১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> টপ নিউজ
  • কোটা আন্দোলনের নাশকতায় সারাদেশে যতো ক্ষয়ক্ষতি
  • কোটা আন্দোলনের নাশকতায় সারাদেশে যতো ক্ষয়ক্ষতি

    দৈনিক আমার ফেনী

    নিজস্ব প্রতিবেদক

    কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সারা দেশে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। হামলা হয়েছে স্বপ্নের মেট্রো স্টেশনে। বিটিভিসহ সরকারি অফিসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যন্ত্রপাতি লুটপাট করা হয়।

    নাশকতায় আনসার বাহিনীর ২৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি:
    কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজধানীর যেসব স্থানে বেশি হামলা হয়েছে তার প্রায় প্রতিটি জায়গায়ই আনসার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এসব ক্যাম্প ও রাজধানীতে ৩০টি আনসার ক্যাম্প এবং রাজধানীর বাইরে ৪৪টি ক্যাম্পে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

    এ ছাড়া আনসার বাহিনীর তিনটি বড় গাড়ি ও ২০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। নাশকতা ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৯৮ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার মতিঝিলে দায়িত্ব পালনকালে জুয়েল শেখ (২২) নামের এক সদস্য নিহত হন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সহকারী পরিচালক (ভিডিপি প্রশিক্ষণ) ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. রুবেল হোসাইন।

    সংঘাতে ডিএনসিসির ২০৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি:
    কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র নিহতের ঘটনায় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সহিংসতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে পাঁচটি আঞ্চলিক অফিসে। এতে ৫০টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলাসহ মোট ৬৭টি গাড়ি অকেজো করা হয়েছে। এতে রাজধানীর বর্জ্য নিষ্কাষণ ব্যবস্থাপনা ব্যাহত হচ্ছে।

    বর্জ্যবাহী ২৯টি গাড়ি সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত করে দিয়েছে, অফিসারদের ব্যবহারের ২১টি পাজেরো জিপ পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া আরও ১৭টি গাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বর্জ্য পরিবহনের মোট যানবাহনের চারভাগের একভাগ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বর ফুটওভার ব্রিজ অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উত্তরা কমিউনিটি সেন্টার ও মোহাম্মদপুর সূচনা কমিউনিটি সেন্টার সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এগুলো জনগণের সম্পদ। সন্ত্রাসীরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনকে ব্যবহার করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে জনগণের সম্পদ নষ্ট করেছে।

    মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, সন্ত্রাসীরা রামপুরায় পাম্প হাউজে হামলা চালিয়ে সেটি ধ্বংস করেছে, এমনকি পাম্প হাউজ মেরামতের জন্যে কর্মীরা সেখানে গেলে তাদের ওপরেও আক্রমণ করে সন্ত্রাসীরা। স্ট্রিট লাইট মেরামতের জন্য অত্যাধুনিক ল্যাডার আনা হয়েছিল। সেই ল্যাডারগুলোও তারা ধ্বংস করেছে। তীব্র দাবদাহ থেকে বাঁচতে নগরীর ফুটপাত ও সড়ক ভিভাজকে অনেক বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল। সেই গাছগুলোও ধ্বংস করা হয়েছে। সহিংসতায় ডিএনসিসির মোট ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে, মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, ডিএনসিসির অন্তত ২০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

    দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষতি প্রায় ৬ কোটি টাকা:
    আন্দোলনের সহিংসতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রায় ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিবরণে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সিটির তিনটি ডাম্প ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা কলেজের সামনে রোড ডিভাইডারগুলো (সড়ক বিভাজন) ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ম্যানহোলগুলোর ঢাকনা তুলে ফেলছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। আজিমপুরে একটা যাত্রী ছাউনি ভাঙা হয়েছে। যাত্রাবাড়ীর কাজলায় বিভিন্ন প্রকল্পের মালামাল নিয়ে গেছে।

    স্বাস্থ্য খাতের ক্ষয়ক্ষতি ১০০ কোটি টাকা:
    দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২৩টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া আরও ২৮টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের ব্যবহৃত গাড়িও আছে। মহাখালী কাঁচা বাজারের পাশে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরনো ভবন, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) ভবন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ভবন, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য অধিদফতর (আইপিএইচ), জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে।

    সেতু ভবনে হামলায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি:
    বৃহস্পতি ও শুক্রবার (১৮ ও ১৯ জুলাই) দুই দফায় বনানীর সেতু ভবনে হামলা করে দৃর্বৃত্তরা। ভাঙচুর করা হয় ভবনের কাঁচ ও জানালা। এ সময় লুটপাট করা হয় অফিসের বিভিন্ন সরঞ্জাম। অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কারণে ভবনটি বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া সেখানে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ৫৫টি যানবাহন। সেতু ভবনের পাশেই সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়। সেখানে ভবনের নিচে রাখা গাড়িগুলো পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা।

    অগ্নিসংযোগ করা হয় বিআরটিএর মিরপুরের মেট্রো-১ সার্কেল অফিসে। সেখানেও অনেক ক্ষতি হয়েছে। ২০১৬ সালে স্থাপিত ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন কেন্দ্র (ভিআইসি) পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দুটি ভিআইসিতে যত গাড়ি রাখা ছিল, সব ছাই করে দিয়েছে। ভিআইসির সফটওয়্যার, সেন্সর সব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

    মিরপুরের মেট্রো-১ সার্কেল অফিসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানবাহন ফিটনেস পরীক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়ার ঋণে ১২১ কোটি ২৪ লাখ টাকায় কেনা হয় ভিআইসি। সেটিও ১৯ জুলাই দুর্বৃত্তদের হামলায় শেষ হয়ে গেছে। এ সময় এর যন্ত্রাংশ লুট ছাড়াও যানবাহন পরীক্ষার লেনগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

    সেতু ভবনের নিচ তলার আনসার শেড, ড্রাইভার শেড থেকে চেয়ার-টেবিলসহ অন্য আসবাবপত্র এবং সেতু ভবনের ভিতরে প্রবেশ করে নিচ তলা থেকে ১১তলা পর্যন্ত অফিসে ভাঙচুর করে ব্যাপক ক্ষতি করে অফিসে রক্ষিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ফাইল কেবিনেট, এসি, ফ্যান, পানির ফিল্টার, চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্রসহ সরকারি ও ব্যক্তিগত মালামাল চুরি করে এবং প্রত্যেক ফ্লোরে আগুন ধরিয়ে দেয়।

    ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ও অগ্নিসংযোগে সেতু ভবনের নিচ তলা থেকে ১২তলা পর্যন্ত ফ্লোরে রক্ষিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, পদ্মা সেতু প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বহুলেন সড়ক টানেল- প্রকল্প, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প সেতু বিভাগের আওতাধীন সব প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দলিল, এফডিআর ইন্সট্রুমেন্ট, টেন্ডার সিকিউরিটি ডকুমেন্টস, ইন্টারনেট সার্ভার, শতাধিক কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, জেনারেটর, ফায়ার এক্সটিংগুইসারসহ যাবতীয় নথিপত্র এবং সেতু ভবনের পার্কিংয়ে থাকা ৩২টি জিপ গাড়ি, ৯টি পিকআপ, ৭টি মাইক্রোবাস, একটি মিনিবাস, ৫টি মোটরসাইকেল, একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়।

    সেতু ভবনের সামনে সোনালী ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ ছিল। বুথের শাটার ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভেতরে থাকা এটিএম মেশিন ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুট হয়ে যায়।

    দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও বিটিভির কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি:
    আগুনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের ৫৬টি গাড়ি, ২০টি মোটরসাইকেল, ১০০ কেভির ২টি জেনারেটর ও ১ হাজার কেভির সাবস্টেশন পুড়ে গেছে। এ ছাড়া ইআরসিসি ডাটা সেন্টার, সার্ভার রুম ও ওয়ার্ক স্টেশনের ৬০টি কম্পিউটার পুড়ে যায়। ভবনের ভেতর ও বাইরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার পরিমাণ কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা। আগুনে পোড়া ১১তলা ভবনটি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদফতর।

    দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে জাতীয় টেলিভিশন বিটিভির কার্যালয়ে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় বিটিভির আর্কাইভসহ নানা বিভাগের। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় সম্প্রচার। সেখানেও অগ্নিকা-ে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা আরও জানায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সম্প্রচারকাজে নিয়োজিত পোর্টেবল ডিএসএনজি সিস্টেমের সব সম্প্রচার যন্ত্রপাতি এবং এসব যন্ত্রপাতি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া তারা ১৭টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, বিটিভির মূল ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ঢাকা কেন্দ্রের রিসেভশনে অগ্নিসংযোগ, ট্রান্সপোর্ট ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, ক্যান্টিনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং ভাঙচুর, অডিটোরিয়ামে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, মেকআপ শাখা ভাঙচুর, ডিজাইন শাখার মেকআপ (ওয়ার্কশপ, স্টোর, ওয়ারড্রব ও গ্রাফিক্স রুম) রুমে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে।

    এছাড়াও বিটিভির প্রধান কার্যালয়ের প্রথম তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে বৈদ্যুতিক সংযোগ, ক্যামেরা, ট্রাইপটসহ, প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, অর্থ, ডিজাইন, প্রশাসন, অনুষ্ঠান শাখার বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ কম্পিউটার সামগ্রী ও দাপ্তরিক নথি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সঙ্গে মনিটর ১০টি, স্মার্ট টিভি ৮টি, কম্পিউটার সিপিইউ ১৬টি, ইউপিএস ৩০০০ ভিএ তিনটি, ইউপিএস ১৭টি, আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানার মেশিন একটি, ব্যাগেজ স্ক্যানার মেশিন একটি, আর্চওয়ে মেশিন তিনটি, ফিঙ্গার প্রিন্ট মেশিন চারটি, সিসি ক্যামেরা ৪০টি, পিওই সুইচ ১৫টি, মিডিয়া কনভার্টার ১৬ সেট, অপটিক্যাল ফাইবার ৩০০০ মিটার, ক্যাট-৬-ইন্টারনেট ক্যাবল ১৫ বক্স, নরমাল সুইচ ১০টি, সিলিং ফ্যান ৩০টি, স্ট্যান্ড ফ্যান ১০টি, এয়ার কন্ডিশনার পাঁচটি, এয়ার কার্টার আটটি, মূল গেট চারটি, পকেট গেট একটি, তালা ২০টি, প্রিন্টার তিনটি, স্ক্যানার একটি, কি-বোর্ড তিনটি ও ৫০টি ফায়ার এক্সটিংগুইসার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    হামলাকারীরা উপস্থাপন শাখার পাঁচটি কম্পিউটার, দুটি প্রিন্টার মেশিন এবং একটি ফটোকপি মেশিন ভেঙে ফেলে। হামলায় অর্থ ও হিসাব শাখার সব রুমের চেয়ার, টেবিল, দরজা-জানালা, টেবিল, আলসা হ্রম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষত শিল্পী সম্মানী রুম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হামলার সময় ক্যামেরা, ক্যামেরার লেন্স, ভিডিও সুইচার, অডিও মিক্সার ইত্যাদিতে আগুন দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি লাইভে ব্যবহৃত সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি আগুনে পুড়ে গেছে। ঢাকা কেন্দ্রের সেন্ট্রাল এসি শিল্ড ওয়াটার লাইন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচটি এএইচইউ, ২০টি এফসিইউ ইউনিট অচল হয়ে গেছে। এছাড়া প্রায় ৩০টি স্লিপ্লট এসি আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। চিলারের পাঁচটি পাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রের মূল হাউজ লাইটসহ স্টুডিও লাইটিংয়ের সোর্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডিজাইন সংশ্লিষ্ট হাই ভল্টেজ ইলেকট্রিক্যাল লাইন, ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম আর্থ ঐরময ঠড়ষঃধমব ঊষবপঃৎরপধষ ষরহব, উরংঃৎরনঁঃরড়হ ঝুংঃবস ঊধৎঃয ঝঃধঃরড়হ টচঝ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    তৃতীয় তলার প্রকৌশল স্টোরে সংরক্ষিত ক্যামেরা, ট্রাইপড, খুচরা যন্ত্রপাতি আগুনে পুড়ে গেছে। কম্পিউটার ওয়ার্ক স্টেশন ১০টি ও ১০০টি টিভি সেট নষ্ট হয়েছে। অগ্নিকা-ে ঢাকা কেন্দ্রের ডিজাইনশেডসহ ভবনের দক্ষিণ ব্লগের দেয়াল, পাশের দেয়াল, ছাদ স্টুডিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অবস্থিত প্রশাসন ও হিসাব শাখার রুম, মূল ভবনে প্রবেশমুখের গেট, ডিজাইন, ক্যামেরা ও প্রকৌশল শাখার অফিসকক্ষ ও করিডোর, মেকআপরুম, টেলিফোন বোর্ড রুম, লিফট, ইএনজি শাখা, অডিটোরিয়াম ও অডিটোরিয়াম সংলগ্ন অফিস কক্ষসহ ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুজিব কর্নার ও মিউজিয়ামে রাখা অমূল্য অ্যান্টিক সামগ্রী, ক্যামেরা অন্যান্য জিনিস ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় কম্পিউটার ল্যাব ও প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি ভাঙচুর এবং অনেকগুলো কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী লুটপাট করা হয়।

    বিটিভি ভবনের নিচ তলায় একটি স্টোর রুমে ভাংচুর ও লুটপাট, দ্বিতীয় তলায় চারটি স্টোর রুম, দুটি অফিস রুম এবং নিচতলার একটি অফিস রুমে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

    পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুটি টোলপ্লাজা;
    কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহিংসতায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুটি টোলঘর আগুনে পুড়ে গেছে। এতে ৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। গত ১৮ জুলাই রাত পৌনে ৮টায় শত শত লোক বনানী টোলঘরে হামলা চালায়। তাদের মধ্যে একদল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) খুলে নিয়ে যায়। কেউ কম্পিউটার, ক্যামেরা নিয়ে যায়। আরেক দল আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে টোল বুথ, ছাউনি ও সিস্টেম সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আর ১৯ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মহাখালী টোলঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

    মেট্রোরেলের দুইটি স্টেশনে ব্যাপক ভাংচুর, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৫০০ কোটি:
    কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের শিকার হয়। এতে মেট্রোরেলের সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোস্টেশন পুননির্মাণে প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর লেগে যাবে। সব যন্ত্রপাতি বসানোর পাশাপাশি কারিগরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। মিরপুর-১০ স্টেশনের পুরো ই-সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। এ সিস্টেম পুনরায় চালু করতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে।

    কাজীপাড়া স্টেশনের ৫০ শতাংশের বেশি ই-সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। এ সিস্টেম পুনরায় স্থাপন করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লাগবে। আর কম্পিউটার, ডিভাইস, পাঞ্চ মেশিন, ভেন্ডিং মেশিনমহ আরও যে সব যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিক করতে প্রায় দুইশো কোটি টাকা লেগে যেতে পারে। সবমিলিয়ে মেট্রোরেলের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৫০০ কোটি টাকার বেশি।

    সহিংসতায় ডিএমপির ক্ষতি ৬১ কোটি টাকা:
    ডিএমপি জানায়, নাশকতাকারীদের হামলায় ডিএমপির বিভিন্ন থানা, ভবন, গাড়ি ও যন্ত্রপাতি ধংস করা হয়েছে। ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ঢাকায় মোট ৬৯টি স্থাপনায় হামলা হয়েছে। ৫৪টি ট্রাফিক বক্স পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

    বিদ্যুৎ খাতের ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা:
    চলমান ছাত্র আন্দোলনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অন্তত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলী অফিস, সেখানকার উপকেন্দ্র, জাপান গার্ডেন সিটি উপকেন্দ্র, আজিমপুর উপকেন্দ্র, নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, সেখানকার বিদ্যুৎ বিতরণের আঞ্চলিক অফিস, মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ ও বিদ্যুতের বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

    বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি:
    গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) থেকে কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। আমদানি-রফতানি প্রায় বন্ধ। বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ছাড় করা যায়নি। বিদেশি অর্ডার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রফতানিকারকরা। অচল হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের কাস্টমস শুল্কায়ন কার্যক্রম। গত পাঁচ দিনে প্রায় ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমস।

    তৈরি পোশাক খাতে আর্থিক ক্ষতির চেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে বেশি বলে মনে করে বিজিএমইএ। এই কয়েক দিনের স্থবিরতায় তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ’র সরাসরি রফতানিতে ক্ষতি হয়েছে ৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া এক্সেসরিজ, বোতাম, সুতা খাতে লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

    নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। একদিন কারখানা বন্ধ থাকলে ১৬ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়, যা দেশীয় মুদ্রায় ১ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদদের মতে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অর্থনীতির ক্ষতি বেশি হচ্ছে। তাদের হিসাবে, গত এক সপ্তাহে ক্ষতি হয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার দায় বহন করতে হবে সরকার, বেসরকারি খাত ও সাধারণ মানুষকে।

    দেশব্যাপী ইন্টারনেট না থাকায় গত বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) রাত থেকে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে পরদিন শুক্রবার থেকে। চট্টগ্রাম কাস্টমস এই বন্দর থেকে গত জুনে ৬ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, মে মাসে ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে। গড় হিসাবে প্রতি মাসে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। প্রতিদিন গড়ে ২১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এই হিসাবে পাঁচ দিনে (শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার) ১ হাজার ৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস।

    বন্দর সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৯ হাজার একক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়ে থাকে। প্রতি কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে বন্দরের চার্জ ৪৫ মার্কিন ডলার। সেই হিসাবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে বন্দরের রাজস্ব আদায় হয় ৪ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলার (প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হিসাবে ৪ কোটি ৭৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা)। বর্তমানে রফতানিপণ্য জাহাজিকরণ হতে না পারায় কনটেইনার হ্যান্ডেলিং কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যে কারণে এক দিনে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বাবদ বন্দরের আয় কমেছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ও বাল্ক পণ্যেও প্রায় সমপরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে। এতে প্রতিদিন বন্দরের আয় কমেছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। গত পাঁচ দিনে এই সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি টাকা হতে পারে। পাঁচ দিনে বন্দর ও কাস্টমসের ক্ষতি প্রায় ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।

    বিমান-পর্যটন খাতে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি:
    সহিংসতা ও কারফিউর প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে বিমান ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক খাত। মাত্র ছয় দিনে বিমানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে পর্যটন ও ট্রাভেল এজেন্টদের ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ হিসাবে এই দুই খাতের ক্ষতি আরও বাড়তে পাড়ে। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন এই দুই খাতসহ সংশ্লিষ্টরা।

    রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে রাজস্ব ক্ষতি ১৮ কোটি টাকা:
    রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীনে চট্টগ্রাম থেকে আন্তঃনগর ট্রেন, মেইল ট্রেন, কমিউটার ট্রেন, পণ্যবাহী ট্রেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন, চট্টগ্রাম গুডস পোর্ট ইয়ার্ড (সিজিপিওয়াই) থেকে পাঁচটি পণ্যবাহী ট্রেনসহ ৫৭টি ট্রেন চলাচল করে। একদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলে পূর্বাঞ্চলে গড়ে ৩ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়।

    আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ জুলাই বিভিন্ন এলাকায় রেলপথ অবরোধ করা হয়। এতে কয়েক ঘণ্টার জন্য ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটে। ১৭ জুলাই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ১৮ জুলাই থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় গত এক সপ্তাহে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১৮ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে।

    গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পে আগুন-ভাঙচুরে বহু টাকার ক্ষয়ক্ষতি:
    কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে টানা কয়েকদিনের সহিংসতায় আগুনে পুড়েছে বিআরটি প্রকল্পের বেশ কিছু স্থাপনা। এতে বহু টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকা। এতে বিআরটি প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে চালু করা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে নাশকতা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা গাজীপুর সড়ক ভবন, বিআরটি স্টেশনে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয় প্রকল্পের বেশ কিছু স্টেশনে।

    বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “দুর্বৃত্তদের আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় বিআরটি প্রকল্পের ২৫টি স্টেশনের ৩১টি এস্কেলেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্যে যেগুলো রাখা ছিল সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা চাইছিলাম, সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্টেশনগুলো চালু হয়ে যাবে। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির কারণে অনেকগুলো রিপেয়ার বা রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ। এ কারণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা হয়ত সম্ভব হবে না।”এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৫-৬ মাস বা তার বেশি সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।

    গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরের ছয়টি স্থাপনায় ৫১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

    গাজিপুরের ক্ষয়ক্ষতি:
    জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, হামলাকারীরা চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা পাঁচ টনের চারটি ট্রাক, হাইড্রোলিক হ্যামার, বিআরটি প্রজেক্টের অফিস গেট, বিল্ডিং ও অন্যান্য সামগ্রী ভাঙচুর করা হয়েছে। যাতে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিআরটি প্রজেক্টের ২৫টি এসক্যালেটর, একটি লিফট, দুই হাজার বর্গমিটার এসএস রেলিং, একটি এক্সকাভেটর, ৩ হাজার কেজি এমএসই ওয়াল প্যানেল ফর্ম ওয়ার্ক, ছয়টি ইলেকট্রিক হ্যামার, চারটি ওয়েল্ডিং মেশিন, দুটি রোড কাটিং মেশিন, ৩৬০ মিটার ফেন্সিং ও প্লাস্টিক ট্রাফিক ব্যারিয়ার, সাতটি স্টেশনে জেনারেটর, পানির লাইন ও ইউলিটি সংযোগ এবং একটি প্রকল্প সাইট অফিসের ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা। তবে বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ দাবি করেন, তাদের প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
    এ ছাড়া নাশকতাকারীরা টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপ-কেন্দ্রের অফিস ভবন, ১০টি কম্পিউটার, সাতটি প্রিন্টার, এসি কমপ্রেসারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি টাকা। হামলাকারীরা বেক্সিমকো ফার্মার ভেতরে চারটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ছয়টি সিসি ক্যামেরা, ছয়টি কাভার্ড ভ্যান, দুটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর ও বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মোট ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।

    গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। হামলাকারীরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা নগরীর জোন-১-এর ভবনের দরজা, জানালা ভাঙচুর এবং নিচতলার তিনটি কক্ষ পুড়িয়ে দিয়েছে। আঞ্চলিক কার্যালয় জোন-৩ এর ভবনের দরজা জানালাও ভাঙচুর করে।

    সারাদেশে পুলিশের যত ক্ষয়ক্ষতি:
    সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকে বুধবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য রয়েছেন তিন জন, এছাড়াও আহত হয়েছেন ১ হাজার ১১৭ জন। পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, এই আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ২৩৫টি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশের ২৮১টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

    আন্দোলন চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নিহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, ইন্সপেক্টর মাসুদ পারভেজ। তিনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজধানীর কদমতলীতে আহত হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় সহিংসতায় নিহত হন ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসআই মুক্তাদির এবং ডিএমপির নায়েক গিয়াস উদ্দিন।

    পুলিশ সদর দফতর জানায়, সারা দেশে নৈরাজ্যবাদীরা পুলিশের বিভিন্ন ধরনের ২৮১টি যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ২৩৫টি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। পুলিশের সম্পদ ও স্থাপনার কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিরূপণের কাজ চলছে। বিস্তারিত জানতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

    মাদারীপুরে ক্ষয়ক্ষতি ৪০ কোটি টাকা:
    মাদারীপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে ছাত্রলীগ, পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই তা-বে তিনজন নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) দুই দিন কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনে ঢুকে পড়ে একদল দুর্বৃত্ত। এ সময় নাশকতাকারীরা শহরে ও মস্তফাপুরে তা-ব চালায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মস্তফাপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স, মস্তফাপুর বাস কাউন্টার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ব্যাপক ভাঙচুর করে।

    এছাড়া সার্বিক ইন্টারন্যাশনালের সব ফিলিং স্টেশন, সব বাস ডিপো, লঞ্চঘাট, পুলিশ ফাঁড়ি ও পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম, জাতীয় মহিলা সংস্থার মালামাল আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় সার্বিক পরিবহনের ৩২টি বিলাসবহুল বাস, একটি লরি, একটি ট্যাঙ্কার, পাঁচটি পেট্রোল পাম্পের মেশিন, পাঁচটি মোটরসাইকেল। দুর্বৃত্তদের ধ্বংসযজ্ঞে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সার্বিক পরিবহন, পেট্রোল পাম্প ও অন্যান্য সম্পদ। এসবের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বলে নিশ্চিত করেন সার্বিক ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার গোপাল চন্দ্র হালদার।

    নারায়ণগঞ্জে ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা:
    নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কারের দাবিতে ডাকা আন্দোলনের সুযোগে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সম্পত্তিতে আগুন দিয়ে নাশকতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান বলেছেন, ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি। ১৮ জুলাই সকাল থেকে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় জড়ো হতে থাকে। দুপুর থেকে শুরু হয় তা-ব। কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই লিংক রোডের সামনে থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান চাষাড়া খাঁজা মার্কেটের সামনে এনে আগুন ধরিরে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ বাঁধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। চাষাড়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙচুর করে নাশকতাকারীরা। এ সময় রাস্তার অপরপাশে চায়না জংশন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে ভিডিও করার সময় আন্দোলনকারীরা সেই চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভেঙে ফেলে।

    ওইদিন সন্ধ্যার পর আরও লোকজন জড়ো হয় শহরে। অন্ধকার হতেই শুরু হয় তা-ব। ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। বাদ যায়নি নগর ভবন, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, মার্কেট বিপণিবিতান, সিনেমা হল, দোকানপাট কোনো কিছুই। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ভেতরে ঢুকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ ভেঙে কয়েক লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ক্লাবের অফিস রুমে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুরের পাশাপাশি কম্পিউটার ও নগর প্রায় ৭ লাখ টাকা লুটে নেয়। রিসেপশনে ঢুকে চারদিকের গ্লাস, আসবাবপত্র ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাইরে থাকা ক্লাব সদস্যের একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয় তারা।

    একই দিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে বিজিবি ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। নারায়ণগঞ্জের একমাত্র এসি বাস তথা শীতল বাসের ডিপোতে ঢুকে ২৬টি বাস পুড়িয়ে দেয়। পার্শ্ববর্তী নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্ক (নাম পার্ক) ভাঙচুর করে তা-বকারীরা। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহর, লিংক রোড, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যে ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে তাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। লিংক রোডের এসবি গার্মেন্টসে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি করা হয়েছে।

    নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকার:
    নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৮ ও ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ভবন ও এর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় দুর্বৃৃত্তরা। তারা নগরীর দুই নম্বর রেলগেটের মিনি পার্কে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। পরে দুই দফায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। গতকাল বুধবার এ মিলনায়তন পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি জানান, মিলনায়তন এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, ভালোমতো সংস্কার ছাড়া এখানে অনুষ্ঠান করা সম্ভব না।

    ১৮ জুলাই সিটি করপোরেশনের বাণিজ্যিক ভবন দোয়েল সিটি প্লাজা-১ ভাঙচুর করা হয়। পরদিন জিমখানা এলাকায় দোয়েল সিটি প্লাজা-৩-এ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। করপোরেশনের চারটি গাড়ি, ১০টি মোটরসাইকেল, কম্পিউটার ও আসবাবে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রায় দেড়শ বছরের পুরোনো হেরিটেজ ভবন ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। নগর ভবন চত্বরের ওয়ান ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকেও ভাঙচুর করা হয়েছে।

    সহিংসতায় রংপুরে ক্ষয়ক্ষতি শত কোটি টাকা:

    সাম্প্রতিক সহিংসতায় রংপুরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকা বলে দাবি করেছে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা তাজহাট থানা, ডিবি অফিস, সমবায় মার্কেট, পরিবার পরিকল্পনা অফিস, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা রংপুর সিটি করপোরেশনের ১২৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর ছাড়াও বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

    নরসিংদী কারাগার থেকে ৮২৬ বন্দি ছিনতাই:
    কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত শুক্রবার নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কারাগারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেইসঙ্গে ভেতরে ঢুকে সেলের তালা ভেঙে দিলে ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যায়। পাশাপাশি অস্ত্র-গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। কারা কর্তৃপক্ষ বলছেন, আগামী এক বছরেও কারাগারটিতে পুরোপুরি বসবাসের উপযোগী করা তোলা যাবে না। কারণ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।

    নরসিংদী জেলা কারাগারটি শহরের ভেলানগরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত। ভেলানগর ও জেলখানা মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার বিক্ষোভ-সমাবেশ করছিল। শুক্রবারও সেখানে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। তবে সেদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের খুব একটা দেখা যায়নি। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ করেই হাজারো জনতা কারাগারের দিকে এগোতে থাকে। তারা গিয়ে সেখানে প্রথমে ইটপাটকেল, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। সেইসঙ্গে কারা ফটকে ভাঙচুর চালায়।
    ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একাধিক কারারক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বিকাল সোয়া ৪টার দিকে হামলাকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে কারাগারের দুই দিকের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। এতে কারাগারের ভেতরে নানা জায়গায় আগুন ধরে যায়। হামলাকারীদের হাতে লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র ও শাবল, কুড়াল ছিল। তাদের হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করেন কারারক্ষীরা। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় কারারক্ষীরা নিরাপদ অবস্থানে চলে যান। হামলাকারীরা কারারক্ষীদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া চাবি দিয়ে বন্দিদের অনেকগুলো কক্ষের তালা খুলে দেয়। কিছু কক্ষের তালা ভেঙে ফেলা হয়। চারপাশ ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। এ সময় হামলাকারীরা আসামি ছিনিয়ে নেয়। এরপর একে একে ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। এ সময় অস্ত্রাগার ও কারারক্ষীদের থেকে ৮৫টি অস্ত্র ও আট হাজার ১৫০টি গুলি লুট করা হয়।

    দুজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, হামলাকারীরা শাবল, কুড়াল ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কারা ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেছিল। মূল সেলের প্রবেশমুখে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। তালা ভেঙে বন্দিদের মুক্ত করে দেয় তারা। পরে কারা হাসপাতালে আগুন দেয়। বিকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেখানে থমথমে পরিবেশ ছিল।

    কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে কয়েদিরা পালিয়ে যায়। এর মধ্যে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৯ সদস্য ছিল; যাদের মধ্যে দুজন নারী। কোনও কোনও সাধারণ কয়েদি পালিয়ে যেতে না চাইলে তাদের মারধর করে জেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরা কারাগারের পোশাক নিয়েই পালিয়ে যায়। কারারক্ষীরা পিছু হটার পর অস্ত্রভান্ডার ভেঙে মোট ৮৫টি অস্ত্র ও আট হাজার ১৫০টি গুলি লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা।

    আরও পড়ুন

    ফেনীতে রেস্তোঁরা মালিকদের মানববন্ধন
    লেমুয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ
    টপ সয়েল কাটায় ১জনকে জেল, ২টি পিকআপ জব্দ
    মিরসরাইয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী নিহতের ঘটনায় যুবদলের আহ্বায়ক সহ গ্রেফতার ৪
    ছাগলনাইয়ায় সাংবাদিকদের সাথে জামায়াতের মতবিনিময়
    জমাদার বাজার ব্যাডমিন্টন টুর্ণামেন্টের পুরস্কার বিতরণ 
    ছাগলনাইয়ায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ
    পাইলট মাঠে মিনিবার ফুটবল টুর্নামেন্ট’র উদ্বোধন