বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের জনগণ আগামী রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন। এ উপলক্ষে দেশি বিদেশি পত্রিকায় নানা ধরনের মতামত ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল বাইডেনের ডেমোক্রেসি প্রমোশন এর সীমাবদ্ধতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ শিরোনামে মতামত লিখেছেন সদানন্দ ধুমে।
তিনি লিখেছেন, বিএনপিস নির্বাচন বয়কটের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতা হিসেবে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হতে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার বিজয় প্রেসিডেন্ট বাইডেনেরও পরাজয়, যিনি গণতন্ত্রকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার প্রচেষ্টায় ছিলেন বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে।
৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা, যিনি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী নির্বাচিত যে কোনো নারী নেত্রীর চেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে একটি চমকপ্রদ কূটাভাস (প্যারাডক্স) উপস্থাপন করেছেন। তিনি মৌলবাদী শক্তিকে দমন করেছেন এবং তার দেশকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছেন- যা অনেক উন্নয়নশীল দেশের নেতৃবৃন্দ দেখাতে পারেননি।
তিনি লিখেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাইডেনের প্রশাসনের তুলনা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে হোয়াইট হাউজ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিরোধীদলগুলোকে গণগ্রেফতারের দায়ে শেখ হাসিনার সরকারকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনা এসব প্রচেষ্টায় বেকে বসেছেন এবং বিরোধী দল বা সুশীল সমাজের জন্য আরও জায়গা তৈরি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
লেখক মনে করেন, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে, শেখ হাসিনার দুর্বলতা যাই হোক না কেন, তার বিকল্পটি আরও খারাপ। সর্বশেষ বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়েছিল এবং যারা ভারতকে টার্গেট করেছিল সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিয়েছিল । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অবর্ণনীয় নৃশংসতার জন্য দায়ী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে জোটবদ্ধ ছিল। ভারতীয়রা আরেকটি বিএনপি সরকারের ওপর ঝুঁকি নিতে রাজি নয়।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা স্পষ্ট, কারণ তাত্ত্বিকভাবে দেশটি বাইডেনের মূল্যবোধ-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি আদর্শ পরীক্ষার ক্ষেত্র ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হলেও অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে এর গণতান্ত্রিক শেকড় গভীর। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে, বাংলাদেশ নির্বাচনের পাশাপাশি একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং মুক্ত গণমাধ্যমের মতো উদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশের অনেক নেতৃস্থানীয় সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী পাশ্চাত্যে শিক্ষিত ছিলেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশটিতে একটি বিরোধী দল বিএনপি ছিল, যারা আওয়ামী লীগের সাথে ক্ষমতা রদবদল করার জন্য যথেষ্ট জোরালো ছিল।
হোয়াইট হাউজের জানা উচিত ছিল, তাদের বুঝা উচিত ছিল যে, আওয়ামী লীগ এমন একটা দল যারা ইসলামাবাদের সাথে মার্কিন সমর্থন থাকার পরেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন করতে ভূমিকা রেখেছিল। রাশিয়া, চীন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভারতসহ সমর্থকদের একটি অপ্রত্যাশিত জোট গঠনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মার্কিন চাপ মোকাবিলা করেছেন, যেখানে তাকে একটি অস্থিতিশীল দেশে স্থিতিশীলতার রক্ষাকবচ হিসাবে দেখা হয়।
লেখক দাবি করেন, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি হাই-প্রোফাইল সামিট ফর ডেমোক্রেসি থেকে বাংলাদেশকে বাদ দিলেও খারাপ রেকর্ড রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। গত বছর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচনকে দুর্বল করার জন্য দায়ী বা জড়িত হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলেছিল।