নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে রাশিয়া। সেখান থেকে আরও গম আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর বাংলাদেশে ২.৭ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি করেছিল রাশিয়া। এছড়া বাংলাদেশে সার রপ্তানিও বাড়িয়েছে দেশটি। এছাড়া পশ্চিম এশিয়ায় পরিশোধিত করার পর বাংলাদেশ বর্তমানে রাশিয়ার তেল আমদানি করছে। এছাড়া রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে জড়িত।
রাশিয়ার আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের মধ্যেই প্লান্টের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে জোর আশা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের প্রায় ৮৫% কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ওই স্থাপনার জন্য মস্কো ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে।
রাশিয়ান বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকও আমদানি করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন রুশ কূটনীতিকরা। রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ২০২২ সাল থেকে রাশিয়া ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় বাংলাদেশসহ ব্যবসার নতুন উৎস খুঁজছে রাশিয়া। এখানে রাষ্ট্রীয় এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন আলেকজান্ডার মানটিটস্কি। তিনি আরো বলেন, রাশিয়ার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সাথে আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, স্পেস টেকনোলজি, জিওলজিক্যাল সার্ভে, মেরিটাইম, রেলওয়ে এবং এয়ার ট্রান্সপোর্টেশনে যৌথ উদ্যোগ নিতে প্রস্তুত।
ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়া আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে বাদ পড়ে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পেমেন্ট সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানে বিকল্প না থাকায় রাশিয়ার পক্ষে অন্যান্য দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে, ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাঙ্ক পেমেন্ট সিস্টেম নামক পেমেন্ট সিস্টেমে রাশিয়াকে যুক্ত করে চীন। সিআইপিএস সিস্টেমটি এখন অন্যান্য দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেলে পরিণত হয়েছে।
গত মাসে বাংলাদেশের পেমেন্ট সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে চীনের মুদ্রা ইউয়ান। রিয়েল-টাইম গ্রস সিস্টেমভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় ক্লিয়ারিংয়ে এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে, বাংলাদেশের জন্য সিআইপিএস-এর সাথে সংযুক্ত হওয়া সহজ হবে বলে মনে করছেন রাশিয়ান পর্যবেক্ষক এবং বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাশিয়ার অংশগ্রহণ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন তারা।
রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সের ইন্সটিটিউট অফ ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো আলেক্সি জাখারভ জানিয়েছেন, চীনের সম্পৃক্ততা ছাড়া রাশিয়ার পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার সাথে তার আর্থিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার কৃষি বা জ্বালানি নিয়ে লেনদেনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সিআইপিএস-এর মাধ্যমে চলে। চীনের আর্থিক অবকাঠামোর বর্ধিত ব্যবহার এখন রাশিয়ান অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলোর লাইফলাইন হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন আলেক্সি জাখারভ।
কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিআইএস-বিসিসিআই) অনারারি উপদেষ্টা মাহবুব ইসলাম রুনু বলেন, ‘সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল ব্যবসায়িক সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির সাথে বাংলাদেশের সরাসরি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে চীন বা ভারত এখানে বাংলাদেশের সহযোগী হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। বাংলাদেশে শাখা স্থাপনের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করার সুযোগ তৈরি করতে মস্কোতে চীনা ও ভারতীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।