৩রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
শিরোনাম
ফেনীতে ৪৮ ঘন্টায় গ্রেফতার ৩০ আমরা জনগণের সাথে পুলিশের সম্পর্ক আরো সমৃদ্ধ করতে চাই – পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩ কিমি” নীরব এলাকা” ঘোষণা আন্দোলনে আহত দাগনভূঞার আরিফ মারা গেছেন নোবিপ্রবিতে পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি মহসিন, সম্পাদক তাওহিদ দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মানববন্ধন লেমুয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অপসারণের চেষ্টা, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতিবাদ ফেনী কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিবারকে নগদ উপহার দিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান অ্যালামনাই এসোসিয়েশন আওয়ামী লীগের শাসনমালে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম হয়েছিল- ডা. তাহের ফেনী জেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের মতবিনিময় সভা
  • প্রচ্ছদ
  • টপ নিউজ >> মতামত
  • বাস্তবতা যখন সিনেমার চেয়েও নৃশংস
  • বাস্তবতা যখন সিনেমার চেয়েও নৃশংস

    দৈনিক আমার ফেনী

    প্রভাষ আমিন

    একজন বিচারক ছিলেন, যিনি যে কোনও ঘটনা ঘটলেই প্রশ্ন করতেন, পেছনের নারীটা কে? তার ধারণা ছিল, পৃথিবীর সকল অপকর্মের পেছনেই কোনও না কোনও নারী থাকে। একবার এক ডেকোরেটরের কর্মী মালপত্র নিয়ে এক বাসায় যাচ্ছিলেন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় তিনি পা ফসকে পড়ে গেলেন। সব মালপত্র ভেঙ্গে গেলো। ডেকোরেটরের মালিক কর্মীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা করলেন। যথারীতি সেই বিচারক প্রশ্ন করলেন, পেছনের নারীটা কে? সবাই অবাক। এখানে নারী আসলো কোত্থেকে। পরে অনুসন্ধান করে দেখা গেলো, পাশের ভবনের ছাদে এক নারী দাঁড়িয়ে ছিলেন। ডেকোরেটর কর্মী সেই নারীর দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি ভাঙছিল। তাতে অসাবধানে হোঁচট খেয়ে পড়ে সব মালপত্র ভেঙ্গে ফেলেন সেই ডেকোরেটর কর্মী।

    বলা হয়, পৃথিবীর সব অপকর্মের জন্য ইংরেজির তিন ‘খ’- খধহফ, খধফু, খবধফবৎংযরঢ়; বা তিন ‘ড’- ডরহব, ডড়সধহ, ডবধষঃয দায়ী। তবে আসল দায় কিন্তু পুরুষদের। নিজেদের দায় নারীদের ঘাড়ে চাপানোর জন্য পুরুষরা এসব তত্ত্ব আবিষ্কার করে। আসলে খলের কখনও ছলের অভাব হয় না।

    ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ ও পরে হত্যাকা-ের স্বীকার হওয়ার পর, সেই বিচারেকর মতো কেউ কেউ এই ঘটনার পেছনের নারীকে খুঁজছিলেন। সাংসদ আনারের মরদেহ খুঁজে পাওয়া না গেলেও হত্যা রহস্য মোটামুটি উন্মোচিত। নিহত সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের ছেলেবেলার বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনায় সৈয়দ আমানুল্লাহর নেতৃত্বে ঘাতকদল আনারকে হত্যা করে তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে গায়েব করে দেয়। এই হত্যাকা-ের জন্য শাহীন ৫ কোটি টাকায় খুনি ভাড়া করেছিলেন। বাংলাদেশ-ভারত মিলে অন্তত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারীও রয়েছেন। এই তো সেই বিচারকের কৌতূহলের জবাব চলে এলো। তবে এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া কথিত মডেল সিলিস্তা রহমান খুনের সাথে সরাসরি জড়িত এমন কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে কলকাতার নিউটাউনের অভিজাত এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে নিতে সিলিস্তাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি হত্যা মিশনে অংশ নেননি বা হত্যার ঘটনা হয়তো জানতেনও না। তবে ঘটনার সময় তিনি সেই ট্রিপলেক্স ফ্ল্যাটের তিনতলায় ছিলেন। আনারকে সেই ফ্ল্যাট পর্যন্ত ডেকে আনা পর্যন্তই হয়তো তার দায়িত্ব ছিল।

    দেশে-বিদেশে খুনাখুনির অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু সাংসদ আনার হত্যার মতো এমন পরিকল্পিত, নৃশংস ঘটনা বাস্তবে তো দূরের কথা, সিনেমাতেও খুব বেশি পাওয়া যায় না। একমাস ধরে পরিকল্পনা, কলকাতায় বাসা ভাড়া করা, বাংলাদেশ থেকে খুনি ভাড়া করা, মুম্বাই থেকে কসাই ভাড়া করে আনা, টার্গেটকে ফাঁদে ফেলতে মডেল ভাড়া করা- সবকিছুই নিখুঁত। সিনেমা দেখে দেখেও মানুষ অনেককিছু শেখে। আবার অনেক সিনেমা বানানোই হয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে। তবে আনার হত্যাকা- কল্পনার সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এই ঘটনায় নৃশংসার যে মাত্রা, তা পুরোপুরি চিত্রায়ন সম্ভব নয়। করলেও বিশ্বের কোনও দেশেই সেন্সর ছাড়পত্র পাবে না। তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় কাউকে হত্যা করে ফেলা, আর দীর্ঘ পরিকল্পনা করে কাউকে হত্যা করা এক নয়। হত্যা শুধু হত্যা নয়। ক্লোরোফর্ম দিয়ে হত্যার পর লাশের পাশে বসে মদ ও হিরোইন সেবন, পেশাদার কসাই দিয়ে মরদেহের চামড়া তুলে ফেলে শরীরের অংশ টুকরা টুকরা করে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া, সন্দেহ দূর করতে মাংসে হলুদ মেশানো- এই ঘটনা পুরো বিবরণ লেখা বা পড়াও আসলে সম্ভব নয়।

    এই ঘটনার একটা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আছে। এমপি বাংলাদেশের, ঘটনাস্থল কলকাতা, খুনিরা বাংলাদেশের, কসাই এসেছে মুম্বাই থেকে, খুনের মাস্টারমাইন্ড মার্কিন নাগরিক, মূল খুনি পরিচয় আড়াল করতে নতুন নাম ধারণ করেছে। খুনিদের মূল পরিকল্পনা ছিল, ঘটনা ছড়িয়ে গেলে ধরা পড়ার ঝুঁকিও কম থাকে। তবে তাদের পরিকল্পনা প্রাথমিক বিচারে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ উবার থেকে পাওয়া টেলিফোন নম্বরের সূত্র ধরে বাংলাদেশ থেকে খুনিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে জটিলতা এখনও রয়ে গেছে। খুন যেহেতু কলকাতায় হয়েছে। তাই বিচারও হওয়ার কথা কলকাতাতেই। কিন্তু সন্দেহভাজনদের তিনজন বাংলাদেশে, একজন কলকাতায় রিমান্ডে আছে। এই ঘটনার মূল বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তাই জটিলতা থাকছেই। তারচেয়ে বড় কথা, আনার হত্যার বিস্তারিত জানা গেলেও তার মরদেহ এখনও উদ্ধার করা যায়নি। আর মরদেহ উদ্ধার না হলে বিচার প্রক্রিয়ার জটিলতা আরো বাড়বে। তারচেয়ে বড় কথা, এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জমান শাহীন মার্কিন নাগরিক। তাই তাকে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে না। সব মিলিয়ে আনার হত্যার বিচার নিয়ে ধোয়াশা থাকছেই।

    তবে আগেই যেমনটি বলেছি, এই ঘটনার নৃশংসতাটাই আমাকে ভাবাচ্ছে বেশি। মানুষ কতটা নৃশংস হতে পারে, তার একটা বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে আনার হত্যাকা-। মানবিকতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতেই আনার হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত বিচার এবং দায়ীদের সর্বোচ্চ নিশ্চিত করাটা জরুরি। এটা প্রমাণ করা জরুরি, বিশ্বের যে প্রান্তেই অপরাধ সংঘটিত হোক, আর অপরাধী যে প্রান্তেই পালিয়ে থাকুক; কেউ রেহাই পাবে না। আইনের হাত অপরাধীদের চেয়েও লম্বা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই এটা প্রমাণ জরুরি।

    লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

    আরও পড়ুন

    ফেনীতে ৪৮ ঘন্টায় গ্রেফতার ৩০
    আমরা জনগণের সাথে পুলিশের সম্পর্ক আরো সমৃদ্ধ করতে চাই – পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান
    হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩ কিমি” নীরব এলাকা” ঘোষণা
    আন্দোলনে আহত দাগনভূঞার আরিফ মারা গেছেন
    নোবিপ্রবিতে পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি মহসিন, সম্পাদক তাওহিদ
    দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে সারাদেশের ন্যায় ফেনীতেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মানববন্ধন
    লেমুয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অপসারণের চেষ্টা, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতিবাদ
    ফেনী কলেজ রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিবারকে নগদ উপহার দিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান অ্যালামনাই এসোসিয়েশন