ড. হাসান মো. আল-ইমরান
বাঙ্গালির উত্থানে শত শত বীর, বীরাঙ্গনা, মহান নেতা, মহিয়সী নারীর যেমন অবদান আছে, পতনের পিছনে আছে কলংকিত স্বার্থান্বেষী কিছু অমানুষ। এ কথা অনস্বীকার্য, সকল প্রতিকূলতা বাঁধাবিপত্তি দূরে ঠেলে দিয়ে বাঙ্গালীকে মাথা উচু করে সারা বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বে ত্রিশ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার আত্মহুতির বিনিময়ে বাঙ্গালি স্বাধীনতা অর্জন করলো। অথচ, তাঁর এবং তাঁর পরিবারের প্রতি নেমে এল ভয়ঙ্কর কলংকিত অমানুষের কালথাবা, আরেকবার পতন হল বাঙ্গালির। সেসময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচেছিলেন। বাঙালির সেই পতনের হাত থেকে উদ্ধার করতে ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে ১৭ই মে ১৯৮১ সালে বাঙ্গালির প্রতি পরম মমতা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধুরই কন্যা শেখ হাসিনা। যেই বাঙ্গালি তার পুরো পরিবারকে এক কালরাতে নৃশংস ভাবে হত্যা করলো, কোনও এক মন্ত্রবলে সেই বাঙ্গালির প্রতি অপরিসীম মমতা নিয়ে তিনি এগিয়ে এলেন গণতন্ত্রের পুনরুত্থানে।
তারপর থেকেই দিন-রাত বাঙ্গালির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। সাধারণ এক বাঙ্গালি হিসাবে তার কাছে খুব জানতে ইচ্ছা করে কি সেই মন্ত্র, কিসের বলে সেই কালরাতকে ভুলে গিয়ে বাঙ্গালীকে আবার বিশ্বের দরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড় করাচ্ছেন। আমার খুব ঐ মন্ত্রটা শিখতে ইচ্ছা করে। সকলের প্রতি ঘৃণা-রাগ সব ভুলে যেতে ইচ্ছা করে। আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে বা আমার পরিবারকে কেউ যদি এভাবে হত্যা করতো, আমি একরাশ ঘৃণা নিয়ে দেশ ত্যাগ করতাম। আমি অবাক হয়ে ভাবি, উনি কিভাবে এই কষ্ট ভুলে গিয়ে দেশে ফিরে এসে আবার সেই বাঙ্গালির সেবা করে যাচ্ছেন! আমাকে সেই মন্ত্র শিখিয়ে দিলেও কি পারতাম তার মতো মমতা নিয়ে কাজ করতে? অসম্ভব। এটা একমাত্র শেখের বেটির পক্ষেই সম্ভব।
বঙ্গবন্ধুর বাঙ্গালির প্রতি মমতা ও ভালবাসা অনস্বীকার্য, এমনকি মৃত্যুর দিনও উনি বিশ্বাস করতে পারেননি এই বাংলার কিছু কুসন্তান তাকে হত্যা করতে আসবে। ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধুর নিজের হাতে গড়া, তাঁর জিন দিয়ে তৈরী এই মহিয়সী নারী। এত কিছুর পর ও বাঙ্গালিকে বুকে আঁকড়ে ধরে একটু একটু করে নিজেকে নিঃশেষ করে দিয়ে বিগত ৩ দশকের বেশি সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন। একহাতে যেমন পরম মমতা নিয়ে দেশের মানুষকে আগলে রেখেছেন, অন্যহাতে তেমনি সফলতার সাথে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পার্টির নেতা শেখ হাসিনা একজন বিশেষ ও গুণী রাষ্ট্রনেতা হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।
একজন সফল রাষ্ট্রনায়কের প্রথম গুণ হলো দৃষ্টিভঙ্গি এবং দূরদৃষ্টিশীলতা। একজন নেতা প্রজন্মের এবং দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধিতে এগিয়ে নিতে পারেন দৃষ্টিশীল হলে। সেইসাথে, একজন রাষ্ট্রনায়কের প্রযুক্তিগত সমাধানে দক্ষতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তার নেতৃত্ব দেশের সমৃদ্ধি এবং উন্নতির জন্য নতুন এবং কার্যকর পথ প্রদর্শন করে। শেখ হাসিনা শিক্ষার মাধ্যমে দেশটির যুব প্রজন্মকে আগামীর জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। তিনি এই প্রজন্মকে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শিক্ষার সুযোগ দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়িয়ে তরুন প্রজন্মকে শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করেন। তিনি এই প্রজন্মকে উদ্যোক্তা এবং স্বনির্ভর হতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎসাহিত করেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণকে আত্মনির্ভরশীলতা ও দেশের উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে সহায়তা করে যাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এছাড়াও, তিনি একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দক্ষতা ও প্রযুক্তির প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ হতে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছেন। সর্বোপরি, একজন একজন রাষ্ট্রনায়ককে সহিষ্ণুতা ও উদার চরিত্র বজায় রাখতে হয়। তাকে ক্ষমতা এবং সামরিক সম্মান দুটির সঠিক ব্যবহারে সহনশীল ও চৌকস হতে হয়, যার পূর্ণ গুণাবলী শেখ হাসিনার মধ্যে বিদ্যমান।
বিগত এক দশকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় অনেক সূচকেই এগিয়ে গেছে যার অন্যতম কারণ হলো গণতান্ত্রিক উপায়ে শেখ হাসিনার মত একজন দক্ষ জননেতার উত্থান। তিনি এমন একজন নেতা যে তার দেশ ও জনগণের উন্নতি এবং কল্যাণে নিজেকে দায়িত্বশীল মনে করেন, অন্যদিকে পাকিস্তান এখনো সামরিক দুঃশাসন হতে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারেনি। শেখের এই পরিবার বাংলাদেশের জনগণের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ না করলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তো অনেক দূরের কথা, এখনো হয়তো আমরা পাকিস্তানের করাল গ্রাস হতে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারতাম না। আর ১৯৮১ সালের এই দিনে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন না করলে বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে যেত।
লেখক- সহযোগী অধ্যাপক, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।