জমির বেগ
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে বিএনপিসহ বিভিন্ন মহল কানঘুষা করছে। কেউ বলছে ৪১.৮ শতাংশ ভোট মানে ভোট নয়। জনগন ভোটকে তথা আওয়ামী লীগকে বর্জন করেছে। কেউ আবার বলছেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয়পার্টিসহ নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর ভোট ৪২ শতাংশ ঠিক আছে। বাকী ভোটগুলো বিএনপি জামায়াতের। কেউ বলছেন ভোটে অনিয়ম হয়েছে, বেশি ভোট দেখানো হয়েছে। কেউ বলছে বাস্তবে এতো শতাংশ ভোট পড়েনি। নির্বাচন কমিশন মিথ্যে তথ্য দিয়েছে।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের তথ্য শতভাগ সত্য। কেউ চ্যালেঞ্জ গ্রহন করলে করতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। ভোটার সংখ্যা তার ৭০ শতাংশ।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক যুগ্ন সচিব এস এম আসাদুজ্জামান জানান, দেশের মোট ভোটারের মদ্যে কোটি ৪া লাখ ৪৫ হাজার ৭২৪জন পুরুষ, কোটি ৮৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ জন নারী ও ৮৩৭ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে।
এ বছর নতুন ভোটর হয়েছে ৮০ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫৯জন। ভোটার বেড়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ। বিদ্যমান ভোটার তালিকা থেকে মৃত্যু, দ্বৈত নাগরিক্তসহ নানা কারনে বাদ দেয়া হয়েছে ২২ লাখ ৯ হাজার ১২৯ জনকে। সে হিসেবে নতুন ভোটার বেড়েছে ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৩০জন।
মদ্দা কথায় আসি। দেশের প্রতিটি নাগরিকের পক্ষে কী ভোট দেয়া সম্ভব? এক কথায় না। নির্বাচনী এলাকার সব ভোটার ভোট দেয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। দেশে কিছুতেই ৭০ শতাংশ ভোটার ও ভোট দেয়া সম্ভব নয়।
কারন আমাদের দেশের মোট ভোটারের মধ্যে ১ কোটি ২৭ লাখ ভোটার থাকেন বা রয়েছেন বিদেশ। যা দেশের মোট ভোটারের ১০ শতাংশ। ১৫ শতাংশ ভোটার তাদের ঠিকানা পাল্টিয়ে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। মানে তারা যখন ভোটার হয়েছিলেন তারা বর্তমানে তাদের সেই ঠিকানায় নেই। তাদের গন্তব্য বর্তমানে অন্য জায়গায়। এছাড়া দেশে যে ভোট হয়েছে সে ভোট সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ছিলেন প্রায় ৬৬ লাখ মানুষ বা ভোটার। তাদের পক্ষেও কিছুতেই ভোট দেয়া সম্ভব নয়। সে পরিসংখ্যানে দেশে ৩১-৩২ শতাংশ ভোটারের পক্ষে কিছুতেই ভোট দেয়া সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত আসি ভোটের উপস্থিতি মাত্র ৪১.৮%, তাহলে নির্বাচন গ্রহণ যোগ্য হবে কিনা। আমরা যদি বিগত ৫ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচনের দিকে তাকাই তবে তার উত্তর আমরা পেয়ে যাবো। বিগত ৫ বছরের কিছু দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেখি যে, তিউনিশিয়ার নির্বাচনে ভোট পড়েছে ১১.২২%, লেসোথো ৩৭.৪৪%, বার্বাডোস ৪১.৭৩%, এঙ্গোলা ৪৪%, রোমানিয়া ৩১.৮৪%, হংকং ৩০%, বুলগেরিয়া ৩৭.৯৮%, আয়ারল্যান্ড ৪৩.৮৭%, পর্তুগালে ৩৯.২৪% ভোট পড়েছে। আর যদি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দিকেও দেখি তবে আমরা দেখবো তাদের সর্বশেষ নির্বাচনের ভোট রেশিও ৪৯-৫৪%। আর বাংলাদেশে একটি বড় দল নির্বাচনে আসেনি , তা সত্ত্বেও এই ভোটের সংখ্যা খুবই সন্তোষজনক।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় লাভের পর শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। গণভবনে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়া, চীন, ভারত, সৌদি আরব, জাপান, কাতার, ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, মিসর, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, ফিলিস্তিন, ভুটান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়াসহ এখন পর্যন্ত ২৬ দেশের রাষ্ট্রদূত সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং অভিনন্দন ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ভোট যদি গ্রহনযোগ্য না হতো তাহলে তারা কিছুতেই অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাতেন না।