১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
শিরোনাম
ফেনী নদী থেকে উদ্ধার মৃত শ্রমিক আবু বক্কর না প্রনপ দে আমরা ফেনীবাসী’র সভাপতি এয়াকুব নবি, সেক্রেটারি একরামুল চৌদ্দগ্রামের  উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ভুঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা গ্রেফতার ফেনীর পুরাতন জেলগেটের সামনে থেকে গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে সোনাগাজীতে ইমামকে মেরে মসজিদের ক্যাশের চাবি ছিনিয়ে নিলো সন্ত্রাসীরা ফুলগাজীতে শ্যালকের ছুরিকাঘাতে ভগ্নিপতির মৃত্যু অ্যাডভোকেট সাজু ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিনকে কারাগারে প্রেরণ তেমুহনী থেকে ডিবির অভিযানে তিন মাদক কারবারি আটক অ্যাডভোকেট শাহাজাহান সাজু গ্রেপ্তার ফেনী সমিতি ইউকে’র নবনির্বাচিত কমিটির সম্মানে সংবর্ধনা
  • প্রচ্ছদ
  • আইন আদালত >> আন্তর্জাতিক >> টপ নিউজ >> মতামত
  • মেধার অন্ধ অহংকারে অন্যকে অসম্মান করার অদম্য স্পৃহা থেকে বের হয়ে আসুন
  • মেধার অন্ধ অহংকারে অন্যকে অসম্মান করার অদম্য স্পৃহা থেকে বের হয়ে আসুন

    দৈনিক আমার ফেনী

    জমির বেগ>

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়? উত্তর একেবারেই না।
    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী বা কোটবিরোধীরা বলছে কোটা ব্যবস্থার কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। মেধা ও মেধাহীন বিতর্ক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের প্রতি অসহনীয় অসম্মান প্রদর্শন করা হচ্ছে। আমাদের প্রিয় তরুণ মেধাবী প্রজন্মের বোঝা দরকার, তারা যে আন্দোলনটা করছেন, সেটা কতোটা অযৌক্তিক।

    জানি আমার লেখা অনেকেরই পছন্দ হবে না। তবু কোটা নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। আমি চাই বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বুঝে তারপর মাঠে নামুন, সত্যিকারের মেধার পরিচয় দিন।

    সবার আগে আসুন সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি কীভাবে কাজ করে­ সেটা বোঝার চেষ্টা করি। বোঝার সুবিধার্থে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষা উদাহরণ দিচ্ছি। এই পরীক্ষার সর্বশেষ ধাপ মৌখিক পরীক্ষা ২০২৩-এর নভেম্বরে শেষ হয়েছে। , এই পরীক্ষার পরিসংখ্যান নিয়ে একটু আলোচনা করি।

    ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার ৮৩২ জন। আবেদন করার ক্ষেত্রে নেই কোনও কোটা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৫৭২ জন। এই পরীক্ষাতে অংশগ্রহণের জন্যও নেই কোনও কোটা।
    প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাস করেছে মাত্র ১৫ হাজার ২২৯ জন। মনে রাখবেন, এখানেও কোনও কোটা নেই। এই ১৫ হাজার ২২৯ জনের সবাই লিখিত পরীক্ষা দিতে পারবেন। পরিসংখ্যান বলছে, লিখিত পরীক্ষায় সবাই অংশগ্রহণ করতে আসেন না। ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন মোট ১৩ হাজার ৬৭১ জন। দয়া করে মনে রাখবেন, এখানেও কোনও কোটা নেই। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছেন মাত্র ৯ হাজার ৮৪০ জন।
    এখন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই ৯ হাজার ৮৪০ জন থেকে (যদিও সবাই অংশগ্রহণ করেন না) মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাবে মাত্র ২ হাজার ১৬৩ জন। এবং ঠিক এখানেই কোটা হিসাব করা হবে।

    আবেদনকারীর সংখ্যা বাদ দিলাম। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা প্রায় সাড়ে তিন লাখ থেকে ৯ হাজারে ঠাঁই করে নেওয়া এই তালিকার কাকে কাকে আপনি মেধাহীন বলবেন? নারী-পুরুষ, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী-বাঙালি, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ- পরিবার নির্বিশেষে এরা প্রত্যেকেই মেধাবী এবং চাকরি পাওয়ার যোগ্য নয় কি? আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই ৯ হাজার ৮৪০ জনের একজনও কম মেধাবী বা অযোগ্য নয়। সে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের হোক বা না হোক, নারী হোক বা না হোক, প্রতিবন্ধী হোক বা না হোক, আদিবাসী হোক বা না হোক।

    মনে রাখবেন, একজনকেও যদি কোটায় নিয়োগ দেওয়া নাও হয়, তবু প্রায় ১০ হাজারের এই তালিকা থেকে মেধাবী ৭ হাজার ৬৭৭ যোগ্য প্রার্থী সরকারি চাকরি পাবে না। আপনারা যারা কোটাভুক্তদের অযোগ্য বলে, মেধাহীন বলে অসম্মান করছেন, তারা ঠিক বুঝে বলছেন তো? নাকি মেধার অন্ধ অহংকার আর অন্যকে অসম্মান করার অদম্য স্পৃহা থেকে করছেন? আপনার-আমার মতো অনেক মেধাবীর চেয়ে অবশ্যই এই কোটাধারীরা অনেক বেশি মেধাবী ও যোগ্য। বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

    এবার আসি আপনাদের দাবির অস্বচ্ছতা বা দুর্বলতা নিয়ে। ২০১৮ সালে আন্দোলনে আপনাদের ৫ দফা দাবি ছিল। যেগুলোর প্রত্যেকটির ক্লারিফিকেশনের অভাব ছিল। ২০২৪-এ আপনারা চার দফা দাবি আনলেন, কিন্তু সমস্যা দূর হলো না। সেই একই ক্ল্যারিটির অভাব। পরে আপনারা এক দফায় নেমে এসেছেন। আপনাদের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ঘোষণা করেছেন, সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
    এখন আপনারা এই অযৌক্তিক, বৈষম্যমূলক এবং ন্যূনতম বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, তার কোনও ব্যাখ্যা আপনারা দেননি। কেমন পুনর্বিন্যাস চান, কেন চান, কোন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে চান, সেটাও তো পরিষ্কার করে বলতে পারতে হবে। ২০১৮ সালের চেয়ে এবার অবশ্য আপনাদের সামান্য উন্নতি হয়েছে। অন্তত সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর শব্দটা মুখস্থ করতে পেরেছেন।

    আর সরকারি চাকরিতে কতজন নারী কাজ করেন জানেন? ৩০ শতাংশেরও কম। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ২০২২ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান মতে, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ৯ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ জন পুরুষ এবং ৪ লাখ ৯ হাজার ১৩৯ জন নারী। মানে, বর্তমান সরকারি চাকরির বিভিন্ন পদে ২৯.২৯ শতাংশ নারী কাজ করছেন। আশা করি আপনারা এবার এটা দাবি করবেন না যে বাংলাদেশে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মেধা বেশি। বরং কেন কম সেটা ভাবার, বোঝার চেষ্টা করুন।
    একইরকম পরিসংখ্যান আপনারা পাবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, শারীরিক প্রতিবন্ধী কিংবা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। যেটা দেখলে সহজেই বোঝা যায় অনগ্রসরতা বা পিছিয়ে পড়ার বোঝাটা কার ওপর কতটা বেশি।

    আর আলাদা করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটার কথা বলছেন? স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কতজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবার কী কী সুবিধা নিয়েছেন, তার হিসাব কি আপনারা দিতে পারবেন? পারবেন না। ৭৫-এর পর থেকে তো শুধু মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার নিগৃহীত ছিল। যুদ্ধে বাবা-মা-ভাই-বোনকে হারিয়ে অসংখ্য সম্ভাবনাময় সন্তান, যারা আপনাদের মতো কিংবা আপনাদের চেয়েও মেধার স্বাক্ষর রাখতে পারতেন, তারা হারিয়ে গেছেন। জীবনে অনেকেই কোথাও দাঁড়াতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারদের সম্মান করতে যদি নাও পারেন, অন্তত অসম্মান করবেন না।

    মনে রাখতে হবে, কোটা ব্যবস্থা শুধু সাংবিধানিকভাবেই সুরক্ষিত নয়, বরং জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন যে ঘোষণাপত্র আছে তার দ্বারাও স্বীকৃত। এবং যেকোনও কোটা ব্যবস্থা চালুর আগে পরিসংখ্যানভিত্তিক পর্যালোচনা করা হয়। সেটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যই হোক কিংবা কোন জেলা বা বিভাগের জন্যই হোক কিংবা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্যই হোক।

    আন্দোলন করতে চান করুন, কিন্তু সেটা নিয়ে আগে একটু বিশ্লেষণ করুন। সঠিক তথ্য জানার চেষ্টা করুন এবং কোন বিশেষ ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয় সেটাও একটু পর্যালোচনা করতে শিখুন। তারপর দাবি তৈরি করুন। অকারণে কাউকে অযোগ্য, মেধাহীন বলে গালি দেওয়ার আগে ভাবুন। কোটাহীনভাবে সব ধাপ পার হয়ে যারা মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তারা কেউ কোনোভাবেই মেধাহীন নন।

    সবশেষে অনুরোধ রইলো, আন্দোলন যদি করতেই হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরির জন্য আন্দোলন করুন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে অন্যায় সুবিধাভোগীদের শাস্তির দাবি জানান। বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রতিবাদ করুন। সরকারের জবাবদিহি দাবি করুন। রাজাকারের তালিকার জন্য করুন। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দেশটা পেয়েছি, তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আমরা অস্বীকার করতে পারি না।

    বাস্ততবতা হচ্ছে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা কোন পদ্ধতিতে কার্যকর হয়, তা নিয়ে অনেকেরই নেই ধারণা। জাতীয় কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পক্ষ থেকে কখনও কীভাবে কোন কোটা থেকে কতজন নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে, সেই তথ্য স্পষ্ট ভাবে অনেকে জানে না। আর না জানার কারনেই জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
    জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া কোটার প্রসঙ্গে বলেন, “নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে মেধাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তারপর কোটা প্রয়োগ হয়। তিনি বলেন, গাণিতিক কারণে মাঝে মাঝে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সব জায়গায় প্রয়োগ হয়। যেমন ধরুন, যদি কোথায় ৫ জনকে নিয়োগ করা হয়। তাহলে নারী কোটা ১০ শতাংশ প্রয়োগ করলে সংখ্যাটি দাঁড়ায় শূন্য দশমিক পাঁচ। এটা তো কাউন্ট করা যায় না। আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ প্রয়োগ করলে সংখ্যা হয় ১ দশমিক ৫। তখন এই ফ্র্যাকশনটা বাদ দিয়ে ১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।” কোটার কারণেই পদ শূন্য কি না- প্রশ্নে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলছেন, “এক সময় এই সমস্যা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয়, যা ফাঁকা থাকবে, তা সব মেধাক্রমে চলে যাবে। শেষ অনেকগুলো নিয়োগই এই নিয়মে হয়েছে। ফলে, এখন এই কারণে এই সমস্যা হচ্ছে না। কোটার জন্য পদ ফাঁকা এটা এক সময় সত্য ছিল, কিন্তু এখনকার অবস্থায় তা সত্য না।”
    সর্বশেষে বলতে চাই, সব ধরণের কোটা ২০১৮ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট সরকারের সিদ্ধান্তকে বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ে স্থীতাবস্থা দেন। মানে ২০১৮ সালে সরকার যে কোটা বাতিল করেছেন সেটাই চলমান থাকবে। ৭ আগস্ট রায়ের দিনও ধার্য করেন।

    আরও পড়ুন

    ফেনী নদী থেকে উদ্ধার মৃত শ্রমিক আবু বক্কর না প্রনপ দে
    আমরা ফেনীবাসী’র সভাপতি এয়াকুব নবি, সেক্রেটারি একরামুল
    চৌদ্দগ্রামের  উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ভুঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা গ্রেফতার
    ফেনীর পুরাতন জেলগেটের সামনে থেকে গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে
    সোনাগাজীতে ইমামকে মেরে মসজিদের ক্যাশের চাবি ছিনিয়ে নিলো সন্ত্রাসীরা
    ফুলগাজীতে শ্যালকের ছুরিকাঘাতে ভগ্নিপতির মৃত্যু
    অ্যাডভোকেট সাজু ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিনকে কারাগারে প্রেরণ
    তেমুহনী থেকে ডিবির অভিযানে তিন মাদক কারবারি আটক