ড. সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর
উজ্জ্বল ভবিষ্যত এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের দেশ বাংলাদেশ এখন তার রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে। এর একদিকে রয়েছে বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের ক্রমাগত অগ্রগতি, উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির অনুশীলন। অন্যদিকে সেই অনুশীলনে অর্জিত অভাবনীয় সাফল্যের স্থায়ী রূপান্তর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ উদ্ভাবনী প্রকল্পে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, যা দেশের গতিপথকে গভীরভাবে বদলে দিয়েছে। তাই দিন বদলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আবারও দরকার হচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। কিন্তু কেন? সেই উত্তর পেতে দরকার, বর্তমান সরকারের অগ্রগতির খাতওয়ারি বিশ্লেষণ। নিচে সেরকম কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।
১. অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা:
উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকার: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অগ্রগতির স্তম্ভ হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ক্রমাগত গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের জন্য সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উত্সাহিত করে এমন উদ্যোগ এবং নীতিগুলো কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতে যুক্ত করেছে। ফলে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ বেড়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু, মনোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন লাইনের কথা উল্লেখযোগ্য। এসব অবকাঠমোর সুবিধা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট নতুন রূপ পেয়েছে। যেমন পদ্মাসেতু আমাদের ব্যবসা ও বাণিজ্যে যোগাযোগ দ্রুততর করেছে। সহজ করেছে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভ্রমণ।
আরেকটি চমকপ্রদ প্রকল্পের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। সেটি হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। জ্বালানিখাতে বাংলাদেশ এরকম আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। এসব নির্মাণ আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি প্রস্তর শক্ত করেছে।
২. সমাজকল্যাণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা:
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন: সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচিগুলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ ডিজিটাল সোসাইটি ফর ইকুয়ালিটি: শেখ হাসিনার নির্দেশে একটি ঐতিহাসিক প্রকল্প হচ্ছে উদ্ভাবনী ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি। প্রযুক্তির ব্যবহার করে সরকার কার্যকরভাবে শহুরে এবং গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে এনছে। এমনকি সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অঞ্চলেও ডিজিটাইজেশনের সুবিধা পৌঁছেছে। সব শ্রেণি পেশার মানুষকে প্রয়োজনীয় পরিষেবা, জ্ঞান এবং শিক্ষাখাতে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখিয়েছে। এখানে শিশু শিক্ষার আধুনিক পদ্ধতিগুলো জনপ্রিয় হয়েছে। সর্বোপরি বাংলাদেশ যাত্রা করেছে মানব সম্পদ উন্নয়নের মহাসড়কে।
৩. নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা:
নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের একটি বিশেষ সাফল্য। রাজনৈতিক, শিক্ষা ও পেশাগত ক্ষেত্রে নারীদের পুরোপুরি অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আওয়ামী লীগ সরকার সমন্বিত ভাবে কাজ করেছে। সরকার এমন একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছে যেখানে নারীরা দেশের অগ্রগতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারেন।
লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা নিষিদ্ধ করণ আইন: নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং সহিংসতা প্রতিরোধে আইনের যথাযত প্রয়োগ নিশ্চিত করাটা ছিল জরুরি। তাই সরকার সবার আগে নারীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে। ফলে হয়রানি ও গার্হস্থ্য নির্যাতনের মতো সমস্যা সমাধানে এগিয়ে গেছে গোটা দেশে।
সরকার এখন চেষ্টা করছে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে। তাই শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নারীদের রাজনীতিতে প্রবেশ এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করে ন্যায়সঙ্গত ও অগ্রসর সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছেন। তার নির্দেশে নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এখন এমন একটি সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠিত হলো যেখানে নারী অপরিহার্য।
৪. কূটনৈতিক দক্ষতা এবং বৈশ্বিক অবস্থান:
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন করাই ছিল সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, বাণিজ্য চুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। এখন বাংলাদেশকে বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক নেতৃত্ব: শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ যেভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুর মোকাবেলা করেছে তা অসাধারণ কূটনৈতিক দক্ষতার প্রকাশ। মিয়ানমারের নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের প্রতি বাংলাদেশ অভাবনীয় মানবিকতা দেখিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি এই আচরণের জন্যে আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়। কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক সংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক উদ্বেগ মোকাবেলায় বড় ভূমিকা পালন করেছে।
৫. কার্যকর প্রশাসন ও দুর্নীতি বিরোধী ব্যবস্থা:
দুর্নীতি বিরোধী উদ্যোগ: শক্তিশালী দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ এবং দক্ষ শাসনের প্রতি শেখ হাসিনার শাসন ব্যবস্থার অন্যতম দিক। আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, কারণ তারা দেশের অগ্রগতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব বুঝতে পারে আগেই।
উন্মুক্ত ও জবাবদিহিমূলক শাসন: আওয়ামী লীগ প্রশাসনে উন্মুক্ত ও জবাবদিহিমূলক হওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ফলে জনগণ তাদের সরকার কীভাবে পরিচালিত হয় সে সম্পর্কে তথ্য পায়। শেখ হাসিনার প্রশাসন সরকারি সেবা ডিজিটাইজেশন এবং ই-গভর্নেন্স বিকাশের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে পদ্ধতিগুলো শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছে। যে কারণে দুর্নীতি কমে গেছে।
৬. জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন :
পরিবেশগত স্থিতিশীলতা: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রতি বাংলাদেশের সব সময় সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে। শেখ হাসিনার সরকার এই বিষয়গুলো মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার পরিবেশগত স্থিতিশীলতার জোরালো সমর্থক । তাই তারা পরিবেশগত দায়বদ্ধতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০: জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি বড় প্রকল্প। অবকাঠামো উন্নয়ন, কমিউনিটি স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য। সরকার এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায় যা জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে স্থিতিস্থাপক এবং পরিবর্তিত পরিবেশগত অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাই এটি ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসের উন্নয়ন করছে ও কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনছে। টেকসই উন্নয়নের প্রতি উত্সর্গ সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মতো প্রকল্পগুলো সামনে আসছে।
৭. খেলাধুলায় উন্নয়ন ও অর্জন:
ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রীড়া খাত উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে গেছে । একটি শক্তিশালী ক্রীড়া সংস্কৃতি বিকাশের জন্য অ্যাথলেটিক দক্ষতা বিকাশ, শারীরিক ফিটনেস উত্সাহিত করা এবং আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে জাতিকে তুলে ধরার জন্যে কাজ করেছে সরকার।
ক্রীড়া অবকাঠামোতে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ খেলাধুলার প্রবৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। আধুনিক স্টেডিয়াম এবং সুবিধাগুলো সারাদেশে নির্মিত এবং সংস্কার করা হয়েছে। খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশেই আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার।
ব্যাপক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও নগদ প্রণোদনা দিয়ে সরকার ক্রীড়াবিদদের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ক্রীড়াবিদ কল্যাণ তহবিলের মতো কর্মসূচি ক্রীড়াবিদদের কল্যাণে জাতির অঙ্গীকারকে তুলে ধরে। পাশাপাশি তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং জাতীয় সেবার প্রতি সম্মান জানায়।
ক্রিকেটের মত জনপ্রিয় খেলায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয় ক্রিকেট দল বড় মাইলফলক অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আগ্রাসী ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত দেশগুলোর বিপক্ষে বিজয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অসামান্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট আন্তর্জাতিক মনোযোগ অর্জন করেছে । একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে গৌরব ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
এছাড়াও, সরকার অন্যান্য বেশ কয়েকটি খেলার পৃষ্ঠপোশকতা করে সামনে এগিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, তীরন্দাজি, ভারোত্তোলন এবং শুটিংয়ের মতো খেলা। এর ক্রীড়াবিদরা আন্তর্জাতিক ইভেন্টগুলিতে পদক জিতেছেন নিয়মিত। শেখ হাসিনার প্রশাসন ঐক্য, জাতীয় উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং বিনোদনের উৎস হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অনুকূল চিত্র উপস্থাপনের কাজ করছে।
সব শেষে বলা যায়, শেখ হাসিনার প্রাণবন্ত নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দলটি সামাজিক কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক সাফল্য এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বে অনেক অর্জন । তাই সুযোগ ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার কথা ভাবছেন বহু মানুষ। কারণ শেখ হাসিনা অতীতে সুশাসন দেখিয়েছেন এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়েছেন।
লেখক: নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন।