কামরুল আরেফিন
ফেনী শহরের মানুষদের স্বস্তিতে বসার ও হাঁটার অন্যতম স্থান ঐতিহাসিক রাজাঝির দীঘির পাড়। যুগের পর যুগ ধরে এইখানে হাঁটাচলার কোন পরিবেশ ছিলো না। গত ৩৫ বছর ধরে পাড়গুলো ছিলো অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। জেলা প্রশাসন ২০২৩ সালে ৮ম বারের মতো অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করলেও তাদের মূলত হটাতে পারেনি। পুনরায় অবৈধভাবে দখলদাররা জায়গা জুড়ে গেঁড়ে বসে পড়ে।
অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় চাঁদাবাজরা নি¤œ আয়ের এসমস্ত দোকানিকে নির্দিষ্ট জায়গা ভাড়া দিয়ে চাঁদা আদায় করছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের অধীনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ও ফেনী পৌরসভার তত্বাবধানে ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজাঝির দীঘির সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন করে। সৌন্দর্যবর্ধনের ফলে সাধারণ মানুষ ও ভ্রমণপিপাসুদের হাঁটার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছিলো এই রাজাঝির দীঘির পাড়। অবৈধ হকার ও চাঁদাবাজদের কারণে আজ সরকারের উন্নয়ন ম্লান হয়ে গেছে। ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে সরকারের প্রকল্পটি অপাত্রে গেল বলে স্থানীয়রা জানান।
স্থানীরা জানান, দীঘির পাড়ের দোকানিদের গরিব শ্রেণির বলে অনেকে আবেগ কাজে লাগাতে চাইলেও তারা মূলত চাঁদাবাজদের টাকা ও ভাড়া দিয়েই ব্যবসা করছেন। দোকনিদের মধ্যেই বেশির ভাগই ফেনী শহরের বাসিন্দা নয়।
এদিকে রাজাঝির দীঘির পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজাঝির দীঘির চারপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা আনুমানিক ৪’শতাধিক দোকানে বিদ্যুৎ সরবারাহের মাধ্যমে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে বেলাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি। জানাগেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ণ বোর্ডের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজাঝির দীঘির দক্ষিণ পাড় সংলগ্ন রুপালী ব্যাংকের বিপরীত পাশে বেলাল টি স্টলের মালিক বেলাল হোসেন অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সরবারাহ করে থাকে। সরেজমিনে গিয়ে রাজাঝির দীঘির পাড়ে দেখা গেল, আনুমানিক ৪’শত দোকানে বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখার বিলের টাকা সংগ্রহ করছে বেলাল হোসেনের প্রতিনিধিরা। এসব দোকানে পরিধিভেদে ১ থেকে ৫টি পর্যন্ত বাতি ব্যবহার করা হয়। প্রতি বাতি বাবদ বিল নেওয়া হয় দৈনিক ৩০-৫০ টাকা। এছাড়াও প্রতি পাখা বাবদ বিল নেওয়া হয় দৈনিক ৩০ টাকা। প্রতি দোকান থেকে গড়ে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে সংগ্রহ করলে বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ হাজার টাকা, যা একমাসে পরিমাণ হয় ৬’লাখ টাকা। যদিও বাস্তবিক অর্থে এর পরিমাণ আরো বেশি। রাজাঝির দীঘির পাড়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দৈনিক আমার ফেনীকে বলেন, রাজাঝির দীঘির পাড়ের সকল দোকানে বিদ্যুৎ সরবারাহ তথা বিদ্যুৎ সংযোগের সাথে সরাসরিভাবে জড়িত বেলাল হোসেন। নতুনভাবে কেউ দীঘির পাড়ে দোকান বসালেই তার সঙ্গে বেলাল হোসেন নিজেই বিদ্যুৎ সরবারাহের জন্য যোগাযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে স্বীকার করে অভিযুক্ত বেলাল হোসেন দৈনিক আমার ফেনীকে বলেন, আমার নিজ মিটার থেকে দীঘির পাড়ের ৪০-৫০ টি দোকানে সংযোগ দিয়েছি। অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সরবারাহের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের ৬-৮ জন অফিসার পরিদর্শনে এসেছেন। আমি নিয়মিতভাবে বিদ্যুৎ এর কার্ড রিচার্জ করে বিদ্যুৎ সরবারাহ করছি।
স্থানীয়রা জানান, বেলাল হোসেন বৈধ ও অবৈধ উপায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে টাকা লুটে নিচ্ছেন। যার ফলে সরকার প্রতিমাসে বঞ্চিত হচ্ছেন লাখ লাখ টাকা থেকে।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবারাহের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী হোসেন মাহমুদ শামীম ফরহাদ দৈনিক আমার ফেনীকে বলেন, এই বিষয়টি সমন্ধে আমি অবগত আছি। বেলাল হোসেন তার নিজ নামীয় প্রি-পেইড মিটার থেকে রাজাঝির দীঘির পাড়ের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবারাহ করে।
ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, দীঘির পাড়ে ফোয়ারার সরঞ্জাম, গ্রীলসহ অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে। এই দীঘির পাড়টি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত।