৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
শিরোনাম
ফেনীতে ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি দাগনভূঞায় দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা ছাগলনাইয়ায় জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন নুরুল করিম মজুমদারের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ অতীত পরিস্কার না হয়ে যদি নতুন করে একটা নির্বাচন হয় এটা হবে নির্বাচনকে গণহত্যা করার শামিল- ডা. শফিকুর রহমান মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব সহ আহত ১৫ জন ফেনীতে ট্রেন-সিএনজি সংঘর্ষে মা ও ছেলে নিহত, আহত-১ দাগনভূঞায় পেশাজীবি পরিষদের সভা আল আমিন নুরানি মাদ্রাসার ৫০ জন শিক্ষার্থী পেল নতুন ব্যাগ জয়নগর পশ্চিম পাড়া উদয়ন সংঘ ক্লাবের বর্ষপূর্তি
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> টপ নিউজ
  • পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ইসলামাবাদের গদি একাই উল্টে দিয়েছিলেন মুজিব
  • পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ইসলামাবাদের গদি একাই উল্টে দিয়েছিলেন মুজিব

    দৈনিক আমার ফেনী

    সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায়

    পাকিস্তান যেন বারবার এগোতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে। কায়েদ-ই-আজম মহম্মদ আলি জিন্না একটি টাইপরাইটারের সাহায্যে পাকিস্তান সৃষ্টি করে গেলেন বটে! তাকে একটি লোককল্যাণমূলক গণতন্ত্র হিসেবে দেখতে তাঁর সদিচ্ছারও বিশেষ অভাব ছিল না। কিন্তু পাকিস্তান তৈরির মাত্র এক বছরের মধ্যেই করাচিতে নিজ বাসভবনে সকাল দশটার কিছু পরে মারা যন তিনি। যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

    জিন্নার চেয়ারে বসার মত অবস্থা অন্তত দ্বিতীয় আর কোনও বড়-মেজ নেতার ছিল না। লিয়াকত আলি খান প্রধানমন্ত্রী হলেন বটে। কিন্তু ১৯৫১ সালে তাঁকেও খুন হয়ে যেতে হয়। তীব্র ক্ষমতার লড়াইতে তারপর আর পাকাপোক্ত গণতন্ত্রটাই তৈরি হতে পারেনি পাকিস্তানে। ফলে দীর্ঘ সামরিক শাসন জারি হয়, ক্ষমতা দখল করেন মার্শাল আয়ুব খান।

    বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের আসর বসে ১৯৭০ সালে। আর প্রথমবার নির্বাচন হতেই পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার রুগ্ন চেহারাটা ফোঁপরা হয়ে বেরিয়ে পড়ে।

    পাকিস্তান তখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে পশ্চিম পাকিস্তান; করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, কোয়েট্টা-সহ পাকিস্তানের রাজনীতি-অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। ভাষাগত দিক দিয়ে এই দিকটাকে বলা হয় উর্দুপ্রধান, যদিও পাকিস্তানে কোনওকালেই উর্দু মাতৃভাষা হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। উর্দু পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ইসলামের ধারক ও বাহক হিসবে অনেকটা কৃত্রিমভাবে আরোপিত। আজও পাকিস্তানের বৃহত্তম ভাষাগোষ্ঠী পঞ্জাবি।

    উল্টোদিকে, বাংলা ও বাঙালির পূর্ব-পাকিস্তান ছিল অনেকটাই অবহেলিত। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া সেই অর্থে বড় শহর নেই। দীর্ঘকাল বাণিজ্যিক ও সামরিক গুরুত্বের পাল্লাতেও চট্টগ্রামের মর্ম বুঝে উঠতে পারেননি পাক কর্তারা। বাঙালি-প্রধান পুব অংশকে খুব একটা উঁচু নজরেও দেখতেন না পশ্চিমের নেতারা। যদিও পূর্ব পাকিস্তান বহু খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীর ধাত্রীভূমি। সেই অবহেলার যুগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল পড়াশোনা, গবেষণা ও মুক্তচিন্তার জন্য বিখ্যাত। বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা সম্মানের সঙ্গে নানা পদে কাজ করতেন। কিন্তু পাক অর্থনীতির সোনালি ধারা চুঁইয়ে পুব অবধি বেশি আসতে পারত না। একাধিকবার ভাষা নিয়েও সংঘাত হয়েছে। প্রতিবাদে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন যার অন্যতম। ফলে তীব্র অসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছিল পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে। জন্ম নিয়েছিল বাঙালি অস্মিতা। যাকে পুরোদমে এক জন-আন্দোলনে রূপায়িত করেন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির অবিসংবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।

    নির্বাচনের এক মাস আগে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলেন প্রকৃতি ঠাকরুন। নভেম্বরের গোড়া থেকেই ভারত-সহ একাধিক দেশের আবহাওয়া দফতরের কাছে ধরা পড়ে, বঙ্গোপসাগরে ধিকি ধিকি তৈরি হচ্ছে এক প্রবল ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু বারবার পাকিস্তানকে সতর্ক করা হলেও অভিযোগ, ইসলামাবাদের কর্তারা কানে তোলেননি। শেষে, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর বিকেল গড়াতে রুদ্রমূর্তিতে কার্যত দানবের মত পূর্ব পাকিস্তান উপকূলে আছড়ে পড়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়। নাম দেওয়া হয়েছিল ভোলা।

    আজও মানব ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় বলে পরিচিত হয়ে রয়েছে এই কুখ্যাত সেই সাইক্লোন! পাকিস্তান সরকারের তরফে এই ঝড় থেকে বাঁচতে কার্যত কিছুই করা হয়নি। ফল হয়েছিল মারাত্মক। ঠিক কত লোক মারা গিয়েছিল, আজও জানা যায় না। শোনা যায়, তিন থেকে পাঁচ লক্ষ লোকের মৃতু হয়েছিল সেই অভিশপ্ত রাতে। মাটিতে মিশে গিয়েছিল উপকূলের একাধিক গ্রাম। পশ্চিমের কর্তাদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ঢাকায়।

    এইরকম আবহাওয়ায় নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা যায়, সমীকরণ সব জট পাকিয়ে গিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিমের চাইতে বিপুল পরিমাণ বেশি। ফলে আসন সংখ্যাও সেখানে বেশি। সেই পুব অংশের মুকুটহীন সম্রাট মুজিবের আওয়ামী লীগ। প্রার্থী দিয়েছিল একশো সত্তরটি আসনে। যার আটটি ছিল পশ্চিমেও। তার ১৬৭ টি আসনে জিতে রেকর্ড গড়ে ফেলে তারা। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি সব মিলিয়ে প্রার্থীই দিয়েছিল ১২০ আসনে। সেখানেও একাধিক মুসলিম লীগ ভেঙে তৈরি হওয়া দলের প্রতিরোধে পড়তে হয় তাদের। ফলে পিপিপি জেতে মাত্র ৮৬-টি আসনে। সব মিলিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ।

    আর এতেই শুরু হয় সমস্যা। এমনিতেই পশ্চিন পাকিস্তানে বাঙালি অধ্যুষিত পুবদিককে খানিক খাটো করে দেখা হত। ফলে নানা কথা বলে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধার সৃষ্টি করেন। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনসাধারণ। সরাসরি পশ্চিমের নেতাদের অবজ্ঞা ও অবহেলার বিরুদ্ধে এবং নিজেদের হকের রাজনৈতিক অধিকারের দাবি জানিয়ে শুরু হয় গণ-আন্দোলন। ঢাকা প্রতিবাদে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অথচ বিন্দুমাত্র আলোচনার পথে না গিয়ে আন্দোলনকে বাগে আনতে ইয়াহিয়া খান এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ করেন। প্রথমে মুজিবকে আলাপ আলোচনায় পরাস্ত করার পরিকল্পনা চলে। সরাসরি যাতে ইন্ধন দেন পিপিপি নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো। তাতে কাজ না হওয়ায় সটান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে উড়িয়ে আনা হয় সশস্ত্র পাক সেনাবাহিনীকে।

    পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে একযোগে অপারেশন চালানোর কথা পরিকল্পনা করা হয়। যার মধ্যে সবার আগে হাতে আনতে হবে ঢাকা শহরকে। বিশেষ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোটা ক্যাম্পাসকে একশো ভাগ সেনা দখলে নিয়ে আসার ছক কষা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকেই শুরু হয় সেনা অভিযান। জারি করা হয় কার্ফু। গোটা ঢাকা শহরের একাধিক জায়গা জুড়ে কার্যত তাণ্ডব চালায় সেনা, চলে নাগাড়ে হত্যা, ধর্ষণ সহ একাধিক যুদ্ধাপরাধের সমতুল অপরাধ। গণহত্যায় বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ছাত্র থেকে কেউ ছাড় পাননি। হিন্দু, বৌদ্ধ-সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরেও নারকীয় অত্যাচার চলে। কার্যত শ্মশান হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

    ঢাকার মার্কিন কনস্যুলেটের তৎকালীন কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি জানান ওয়াশিংটনকে। আবেদন করেন হস্তক্ষেপের। অভিযোগ, ইয়াহিয়া খানের প্রতি সদয় তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন সব শুনেও বড় ধরণের কোনও পদক্ষেপ করেননি। উলটে নিক্সন ও তাঁর সহযোগী হেনরি কিসিঞ্জারের সহানুভূতি আগাগোড়া ছিল পাকিস্তানের প্রতি।

    যার ফলশ্রুতিতে, ১৯৭১ সালের আজকের দিন, অর্থাৎ ২৬ মার্চ ভোরবেলায় পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর জয় আসে ডিসেম্বরে। মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াইতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল ভারতীয় সেনা।

    লেখক: ভারতীয় সাংবাদিক।

    আরও পড়ুন

    ফেনীতে ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি
    দাগনভূঞায় দুর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা
    ছাগলনাইয়ায় জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধন
    নুরুল করিম মজুমদারের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া ও পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ
    অতীত পরিস্কার না হয়ে যদি নতুন করে একটা নির্বাচন হয় এটা হবে নির্বাচনকে গণহত্যা করার শামিল- ডা. শফিকুর রহমান
    মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব সহ আহত ১৫ জন
    ফেনীতে ট্রেন-সিএনজি সংঘর্ষে মা ও ছেলে নিহত, আহত-১
    দাগনভূঞায় পেশাজীবি পরিষদের সভা