মোতাহের হোসেন ইমরান
সোনাগাজী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) অফিসের কার্য সহকারি মো. আব্দুল কাদের একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রক্ষক হয়ে যখন ভক্ষকের কাজ করে সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে- জনমনে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠছে, অফিসের পুরনো কর্মচারী হওয়ায় প্রভাব দেখিয়ে নানা অনিয়ম এবং কাজের হাসিল করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল কাদের প্রকাশ মানিক এর দুর্নীতির কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় ও পেশাদার ঠিকাদারদের। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির পন্থা অবলম্বন করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ আব্দুল কাদের এর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে ঠিকাদারি কাজে জড়িত হয়ে মেতে উঠেছে রমরমা ব্যবসা-বানিজ্যে। সোনাগাজী উপজেলা এলজিইডি অফিসে দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত থাকায় সব কাজের স্বেচ্ছাচারিতা করে চলছে। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পেশাদার ঠিকাদারগণ তার কাছে জিম্মি। সোনাগাজী উপজেলা থেকে কার্য সহকারি আব্দুল কাদের এর অপসারণের দাবী জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।
অভিযোগ রয়েছে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন প্রকৌশলীর সাথে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। এর সুবাধে বিভিন্ন সুবিধা গ্রহন করেন। একজন কার্য সহকারীর কাজ হচ্ছে সহকারী প্রকৌশলীকে সকল কাজে সহযোগিতা করা। অথচ আব্দুল কাদের কার্য সহকারী হলেও প্রকৌশলীকে বাদ দিয়ে নিজেই বিভিন্ন কাজের এষ্টিমেট তৈরি করে থাকেন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, আব্দুল কাদের ‘হক ট্রেডার্স’ নামের লাইসেন্স এর মাধ্যমে ঠিকাদারি করে থাকেন। তিনি নিজেকে আড়ালে রেখে তার সহযোগী ঠিকাদার সালেহ আহম্মদ এর মাধ্যমে কাজগুলো করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে যেসকল সড়ক বা ভবন এর কাজ আব্দুল কাদের নিজে করবেন বলে আগে থেকে ঠিক করে থাকেন সেসকল সড়ক ও ভবনের এষ্টিমেট করার সময় বেশি টাকার এষ্টিমেট করে থাকেন। এরপর নানা কৌশলে সেই কাজ ভাগিয়ে নেন এবং তার সহযোগী ঠিকাদার সালেহ আহম্মদ সহ কাজগুলো সম্পন্ন করে থাকেন। তাদের দুইজনের অনেকগুলো কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তারমধ্যে মতিগঞ্জ-চরদরবেশ ইউনিয়নের দারোগারহাট থেকে নতুন বাজার সড়ক পাকাকরন ও বগাদানা ইউনিয়নের কাটাখিলা থেকে আলামপুর সড়ক পাকাকরন কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দারোগারহাট থেকে আলী মাঝি বাড়ির দরজা সড়কের পাকাকরন কাজ চলমান রয়েছে। নিন্মমানের কাজ করার কারনে দারোগারহাট থেকে নতুন বাজার সড়কের কাজ একমাস না যেতেই কয়েক জায়াগায় পিছ উঠে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, দারোগারহাট টু নতুনবাজার সড়কের কাজের বিষয়ে আব্দুল কাদের এর বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ এর নিকট মুঠোফোনে অভিযোগ দিলেও উপজেলা প্রকৌশলী অভিযোগ আমলে না নিয়ে সড়কের সকল কাজ তদারকির দায়িত্ব দেন আব্দুর কাদেরকে। আব্দুল কাদের নিজেই এই সড়কের ঠিকাদার আবার তিনি নিজেই যদি এই সড়কের তদারকির দায়িত্বপান তাহলে সড়কের কাজ কিভাবে ভাল হবে। এটা শিয়ালকে মুরগি পাহারা দেয়ার দায়িত্ব দেয়ার মত। আবুল কালাম নামে সেনেরখিলের একজন জানান, দারোগারহাট- নতুনবাজার সড়কের নি¤œমানের কাজের বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকে বারবার অভিযোগ দিলেও তিনি আমলে নেননি। আব্দুল কাদের কার্য সহকারী হলেও নিজেকে সবার কাছে প্রকৌশলী পরিচয় দেন। তিনি এলাকায় প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিত।
‘হক ট্রেডার্স’ নামীয় লাইসেন্স এর স্বত্তাধিকারী ফজলুর রহমান বাবলুর ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল দিলেও এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি। অভিযোগের বিষয়ে কার্য সহকারী আব্দুল কাদের প্রকাশ মানিক বলেন, আমি ঠিকাদারির সাথে জড়িত নই। যারা আমাকে শত্রুভাবে তারা আমার পিছনে এগুলো বলে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) সোনাগাজী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী হয়ে ঠিকাদারি কাজ করতে পারবেন না। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে কল কেটে দেন। এরপর গত দুইদিনে কয়েকবার কল দিলেও কল রিসিভ করেননি। আব্দুল কাদেরের বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে গেলেও এড়িয়ে যান। এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, আব্দুল কাদেরের ঠিকাদারি করার বিষয়টি আমি এর আগে কখনো শুনি নাই, কেউ বলেনাই কখনো। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখব। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, সরকারি কোন কর্মচারী ঠিকাদারী কাজ করার কোন সুযোগ নেই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। এভাবে চলতে পারেনা।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, আমিও শুনেছি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ঠিকাদারীর সাথে জড়িত। এটি কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি সত্যি হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।