১৪ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
শিরোনাম
ফেনী নদী থেকে উদ্ধার মৃত শ্রমিক আবু বক্কর না প্রনপ দে আমরা ফেনীবাসী’র সভাপতি এয়াকুব নবি, সেক্রেটারি একরামুল চৌদ্দগ্রামের  উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ভুঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা গ্রেফতার ফেনীর পুরাতন জেলগেটের সামনে থেকে গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে সোনাগাজীতে ইমামকে মেরে মসজিদের ক্যাশের চাবি ছিনিয়ে নিলো সন্ত্রাসীরা ফুলগাজীতে শ্যালকের ছুরিকাঘাতে ভগ্নিপতির মৃত্যু অ্যাডভোকেট সাজু ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিনকে কারাগারে প্রেরণ তেমুহনী থেকে ডিবির অভিযানে তিন মাদক কারবারি আটক অ্যাডভোকেট শাহাজাহান সাজু গ্রেপ্তার ফেনী সমিতি ইউকে’র নবনির্বাচিত কমিটির সম্মানে সংবর্ধনা
  • প্রচ্ছদ
  • টপ নিউজ >> মতামত
  • পাখি জামা ও ইন্ডিয়া আউটের অনুকাব্য
  • পাখি জামা ও ইন্ডিয়া আউটের অনুকাব্য

    দৈনিক আমার ফেনী

    পলাশ আহসান

    আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে অথবা একটু বেশি হবে। হঠাৎ করেই মেয়েদের জামার ফ্যাশনে পাখি জামা বলে এক জিনিস আসলো। বাংলাদেশের হাটে মাঠে ঘাটে সবাই তখন পাখি জামা পরে। ঈদের সময় সব দোকানে সেই জামা। আর সব কিছুতে শ্রেণিভেদ রয়ে গেলেও পাখি জামা আমাদের বাসায় বাসায় সাম্যবাদ এনে দিল। একই জামা বাসার ভাবিও পরেন বুয়াও পরে। মানের কারণে দামে পার্থক্য হয় হয়তো কিন্তু ডিজাইনে সাম্যবাদের জয়। পাখি জামা না পেয়ে আত্মহত্যার খবরও ছাপা হলো পত্র পত্রিকায়।

    এরকম আরও কয়েকটি হুজুগে মার্কেটিং এর উদাহরণ দেয়া যায়। আপাতত থাক, কারণ আমাদের প্রচলিত হুজিগে বাজার ব্যাবস্থার উদাহরণ দিচ্ছিলাম মাত্র। এই লেখাটাও সেই দিকে যাবে। আসলেই অদ্ভুত আমাদের মনস্তত্ত্ব। কেউ কেউ সারল্য বলে আত্মতৃপ্তি পান হয়তো। কিন্তু আমার মনে হয় এটা ভয়াবহ ক্ষতিকর। কারণ আমাদের মনের এই চলক চতুর লোকজন টের পেয়ে যাচ্ছে। আমরা কী ভাববো সেটা নিশ্চিত করেই পণ্যের মার্কেটিং করছেন ব্যবসায়ী। সেই মার্কেটিং,সব ক্ষেত্রে গণমানুষের জন্যে সুখকর নয়।

    আজ যে আমরা ইন্ডিয়া আউটের কথা বলে চায়ের টেবিল এবং ফেসবুকের পাতা গরম করছি সেই আমাদের মেয়েরা ক’দিন আগে পাখি জামা পরে ফ্যশন প্যারেড করেছে। আর আমরা ছেলেরা মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থেকেছি। পাখি জামার সূত্রতো নিশ্চয়ই সবাই জানেন তবু মনে করিয়ে দেই। ওই সময়ের ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালের খুব মারমার কাটকাট চরিত্র পাখি। মেয়েটা পুরো সিরিয়ালে একটা ডিজাইনের জামাই ব্রান্ডিং করলো। শোকের দৃশ্যে যে ডিজাই আনন্দেও একই ডিজাইন। আবহ অনুযায়ী শুধু রঙ বদলালো। কাজেই পুরো জামার ভালো ব্যবসা হলো কয়েক বছর।

    ব্যবসায়িক স্টাটেজি আমি বুঝি না। কিন্তু মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়ে ব্যবসা করার বিষয়টা আমার কাছে খুব সুখকর মনে হয় না। আমার চিন্তার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের চিন্তা মিলতেই হবে এমন নয়। আর আমার চিন্তার সঙ্গে না মিললে ব্যবসায়ীর চিন্তা ঠিক নয় এমন দাবিও করছি না। আমি বলতে চাচ্ছি আমাদের এই আজকের ব্যবসায়ীরা বুঝতে পেরেছিলেন মানুষ পাখি চরিত্রের জামাটি পছন্দ করতে শুরু করেছ।সুতরাং এই জামার ব্রান্ডিং সিরিয়ালে যতটা করিয়ে নেয়া যায়।
    ফলে দ্রুত বিনিয়োগ হয় সেখানে। অতঃপর দ্রুত সাফল্য।

    আমার ব্যক্তিগত মত এবারও ইন্ডিয়া আউট কাণ্ডের মধ্যে রয়েছে পাখি জামা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ। একসময় যারা ভারতীয় টিভি সিরিজের নকশায় জামা বিক্রি করলো এখন তারা ভারত বিরোধী হয়ে উঠেছে। কারণ এই ব্যাবসায়ীরা বাংলাদেশের মানুষের মনস্তত্ত্ব জানে। এখন একটা হুজুগ তুলতে পারলেই হলো। সামনে ঈদ বাজার ছেয়ে থাকে বিদেশি জামায়। সেই জামার বাজার নষ্ট করতে এমন কৌশল তো সোনায় সোহাগা। অতএব হুজুগ তোলো এবং বিদেশি পণ্য বর্জনের নামে দেশি পণ্যের ব্যবসা কর।

    অথচ এই স্বদেশী পণ্য কেনার আন্দোলন তো আমাদের জাতীয় শ্লোগান। সরকার নিজেও দেশের পণ্য কেনার ব্যাপারে নিয়মিত উৎসাহ দিয়ে যায়। তখন কিন্তু আমাদের এই ভারতবিরোধী বন্ধুদের খোঁজ পাইনি। এখন তারা সরব। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এখন কেন? ঈদের আগে কেন আমাদের স্বদেশ বোধ জাগ্রত। কিছু হলেই ভারত বিরোধিতার বিষয়গুলো সামনে আনা কেন? যদি ভারত বিরোধী রাজনীতি করা ইচ্ছে থাকে করুন। মাঠে নামুন। কিন্তু ব্যবহার করার জন্যে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট সৃষ্টির চেষ্টা কেন? মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলার চেষ্টা কতটুকু নৈতিক।

    আজকের এই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা নামের যে চিন্তাটি ছিল সেটি বিলুপ্ত। কিন্ত আপাত দৃষ্টিতে মাঝে মদ্যে আমরা প্রবল ভারত বিরোধিতা দেখি। বিশেষ করে খেলার মাঠে। এটা কিন্তু বিরোধিতা নয়। এর নাম ট্যাবু। মানে খানিকটা অভ্যেস বা বদঅভ্যেস। এর অর্থ আমি জানি, আমি যা বলছি তা ঠিক নয়, তবু বলতে হয় বলেই বলছি। দাদা বলছে বাবা বলছে তাই বলছি। বিশ্বাস করছি না তবু বলছি। আর বলছি এরকম ইন্ডিয়া আউটের ফাঁদে পড়ে। কখনো ভারত বিরোধী ট্যাবুর সুবিধা নেয়ার জন্যে নিজেই ইন্ডিয়া আউটের মত কোন ফাঁদ পাতছি।

    সব মিলিয়ে ভারত বিরোধিতা বাংলাদেশের বহু মানুষের কাছে অনেকটা ফ্যশন এবং অনেকটা সুবিধাবাদি অস্ত্রের মত। তারা জানে দেশ দখলের ইস্যু আজকাল খায় না। উলু ধ্বনি ইস্যুও বোকা বোকা হয়ে গেছে। ধর্মের ভাগাভাগিও চলে না। তার পরেও যুক্তি তাদের কাছে অচল। তারা এটা করবে, কেন করবে জানে না। তবে আমাদের ব্যবসায়ী বন্ধুরা এটা জানে। তারা সময় মত খুঁচিয়ে ইস্যু জাগ্রত করে দিলে কেল্লাফতে। তাছাড়া সাধারণ মানুষের এই ভারত বিরোধী মনোভাবের সুবিধাভোগী আরেক গোষ্ঠীর রাজনৈতিক চিৎকার যেখানে সস্তায় পাওয়া যায় সেখানে বাজার দখলে এই সুবিধা তারা ছাড়বে কেন?

    সুতরাং আজকের যে ইন্ডিয়া আউট আমরা দেখছি সেটা একটা রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বিত চিন্তার ফসল বলতে পারি। এখন সেই চিন্তা কল্যাণমুখী না বিশেষ শ্রেণির সুবিধামুখী সেই ভাবনা মাঠে ছেড়ে দেই। সবাই ভাবুন। আপনাদের চিন্তার সুবিধার জন্যে এই তারাও ইন্ডিয়া আউটে সমর্থন দিচ্ছে। এটাও আমার কাছে পাখি জামার হুজুগের মত লাগে। কারণ এক সময় তাদের নেতারাও ধর্মের জিগির তুলে ভারত বিরোধী গীত গেয়েছেন। যখন দেখেছে আজকাল কোথাও ধর্ম দিয়ে মানুষ ভাগ করা যাচ্ছে না তখন সুর বদলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর ভারতের প্রতি অভিমান করেছেন তারা। ক্ষোভ কেন নির্বাচন হতে দিল? কেন ২০০১ এর মত একটি নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হলো না?

    আবারও বলছি এটা ২০২৪। আজকাল কিছু লুকানো যায় না। বিশ্ববাসীর কাছে জবাবদিহিতা সবারই আছে। চাইলেই ভারত ব্যখ্যাতিত কিছু করতে পারবে? আর সমর্থনের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে বলতে হবে ভারত আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে কী না সেটা প্রমাণ বা অপ্রমাণের বিষয়। কিন্তু বিএনপিকে যে পছন্দ করে না সেটা বার বার প্রমাণিত। বিএনপি- ভারত সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছে ১০ ট্রাক অস্ত্র। একটি দল একটি দেশের বিদ্রোহীদের জন্যে অস্ত্র পাঠাবে সেই দল আবার পরে তাদের অনুগ্রহ আশা করবে সেটা কী হওয়ার কথা? গায়ের চাদর কেন শরীরের সব বস্ত্র ফেলে দিলেও তো সেই ক্ষোভে কারো অনুগ্রহ জন্মানোর কথা নয়।

    রিজভী সাহেবও যে বিষয়টি জানেন না তা নয়। জানেন, কিন্তু কী করবেন মাঠে তো থাকতে হবে। কিন্তু কী হবে তার রাজনীতি। তাই ভারত বিরোধিতার পুরোনো হুজুগে তাঁকে ফিরতে হলো। তিনিও পাখি জামার অনুকাব্যেই থাকলেন শেষ পর্যন্ত। তাই বলতেই হয় আমাদের ভালো রাজনৈতিক ও অথনৈতিক অনুশীলন যেমন ভারত নির্ভর তেমনি বিরোধী রাজনৈতিক চিন্তার ক্ষেত্রও ভারত নির্ভর। এই সরল সত্যটি বোঝা ছাড়া আমি এই মুহূর্তে কোন রাজনীতি দেখি না।

    লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

    আরও পড়ুন

    ফেনী নদী থেকে উদ্ধার মৃত শ্রমিক আবু বক্কর না প্রনপ দে
    আমরা ফেনীবাসী’র সভাপতি এয়াকুব নবি, সেক্রেটারি একরামুল
    চৌদ্দগ্রামের  উপজেলা চেয়ারম্যান হাসান ভুঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা গ্রেফতার
    ফেনীর পুরাতন জেলগেটের সামনে থেকে গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া গেছে
    সোনাগাজীতে ইমামকে মেরে মসজিদের ক্যাশের চাবি ছিনিয়ে নিলো সন্ত্রাসীরা
    ফুলগাজীতে শ্যালকের ছুরিকাঘাতে ভগ্নিপতির মৃত্যু
    অ্যাডভোকেট সাজু ও অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিনকে কারাগারে প্রেরণ
    তেমুহনী থেকে ডিবির অভিযানে তিন মাদক কারবারি আটক