১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
শিরোনাম
ফেনীতে ডোবায় মিলল বিএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মরদেহ নির্বাচনের সময় ঘোষণায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে সরকার নিরপেক্ষ- মজিবুর রহমান মঞ্জু পেশাদার চোর চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার প্রগতি ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ সংঘের সভাপতি লোকমান ও সম্পাদক শাহীন অধ্যাদেশের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা কোম্পানীগঞ্জে প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ফেনী জেলা জাতীয়তাবাদী সাইবার দলের সভাপতি বাবলু ও সম্পাদক পারভেজ ফেনীতে কৃষকদের পার্টনার স্কুল কংগ্রেস -২০২৫ অনুষ্ঠিত বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় ছাত্রলীগ নেতা বিমান বন্দরে কট পুলিশ কোয়ার্টারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভবন নির্মাণকাজের অভিযোগ
  • প্রচ্ছদ
  • টপ নিউজ >> মতামত
  • সঙ্কটকালে কৌশলী বাজেট!
  • সঙ্কটকালে কৌশলী বাজেট!

    দৈনিক আমার ফেনী

    প্রভাষ আমিন

    আওয়ামী লীগ এখন টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য ছিল উন্নয়ন। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে সরকার তাদের লক্ষ্য অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে দেশের আনাচেকানাচে। বাংলাদেশের যোগাযোগ অবকাঠামো এখন সুবিন্যস্ত। এছাড়া পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, সাবমেরিন, স্যাটেলাইট, পারমাণবিক বিদ্যুত- একের পর এক নতুনের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই সময়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপি বেড়েছে, বাংলাদেশে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে।

    সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি দারুণ এক মোমেন্টাম পেয়েছিল। কিন্তু প্রথম করোনা এসে সেই গতির রাশ টেনে ধরে। করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনীতির গতি আবারো শ্লথ করে দেয়। যে অর্থনীতি আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সাফল্য ছিল, সেই অর্থনীতিই এখন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

    এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই আগামী ৬ জুন সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। সরকারের চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট এটি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে মাহমুদ আলীরও প্রথম বাজেট। মানতেই হবে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে কঠিন বাজেট হতে যাচ্ছে এটি। এবারের বাজেটের শিরোনাম হচ্ছে সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। বরাবরই বাজেটে অনেক গুরুগম্ভীর পরিসংখ্যান ঢাকা পড়ে যায় কথার ফুলঝুরিতে। এবারের শিরোনাম দেখেও বোঝা যাচ্ছে, কথার ফুলঝুরিতেই আড়ালের চেষ্টা করা হবে অনেক সঙ্কট।

    মুখে স্বীকার করুক আর নাই করুক, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় সঙ্কটকাল পাড় করছে, এটা সরকারের নীতিনির্ধারক জানেন। আমাদের চেয়ে ভালোই জানেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকেই এক নাম্বার অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। নির্বাচনের পরও সরকার এই অঙ্গীকার থেকে সরে আসেনি। নতুন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাজার তো আর সামগ্রিক অর্থনীতির বাইরে নয়। ডলারের দাম বাড়লে আমদানী করা সব জিনিসের দামই বেড়ে যায়। অনেকদিন ধরে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি মধ্যবিত্তও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে। সরকার নানাভাবে নিম্নবিত্ত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তবুও দ্রব্যমূল্যের এই চাপ সামলানো কারো জন্যই সহজ নয়। আগামী বাজেটে নিশ্চয়ই এই বিষয়টি সরকারের মাথায় থাকবে। কীভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন একটু সহজ করা যায়, সেই চেষ্টা নিশ্চয়ই থাকবে। কিন্তু দফায় দফায় পানি, বিদ্যুত, গ্যাসের বাড়তি দাম, সাধারণ মানুষের চাপকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে। সরকারের অবস্থাও সাধারণ মানুষের মতই। পা ঢাকতে গেলে মাথা উদোম হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের যেমন আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, সরকারেরও তাই। দেশী-বিদেশী নানা উৎস থেকে ঋণ নিয়ে সরকারি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঋণ নিলে সেটা শোধ দিতে হয়। পুরো ঋণ না হলেও সুদ দিতে হয়।

    ঋণের সুদ এখন সরকারের মাথার ওপর একটা বড় বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। আসলে অর্থনীতি চারদিক থেকে চেপে ধরেছে। অর্থনীতির চাপ সামাল দিতে সরকার আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল-আইএমএফ’এর দ্বারস্থ হয়েছে। তবে চাইলেই আইএমএফ’এর ঋণ পাওয়া যায় না। নানান শর্ত মেনেই আইএমএফ’এর ঋণ নিতে হয়। আর আইএমএফ’এর শর্ত শুধু মুখে মুখে মানলেই হবে না। ঋণের কিস্তি দেয়ার আগে প্রতিবার আইএমএফ প্রতিনিধিদল সফর করে শর্ত মানার অগ্রগতি জানতে চায়। সন্তুষ্ট হলেই কেবল ঋণ ছাড় হয়।

    আইএমএফ’এর যেসব শর্ত তা দীর্ঘমেয়াদে যে কোনো অর্থনীতির জন্যই ভালো। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে সঙ্কটকাল পাড় করছে, এই সময়ে আইএমএফ’এর শর্ত মানতে গেলে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়বে। আবার আইএমএফ’এর শর্ত না মেনেও উপায় নেই। সরকার তাই উভয়সঙ্কটে আছে। এখন সরকারকে বাজেট প্রণয়নে কৌশলী হতে হবে। কীভাবে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ না বাড়িয়ে আইএমএফকে সন্তুষ্ট রাখা যায়, সেটাই এখন মূল ভাবনা। নয়া অর্থমন্ত্রীকে তাই বাজেট প্রণয়নে কৌশলী হতে হবে, ভিন্ন ভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। কাজটা সহজ নয়। আবার এর কোনো বিকল্পও নেই।

    আইএমএফ ভর্তুকি কমাতে বলে, ট্যাক্স-জিডিপি হার বাড়াতে বলে, কর ছাড় কমাতে বলে, রাজস্ব আয় বাড়াতে বলে, অর্থনৈতিক খাতে বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে

    সংস্কার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বলে। কোনোটাই খারাপ কথা নয়। গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকার ভর্তুকি কমানোর পথেই হাঁটছে। কিন্তু ভর্তুকি কমানোর চেষ্টায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হলে ঝুকিতে পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। নিম্নবিত্ত মানুষকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও হাত দেয়ার খুব একটা সুযোগ নেই।

    গত অকেবছর ধরেই সরকার বড় বড় বাজেট দিয়েছে। অনেকে উচ্চাভিলাসী সরকার তা কানে তোলেনি। এবার বোধহয় আর সেই সুযোগ নেই। এবার সরকারকে একটু মিতব্যয়ী হতেই হবে। উচ্চাভিলাসী ও ব্যয়বহুল প্রকল্প এবার সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। কিন্তু এই টানাটানির সংসারেও যখন ডিসি-ইউএনওদের জন্য গাড়ি কেনার পরিকল্পনা দেখি, মন খারাপ হয়ে যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন যে অবস্থা তাতে, সব ধরনের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সব ক্ষেত্রেই সংযমী হতে হবে। বাস্তবতা হলো, এখন প্রতিটি পয়সা হিসাব করে ব্যয় করতে হবে।

    আমাদের যে মানসিকতা, তাতে সরকারের ব্যয় কমানোর চেষ্টাটা অনেক কঠিন। অনেক চেষ্টা করেও খুব বেশি কমানোর সুযোগ নেই। তারচেয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করা সহজ।

    সরকার সেটাই করতে চাইছে। আইএমএফ’এর শর্ত মেনে এবার কর অব্যাহতির আওতা কমিয়ে আনা হতে পারে। এটা ঠিক বাংলাদেশের অর্থনীতি যে আকারে বেড়েছে, রাজস্ব আয় সে তুলনায় বাড়েনি। রাজস্ব বোর্ডের চেষ্টা আছে, তবে তাতে সৃষ্টিশীলতা নেই। ১৮ কোটি মানুষের দেশে আয়কর ফাইল আছে মাত্র লাখ ত্রিশেক। তাও সবাই রিটার্ন দেনও না। চাকরির কারণে বাধ্যতামূলকভাবেই অনেককে আয়কার ফাইল খুলতে হয়েছে। এখন নানাভাবে নানাক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করে রাজস্ব বোর্ড আরো অনেককেই করজালের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কর দিতে পারেন, এমন কোটি মানুষ এখনও কর জালের বাইরেই রয়ে গেছেন। আয়কর দিতে পারেন, এমন সবাইকে করের আওতায় আনা গেলে রাজস্ব আয় নাটকীয়ভাবে বাড়ানো সম্ভব। গ্রামে অনেককে দেখেছি, যারা আয়কর সীমার চেয়ে অনেক বেশি আয় করেন। কিন্তু আয়কর দেয়ার ধারণাটা নেই তাদের মধ্যে। যারা বাধ্য হয়ে আয়কর জালে ফেঁসে গেছেন, রাজস্ব বোর্ড বারবার নানাভাবে তাদেরকে চিপেচুষে আয় বাড়াতে চান। করহার নআ বাড়িয়ে করজাল বাড়ালে আয় অনেক দ্রুত
    বাড়বে। আর বিত্তবানদের কাছ থেকে আরো অনেক বেশি হারে কর আদায় করতে পারলে মধ্যবিত্তদের কম চাপ দিতে পারে রাজস্ব বোর্ড। রাজস্ব আয় না বাড়ার আরেকটি

    বড় কারণ- ভীতি। মানুষ রাজস্ব বোর্ডকে ভয় পায়। তারা মনে করেন, একবার এনবিআরের পাল্লায় পড়লে আর রক্ষা নেই। আয়কর দেয়া যে দেশপ্রেমের অংশ সেটা মানুষকে বোঝাতে হবে। মানুষকে বুঝিয়ে কর আদায় করার চাইতে, গলায় পা দিয়ে আদায় করতে বেশি উতসাহী এনবিআর। এই মনোভাব বদলাতে না পারলে আইএমএএফ’এর শর্ত, আয় বাড়ানোর আকাঙ্খা কোনোটাই বাস্তবায়িত হবে না।

    টাকা পয়সা নিয়ে সরকারের এত টানাটানির পাশাপাশি যখন মানুষের হাজার কোটি টাকা, হাজার বিঘা সম্পত্তির গল্প শুনি, হাজার কোটি পাচার, লক্ষ্য কোটিটাকার খেলাপী ঋণের গল্প শুনি; মন খারাপ হয়ে যায়। চৌবাচ্চার গল্প মনে পড়ে যায়। নিচে ছিদ্র রেখে ওপরে যতই পানি ঢালুন চৌবাচ্চা কখনো পূর্ণ হবে না। এত অনিয়ম, এত অপচয়, এত দুর্নীতি বহাল রেখে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। অপচয় বন্ধ না হলে কোনো অর্থমন্ত্রীর পক্ষেই ভালো বাজেট দেয়া সম্ভব নয়।

    লেখক: বার্তাপ্রধান, এটিএন নিউজ।

    আরও পড়ুন

    ফেনীতে ডোবায় মিলল বিএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর মরদেহ
    নির্বাচনের সময় ঘোষণায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে সরকার নিরপেক্ষ- মজিবুর রহমান মঞ্জু
    পেশাদার চোর চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার
    প্রগতি ক্রীড়া ও সমাজকল্যাণ সংঘের সভাপতি লোকমান ও সম্পাদক শাহীন
    অধ্যাদেশের মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা
    কোম্পানীগঞ্জে প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি
    ফেনী জেলা জাতীয়তাবাদী সাইবার দলের সভাপতি বাবলু ও সম্পাদক পারভেজ
    ফেনীতে কৃষকদের পার্টনার স্কুল কংগ্রেস -২০২৫ অনুষ্ঠিত