৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • টপ নিউজ >> মতামত
  • নির্বাচনী গুজব রুখবে কে? কেন?
  • নির্বাচনী গুজব রুখবে কে? কেন?

    দৈনিক আমার ফেনী

    পলাশ আহসান

    একটা ভালো খবর দিয়ে আজকের লেখা শুরু করি। এবারের জাতীয় নির্বাচনে গুজব ও মিথ্যা ছড়াতে দেবে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সম্প্রতি তাদের একটি কর্তৃপক্ষ এমন ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচন সংক্রান্ত মিথ্যা কিংবা উসকানিমূলক তথ্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ৪০ হাজার কর্মী। আর টিকটক একক ভাবে বলছে, তারা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নির্বাচনের ঠিকঠাক তথ্য জানাতে ‘বাংলাদেশ ইলেকশন সেন্টার’ নামে হাব খুলবে।

    সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কাজটি না হওয়া পর্যন্ত আমি পুরোপুরি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছি না। আপাতত শুধু খুশি হচ্ছি। কারণ সারাদেশের গুজব ছড়ানোর পরিস্থিতি এমন যায়গায় এখনও দেখছি, সেখান থেকে একটি ঘোষণায় গুজববাজরা পাততাড়ি গুটিয়ে পালাবে, এমন ভাবতে পারছি না। আমরা যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা চিহ্নিত করার বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান রিউমার স্কানারের সবশেষ রিপের্টটাও দেখি, সেখানেও বলা হচ্ছে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমশ বাড়ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানোর হার।

    রিউমার স্কানার বলছে, নির্বাচন ঘিরে গত তিন মাসে সর্বোচ্চ ৫৬টি গুজব ছড়ানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে। এতে ব্যবহার হয়েছে ফেসবুক ও ইউটিউব। শেখ হাসিনাকে নিয়ে জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ নিয়ে ২৪টি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে ১৮টি, কূটনীতিক, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠন নিয়ে ১৭টি গুজব চিহ্নিত হয়েছে। তারা বলছে, মোট রাজনৈতিক গুজবের ৮৩.৭০ শতাংশ জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক। পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঘোষণা আমার উচ্ছ্বসিত না হওয়ার কারণ।

    এতো গেলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব। নির্বাচন যত কাছে আসছে হাটে মাঠে ঘাটে গুজবীদের তৎপরতা তত বাড়ছে। এই গুজবের ধারা অবশ্য আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতিতে অনেক পুরোনো। রাস্তায়, চায়ের আড্ডায়, গণপরিবহনে মুখেমুখে ছড়ায় এসব গুজব। একেক যায়গায় একেক রকমের গুজব। এর তালিকায় থাকে প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত জীবন যাপন থেকে শুরু করে পেশাগত জীবনের নানা অপব্যাখ্যা। এক্ষেত্রে ধর্মের অপব্যবহারও খুব জনপ্রিয়।

    যেমন এবারের নির্বাচনের আগে সবচেয়ে আলোচিত গুজব হচ্ছে ‘নির্বাচন হচ্ছে না’। সাংবাদিক হিসাবে যারা চেনেন, তাদের অনেকেই জিজ্ঞেস করেন ভোট কী আসলেই হচ্ছে? কেন এরকম প্রশ্ন? আমি পাল্টা প্রশ্ন করলে বলেন, সেদিন ওমুকের কাছে শুনছিলাম অথবা ফসেবুকে দেখলাম, ওমুক বিদেশ থেকে ফিরে নির্বাচন বন্ধ করে দেবে। কী বলবো? হয়তো বলি নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার এখতিয়ার শুধু আছে নির্বাচন কমিশনের। তাকে ফলো করুণ। এরচেয়ে আর কী বা বলার আছে আমার। কিন্তু বুঝতে পারি উত্তরে তিনি খুশি হলেন না।

    আমি জানি না। আর কী গুজব আসতে পারে। যেহেতু এবার গুজবী ভাইদের লক্ষ্য সরকারের বিরোধিতা। সেহেতু তারা চাইতে পারেন, মানুষকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দিতে। আমাদের প্রচলিত গুজব ছড়ানো দেখার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু ধারণা করা যায়। যেমন ধরা যাক, কোন এলাকায় যেখানে ভোটেকেন্দ্র, এর থেকে কিছু দূরে গিয়ে কেউ একজন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে বলে আসলো, ওমুক ভাই তোমাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন ভোট দিতে না গেলেই তিনি ভোট পেয়ে যাবেন।

    এসব সবচেয়ে বেশি হয়, নির্বাচনের আগের রাতে। চারাদিকে শুনবেন প্রচুর টাকা নিয়ে নেমেছেন ওমুক প্রার্থী। দুই হাতে বিলাচ্ছে। অথবা ওমুক পার্থীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। অথবা অমুক প্রার্থীর ওপর ওমুক প্রার্থীর লোকজন হামলা করেছে। অথবা ভোটের দিন খবর আসবে, ওমুক কেন্দ্রর ভোট দেয়া শেষ। যিনি যাচ্ছেন তাকে রিটানিং কর্মকর্তারা বলে দিচ্ছেন ‘আপনার ভোট নেই’। এরকম যেকোন একটি গুজব মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারলেই কেল্লাফতে।

    আমি বলছি না যে, ভোটের সময় এসব ঘটনা ঘটে না। ঘটে হয়তো কয়েকটা। কিন্তু গল্প আসে হজার হাজার। এই হাজার হাজারগুলোই গুজব। দুঃখজনক হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ এই গুজব বিশ্বাস করে এবং একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তারা একসময় সত্যটা জানতে পারে হয়তো। কিন্তু ততক্ষণে হয়তো বিকেল চারটা বেজে গেছে। ভোটের সময় শেষ। সত্য জেনে তখন আর কোন লাভ নেই। গুজববাজের উদ্দেশ্য সফল। একজন যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনে হেরে গেছেন। তার চেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য হচ্ছে একজন খারাপ লোক নেতা হয়ে গেছে। একটা সুষ্ঠু আয়োজন অযাথাই পণ্ড হয়েছে।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন গুজব হয়? খুব সহজ উত্তর আছে আমার কাছে। গুজব হয় দুষ্টু লোকের পক্ষে। আসলে কোন সৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্যে গুজব ছড়ানোর দরকার হয় না। কিম্বা কোন সভ্য গোষ্ঠী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গুজব ছড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে না। সত্যের এই পথ ধরে এগিয়ে আমরা বলতে পারি, যারা নির্বাচন বানচাল করতে গুজব ছড়াচ্ছে অথবা ছড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যেও সৎ নয়। নির্বাচনের বিপক্ষে জনমত গঠনের জন্যে লিফলেট বিতরণ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু গুজব ছড়িয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টার মত মিথ্যাচারের পক্ষে তো থাকা উচিত না। বরং যে দাবি পূরণে মিথ্যাচার করতে হয় সেই দাবির যৌক্তিকতা নিয়েই তো প্রশ্ন ওঠে।

    যাই হোক, প্রথমবারের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গুজব বিরোধী প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথার লেখার শুরুতে বলেছি। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল্ও গুজবে কান না দিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি আইনশৃংখলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও ভোটারদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে। আমাদের শসস্ত্র বাহিনীও মাঠে নেমেছে। সুতরাং নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে কোন রকম শঙ্কা থাকার কথা নয়।

    সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধ নিয়ে আমার আরেকট লেখায় মন্তব্য করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক আহমেদ নূরে আলম। দীর্ঘ ৪০ বছর বাংলাদেশের মাঠে ঘাটে রিপোর্ট করেছেন তিনি। সেখানে তিনি লেখেন, বাংলাদেশে অসত্য, গুজব এবং অপপ্রচারের এখন যে চিত্র তা বিশুদ্ধ গণতন্ত্র চর্চার দাবিদার আমেরিকায় হরহামেশাই চলছে। সেখানে অপ্রচারের জন্যে রীতিমত রেজির্স্টাড লবিস্ট ও এজেন্ট নিয়োগ করা হয়। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে সেদেশের আদালতও এর কমবেশি প্রশ্রয় দেয়।

    নূরে আলম ভাই যে এই অপতৎপরতা সমর্থন করছেন এমন কিন্তু নয়। তিনি প্রায় পনেরো বছর আগে আমেরিকায় গিয়ে এসব দেখে বিস্মিত হওয়ার কথা বলেন মন্তেব্যের শুরুতে। তিনি মনে করেন, আইন করে এসব পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। মাঠে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি যে মন্তব্য করলেন, এর সঙ্গে দ্বিমত করার কোন যুক্তি আসলেই নেই।

    তাহলে উপায় কী? আমাদের সব সত্য কী গুজবের বেড়াজালে আটকে যাবে? সেটাও তো ভাবতে পারছি না। এই মুহূর্তে শুধু ভোটারদের কথা মনে হচ্ছে। এটা অনেকটা অন্ধকার ট্যানেলের শেষ প্রান্তে এক বিন্দু আলোর মত বলতে পারেন। যে আলোর নাম ভোটার। কারণ তিনিই গণতন্ত্রের প্রধান রক্ষক। তাই তাকেই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। কেউ কিছু বললেই বিশ্বাস না করে, নিজের চোখে দেখে, নিজের যুক্তি দিয়ে নিশ্চিত হয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখা দরকার এমন সিদ্ধান্ত যেন না নেন, যার জন্যে পরে মনস্তাপ করতে হয়।
    লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

    আরও পড়ুন

    চলে গেলেন সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার
    নগদ প্রণোদনা চেয়ে বিসিক মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন
    জাতীয়তাবাদী ওলামাদলের মতবিনিময় সভা
    আজকের তরুণরাই হচ্ছে আগামী দিনের স্টার- জেলা প্রশাসক
    মাতুভূঞায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
    ফেনীতে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত
    ইসলামী আন্দোলনের আমীর গণ বিপ্লবের মহানায়ক ছিলেন: মাও. জাফরী
    কোম্পানীগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে ছুরিকাঘাত, আহত-৪