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ আকবর তার একশত কোটি টাকা নিরাপদে বিদেশে পাচার করে ফেললো।
বিশিষ্ট আলেম ড. মো. মনজুর ইলাহী বলেন, অবৈধভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ চালান দেওয়াকে ‘হুন্ডি’ ব্যবসা বলা হয়। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি অপরাধ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, অনেক দেশেই এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশের নাগরিকদের উচিত সেটা মেনে চলা। কারণ, এটা এখন অশিষ্ট আচরনে পরিণত হয়েছে। এই হুন্ডির মাধ্যমে বড় বড় চোরাচালান করে তারা অবৈধভাবে এর সুযোগ নিচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য এবং নানা কল্যাণ সাধনের জন্য হুন্ডি ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একজন মুসলমানের উচিত এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা। যদিও হুন্ডি ব্যবসা সম্পর্কে হাদিসে কোনো বক্তব্য আসেনি বা এ ব্যবসা অবৈধ, সেটা উল্লেখ করা হয়নি, তথাপি এটি নিষিদ্ধ। কারণ অনেক জিনিস, যেটা সমাজের জন্য যখন অমঙ্গল হয়, তখন সমাজের সকলে মিলে বা মুসলিম প্রশাসন যদি সেটাকে নিষিদ্ধ করে, তাহলে সেটা আমাদের সবার মেনে চলা উচিত। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বলব, যেহেতু হুন্ডি ব্যবসা অথবা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর নিষেধ করা হয়েছে, তাই আমাদের বৈধ উৎসের দিকে যেতে হবে, বৈধভাবেই টাকা হস্তান্তর করতে হবে।
প্রবাসী সাইফুল ইসলাম, আবদুর রহমান, কেফায়েত, মো. ইউছুপসহ অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুন্ডিতে টাকা না পাঠাতে উৎসাহিত করে পোস্ট দিয়েছেন। তারা লিখেছে, তাদের উপার্জিত টাকা তারা দেশের জন্য পাঠান। এখন থেকে তারা দেশের জন্য টাকা পাঠাবেন না। আবার অনেকে লিখেছেন, তাদের উপার্জিত টাকা বৈধ পথে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পাঠাবে না অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাবেন এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সরকারকে অসহযোগিতা করার জন্য দেশে আর টাকা পাঠাবেন না। যদিও পাঠান হুন্ডিতে পাঠাবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেকেই আবার স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, তারা বৈধভাবে ব্যাংকিং চ্যানেলেই টাকা পাঠাবে।
অপপ্রচারকারীদের উদ্দেশ্যে ড. সুলতান মাহমুদ বলেন, যারা বলছেন দেশের জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন তা কি আসলে সত্য? জানি কথাটি শুনতে প্রথমে তাদের হয়তো কষ্ট লাগবে। তারপর আমি বলবো আপনাদের কথাটি সত্য নয়। আপনি দেশের জন্য টাকা পাঠান এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। সত্য হলো আপনারা টাকা পাঠান নিজ পরিবারের জন্য। আপনার পাঠানো টাকায় তাদের প্লেটে ভাত ওঠে, আপনার ঘরে আলো জ্বলে। আপনার পাঠনো টাকায় দেশের উপকার হচ্ছে না, সে কথা আমি বলবোও না। অবশ্যই দেশের উপকার হয়। তবে এটাই সত্য আপনি দেশের জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন না, পাঠাচ্ছেন আপনার পরিবারের জন্য।
এবার আসি ব্যাংকে টাকা পাঠালে কি হয়?
আপনি বিদেশী মুদ্রা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার সব বিনিময় পরিমাণ মুদ্রা আপনার পরিবারকে দিবে। আর আপনার পাঠানো, ডলার, রিয়াল দিয়ে কি হবে জানেন? হ্যাঁ বৈদেশিক বানিজ্য হবে। আরো সহজ করে বলি, এই মুদ্রা দিয়ে বিদেশ থেকে বাংলাদেশ পণ্য কিনবে। আপনি ব্যাংকে টাকা না পাঠলে দেশের যে কোন ক্ষতি হবে না তা কিন্তু নয়। সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমলে বাড়বে মুদ্রাস্ফীতি! আমদানি ব্যয় বাড়বে, রপ্তানি আয় কমবে। পণ্যের খরচ বাড়বে, জনগন হিমশিম খাবে, আপনার পরিবার হিমশিম খাবে। আপনার ভুল সিদ্ধান্তে দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করছে নাতো। তাদের টাকা পাচার করতে সাহায্য করছে নাতো। বিপ্লব করা প্রতিবাদ করা ভালো, কিন্তু আমরা কি করছি? কেন করছি? কাদের জন্য করছি? এগুলো আগে বুঝতে হবে। আগে বুঝতে হবে এতে কি সরকার পরিবর্তন হয়ে যাকে। এক কথায় কিছুতেই না। মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে সেন্ট্রাল ব্যাংক আবার টাকা ছাপাবে। বারবার মুদ্রা তার মান হারাবে, আবার টাকা ছাপাবে, আবার মান হারাবে, আবার ছাপাবে, এভাবে চলতে থাকবে। এতে কি হবে সাধারন জনগণ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ ভুক্তভোগী হবে। তাদের খেতে কষ্ট হবে, পরতে কষ্ট হবে। কিন্তু যারা চিন্তা করছেন এতে সরকারের গদি চলে যাবে। তা আসলে কি সত্য? বিশেষ প্রয়োজনে টাকা ছাপিয়ে ছাপিয়ে সরকার কয়েক বছর এমনিতেই কাটিয়ে দিতে পারবে। তাছাড়া রেমিট্যান্স আসা বন্ধের পরিবর্তে রেমিটেন্সের পালে লেগেছে উল্টো হাওয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানাগেছে ১৯ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই ৬দিনে রেমিটেন্স এসেছে প্রায় আট কোটি মার্কিন ডলার।
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বহুকাল ধরেই হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর প্রচলন আছে। এ ব্যবস্থায় বিদেশে অবস্থানকারী কোনো ব্যক্তি হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে ওই দেশীয় মুদ্রায় কিছু অর্থ দিয়ে দেশে কোথায় কার কাছে পাঠাতে হবে তা বুঝিয়ে দেন। ওই ব্যবসায়ী তার দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে সমপরিমাণ টাকা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেন। ইসলামে হুন্ডি ব্যবসা এবং হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন করা জায়েজ। তবে আমাদের দেশের আইনে হুন্ডি ব্যবসা ও হুন্ডিতে টাকা লেনদেন নিষিদ্ধ। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রীয় কোনো আইন শরিয়তের বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে তা মেনে চলা আবশ্যক। তাই শরিয়তে জায়েজ হলেও দেশের আইনে নিষিদ্ধ হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা লেনদেন থেকে বিরত থাকা উচিত।
মুফতি ইশমাম আহমেদ, অনেকেই হুন্ডি ব্যবসা জায়েজ দেখাতে হাদিসের (ফাতাওয়া শামি: ৫/১৩১; ফাতহুল মুলহিম: ১/৫৯০; ফাতাওয়া কাসিমিয়া: ২০/২৬৬) উদাহরণ দিচ্ছেন। এখানে লেখা আছে, হুন্ডি ব্যবসা একধরনের মুদ্রা বিনিময়। অর্থাৎ, এক দেশের মুদ্রার বিনিময়ে অন্য দেশের মুদ্রার বেচাকেনা। এটি শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। এখানে বাড়তি টাকা নিলে তা পরিশ্রমের মজুরি হিসেবে গণ্য হবে। হাদিসের এই অংশটি তারা প্রচার করলেও পুরো বলছেন না।
তারা বলছেন না, এখানে শর্ত হলো এরকম বেচাকেনার ক্ষেত্রে অন্তত একটি পক্ষের পণ্য নগদ হতে হবে। অন্য পক্ষেরটি বাকি হলেও লেনদেন জায়েজ হবে। দুই পক্ষের কেউই যদি মুদ্রা হস্তান্তর না করে, তবে তা ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ হবে না। মহানবী (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘এই পণ্যগুলো যদি একটি অন্যটি থেকে আলাদা হয় বা একই পণ্য না হয়, তবে তোমরা যেভাবে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারো। তবে তা হতে হবে নগদ। (মুসলিম: ১৫৮৭) উভয়পক্ষ থেকেই বাকিতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা কেনাবেচা জায়েজ নয়। অন্তত একপক্ষ থেকে নগদ হওয়া আবশ্যক। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বাকি পণ্যের বিনিময়ে বাকি পণ্য বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন (মুসতাদরাকে হাকেম)। তবে যেহেতু রাষ্ট্রীয় আইন হুন্ডি ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করেছে; সেহেতু হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন না করাই উত্তম।
আমাদের দেশে হুন্ডি ব্যবসা আইনিভাবে নিষিদ্ধ। আর ইসলামের নীতি হলো, রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ কোনো বিষয় যদি কোরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রণীত হয়, তা মান্য করা সব নাগরিকের কর্তব্য। দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলা জরুরি। কারণ, শরিয়ত যে বিষয় থেকে বিরত থাকার সুযোগ রেখেছে, সে বিষয়ে জড়িত হয়ে আইন লঙ্ঘন করে নিজেকে বিপদে ফেলা ইসলাম অনুমোদন করে না।
খাদ্য ঘাটতি চলছে দেশে দেশে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছে। এই সময়ে সুযোগসন্ধানী এক শ্রেণির মানুষ ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছেন। সাধারণত হুন্ডি ব্যবসা বলতে অবৈধভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে অর্থ চালান করাকে বুঝায়। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি অপরাধ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, অনেক দেশেই এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। চোরাচালানকারিরা অবৈধ হুন্ডির সুযোগ নিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে।
মূলত, মুগল আমলে হুন্ডি পরিচিত লাভ করলেও জনপ্রিয়তা পায় ব্রিটিশ আমলে। প্রবাসী চাকরিজীবীরা একে আড়ালে ব্যবহার করছেন। যদিও ইসলামে সরাসরি হুন্ডি নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে মুসলমানদের উচিত হুন্ডি এড়িয়ে চলা বলে অনেক মুফতি জানান। তারা বলেন, এই সম্পর্কে হাদিসে কোনো বক্তব্য আসেনি বা এ ব্যবসা অবৈধ, সেটা উল্লেখ করা হয়নি। তারপরও সমাজের জন্য অমঙ্গলকর কিছু রাষ্ট্র নিষিদ্ধ করলে সেটা সবার মেনে চলা উচিত ইসলামের রীতি।
এ বিষয়ে মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী বলেন, ‘শরীয়া দৃষ্টিকোণ থেকে হুন্ডি ব্যবসা নাজায়েজ নয়। সুতরাং এই পদ্ধতিতে পাঠানো টাকা গ্রহণ করাও নাজায়েজ হবে না। কেননা, মূলত এটি হচ্ছে, মুদ্রা বিনিময় তথা এক দেশের মুদ্রাকে অন্য দেশের মুদ্রার বিনিময় ক্রয়-বিক্রয়। যা শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে শামী: ৫/১৩১, ফাতহুল মুলহিম ১/৫৯০ ফাতাওয়ায়ে কাসিমিয়া ২০/২৬৬)। তবে এক্ষেত্রে মজলিসেই কমপক্ষে একপক্ষ কারেন্সি হস্তগত করে নিতে হবে। যদি একজনও তাদের বিনিময়কৃত কারেন্সি হস্তগত না করে তাহলে ক্রয় বিক্রয়টি জায়েয হবে না।
যেহেতু সরকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয় বিধায় এটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বেআইনি ঘোষণা করেছে, আর শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক নয় এমন কোনো বিষয়কে সরকার নিষেধ করলে তা নাগরিকদের মেনে চলা উচিত। তাই মান-সম্মান রক্ষার্থে এ ধরণের ব্যবসা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কোনো মুমিন ব্যক্তির জন্য নিজেকে অপমানিত করাটা শোভনীয় নয়। সাহাবীগণ প্রশ্ন করেন, সে নিজেকে কিভাবে অপমানিত করে? তিনি বললেন, এমন কঠিন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া যার সামর্থ্য তার নেই (তিরমিযী ২২৫৪)। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, যেহেতু হুন্ডি ব্যবসা অথবা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর নিষেধ করা হয়েছে, তাই আমাদের বৈধ উৎসের দিকে যেতে হবে, বৈধভাবেই টাকা হস্তান্তর করতে হবে।