জমির বেগ
প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সাইবার দুর্বৃত্তদের হয়রানি ভয়ঙ্ক রুপ নিয়েছে। নিয়ন্ত্রহীন হয়ে পড়েছে সাইবার অপরাধ। দিন দিন এসব সাইবার অপরাধ বেড়েই চলছে। গোয়েবলেসকে হার মানিয়েছে বাংলাদেশের কিছু বুদ্ধিজীবী ও প্রোপাগান্ডা চালনাকারীরা।
জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত তিন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে ৫৬টি গুজব ছড়ানো হয়েছে। আর এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম। যদিও এ প্রতিষ্ঠান দুটি নির্বাচনি গুজব ঠেকাতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিল। সূত্রে জানা যায়, বিশে^র প্রথম সারির কয়েকটি দেশের সন্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বাংলাদেশে ফেসবুক অ্যাকাউন্টধারীরা অনেক বেশি সক্রিয়। আমাদের দেশের মানু ভুয়া কনটেন ও ভুয়া নিউজ লুফে নিচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। যে হারে দেশে সাইবার অপরাধ বাড়ছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারছে না কর্তৃৃপক্ষ।
রিউমর স্ক্যানার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের মাসভিত্তিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংখ্যার দিক থেকে ডিসেম্বরে ২১৫টি, নভেম্বরে ১৭৫টি, অক্টোবরে ২১০টিসহ মোট ৬০০টি গুজবের ঘটনা চিহ্নিত করা গেছে।
যদিও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গত ডিসেম্বরে জানায়, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচন সংক্রান্ত মিথ্যা কিংবা উসকানিমূলক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে তাদের ৪০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট যেকোনও তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২৮ নভেম্বর বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে পলিসি ঘোষণা করে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। বিটিআরসি বলছে, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ফেসবুক, টিকটক ও গুগলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে সাড়া দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ২৪টি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে নিয়ে ১৮টি, কূটনীতিক, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে উদ্ধৃত করে ১৭টি গুজব চিহ্নিত করেছে রিউমর স্ক্যানার। মোট রাজনৈতিক গুজবের ৮৩.৭০ শতাংশ জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক।
অক্টোবরে রাজনীতি বিষয়ক ৮৪টি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন তৈরি করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে নির্বাচনকে জড়িয়ে ছিল ৬৫টি। নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির রাজনীতি বিষয়ক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন ৭৬টি। এর মধ্যে নির্বাচনকে জড়িয়ে ছিল ৬৬টি। সর্বশেষ ডিসেম্বরে তাদের রাজনীতি বিষয়ক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন ১১০টি। এর মধ্যে নির্বাচনকে জড়িয়ে ছিল ৯৫টি।
রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র গত তিন মাসে সর্বোচ্চ ৫৬টি গুজব ছড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে। এর বিপরীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে ৭টি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে জড়িয়ে ৬টি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়ে ৪টি, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরকে নিয়ে ৪টি, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে নিয়ে ৩টি করে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে ৩টি গুজব ছড়ানো হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের হেড অব অপারেশন্স সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বেড়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজবের সংখ্যা। বছরের শেষ তিন মাসে ইন্টারনেটে রাজনৈতিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানো হয়েছে ফেসবুক ও ইউটিউবে ভুয়া শিরোনাম ও থাম্বনেইল সংবলিত ভিডিও এবং গণমাধ্যমের আদলে তৈরি ভুয়া ফটোকার্ডের মাধ্যমে। অক্টোবর মাসে ভুয়া ফটোকার্ডের আধিক্য থাকলেও ডিসেম্বর মাসে এসে ভুয়া শিরোনাম ও থাম্বনেইল সংবলিত ভিডিও’র আধিক্য পরিলক্ষিত হয়েছে।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুক. হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের এর মূল প্রতিষ্ঠান মেটার সঙ্গে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত কোন চুক্তি নেই। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত তাদের সাথে চুক্তি (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রিটি-এমলেট) করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত সরকার নিয়ন্ত্রনে আনতে পারেনি ভুয়া নিবন্ধিত মোবাইল সিম। এখনও ডাটাবেজের আওতার বাইরে রয়ে গেছে অনেক পুরনো মোবাইল হ্যান্ডসেট।
এদিকে সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় স্বয়ং প্রশানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি অপপ্রচার ও ভুল তথ্যের শিকার হয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তাগাদা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু লোক আছে অপরাধ করে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে. তারা দেশের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। তাদর বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
সাধারনত সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন শাখা ফেসবুক, ইউটিউব, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, টিকটিক, বিগো, লাইকি ব্যবহার করে সাইবার ক্রাইম করা হলেও ফেনীতে বেশির ভাগ ক্রাইম করা হচ্ছে ইউটিউব ও ফেসবুকের মাধ্যমে। সাইবার ক্রাইমাররা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা টাকা হাতানোর উদ্দেশ্যে সাধারত কনটেন তৈরী করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে থাকলেও ফেনীতে এক শ্রেণির সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইমার আছেন তারা তাদের ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক ও পেইজে ভিডিও ছেড়ে জনগনের সাথে প্রতারণা করছে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ হানাহানির সময়তো তাদের পোয়া বারো। শুরু করে লাইভ দেখানো। তারা শুধু লাইভ করেন না দিচ্ছেন ভয়েজ, মতামত ও পরামর্শও। এ লাইভের মাধ্যমেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও রাজনৈতিক হাঙ্গামাকে উস্কে দেয়া হচ্ছে বলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব গুজবকারীদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন তারা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তাদের উস্কানির কারনে দাঙ্গা হাঙ্গামা বেধে যাওয়ারও সমূহ আশংকা রয়েছে।
বিআরটির তথ্যমতে বাংলাদেশে ৭ কোটির বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী রয়েছে। মেটার বরাত দিয়ে বাংলাদেশের একটি সংস্থা জানিয়েছেন বাংলাদেশে ১১ কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রয়েছে। যা বিশে^র প্রথম সারির কয়েকটি দেশের সন্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি।