৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • টপ নিউজ >> দেশজুড়ে >> ফেনী
  • শার্টের বোতামের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩
  • শার্টের বোতামের সূত্র ধরে খুনের রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ৩

    দৈনিক আমার ফেনী

    নিজস্ব প্রতিবেদক
    শার্টের বোতাম ও ভিকটিমের গায়ে থাকা কামড়ের দাগের সূত্র ধরে ফেনীর আলোচিত প্রবাসী স্ত্রী মমতাজ বেগম প্রকাশ পারুল (৫৬) হত্যাকান্ডের চারদিনে মাথায় রহস্যের জট উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সাথে জড়িত তিন হত্যাকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
    পুলিশ জানায় গত সোমবার রাত সোয়া আটটার দিকে প্রধান আসামী মোবারক হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর খুলতে থাকে ঘটনার জট। এসময় মোবারক হোসেনের জিন্মা থেকে পুলিশ ছিড়া বোতামের শার্ট ও ঘটনায় ব্যবহৃত একটি হ্যান্ড গ্লাভস জব্দ করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী একই রাত পৌনে নয়টার দিকে ফেনী সদরের মাথিয়ারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত তার অপর দুই সহযোগী ইয়াব হোসেন শুভ (২০) ও আব্দুল আউয়াল প্রকাশ সাদ্দামকে (৩৫) গ্রেফতার করে।
    এই ঘটনায় সোমবার রাত ১২টার দিকে প্রধান আসামী মোবারক দায় স্বীকার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে হত্যার সব ধরনের তথ্য বের হয়ে আসে বলে পুলিশ জানান।
    দাগনভূঞা থানার ওসি আবুল হাশিম জানান, মোবারক হোসেনকে সোমবার রাত সোয়া আটটায় দাগনভূঞা উপজেলার বারাহিগুনি গ্রামের পার্শ্ববর্তী চর এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক একই রাত পৌনে নয়টার দিকে ফেনী সদরের মাথিয়ারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত তার সহযোগী ইয়াব হোসেন শুভ ও পৃথক স্থান থেকে আব্দুল আউয়াল সাদ্দামকে গ্রেফতার করা হয়।
    অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শাহাদাত হোসেন তত্বাবধানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাছলিম হুসাইন এর নেত্বত্বে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।
    দাগনভূঞা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাসেল মিয়া, এসআই রাশেদুল হক ও এসআই মো. আজমগীর এর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ টিম গোপন সূত্রের ভিত্তিতে দাগনভূঞা ও ফেনী থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করেন।
    পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, আাসমী মোবারক হোসেন মামলার ভিকটিম মমতাজ বেগম পারুল এর পূর্ব পরিচিত। মোবারক মাঝে মধ্যে পারুলের বাড়িতে গাছের ডাল কাটা এবং নারকেল সুপারি পেড়ে দেয়ার কাজ করতেন। তার সহযোগী আব্দুল আউয়াল ও ইয়াব হোসেন শুভ পূর্ব পরিচিত। ঘটনার দিন ১৩ ডিসেম্বর তারিখ সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর পর মোবারক হোসেন, আব্দুল আউয়াল তার সসহযোগী সাদ্দাম ও ইয়াব হোসেন শুভ ভিকটিম পারুলের বাড়ির পাশের বিলে বসে ভিকটিমের বাড়িতে টাকা পয়সা ও জিসিনপত্র লুন্ঠনের পরিকল্পনা করেন। এরপর আসামীরা ভিকটিমের বাড়িতে যায়। এসময় পারুরে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আসামী মোবারক হোসেন নানু নানু বলে ডাকলে তিনি দরজা খুলে দেন। আসামী মোবারক হোসেন প্রথমে ঘরে প্রবেশ করে এবং তার পিছু পিছু আসামী শুভ লাঠি নিয়ে ও সাদ্দাম দা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে।
    এইদিকে ভিকটিমের ঘরে প্রবেশ করার পর আসামী মোবারক হোসেন ভিকটিমের ডাইনিং রুমের চেয়ারে ভিকটিমের পাশে বসে। তার অপর দুই সহযোগী শুভ ও সাদ্দাম ভিকটিমের রুমের লাইট বন্ধ করে দেয় এবং ভিকটিমকে তার কাছে যা আছে তা দিয়ে দিতে বলে। এই সময় আসামী মোবারক হোসেন ভিকটিমের ঘরে থাকা ব্যাংকটি গ্যাস লাইট দিয়ে জ্বালিয়ে ও কেটে এবং আলমারি খুলে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এরপর ভিকটিম থরথর কাপাকাপি শুরু করে অন্য রুমে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।
    ভিকটিম মমতাজ এর হাতে থাকা মোবাইল নিয়ে তার ছেলের বউয়ের রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগানোর চেষ্টা করলে আসামী শুভ তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমের মাথায় স্বজোরে আঘাত করে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। প্রধান আসামী মোবারক হোসেন ভিকটিমের মুখ চেপে ধরলে ভিকটিমের সাথে আসামী মোবারক হোসেন ধস্তাধস্তিতে মোবারক হোসেনের গলায় আচর ও হাতে আঙ্গুলে ভিকটিমের কামড়ের দাগ লাগে। ভিকটিম মোবারকের গলায় চাপ দিয়ে ধরলে মোবারক ভিকটিমের হাতে একাধিক এলোপাথাড়ি কামড় দেয়। ধস্তাধস্তিতে আসামী মোবারক হোসেনের পরিহিত শার্টের ২টি বোতাম ফ্লোরে পরে যায় (যা ভিকটিমের লাশের পাশে পাওয়া যায়)।
    এক পর্যায়ে আসামীগণ ভিকটিমের গলায় পায়জামা প্যাচিয়ে শ্বাসরোধ করে ভিকটিমেকে হত্যা করে। ভিকটিম জোড়াজুরিতে দূর্বল হয়ে পরলে সাদ্দাম ও শুভ তার পেটে সজোড়ে লাথি মারলে তিনি নিস্তেজ হয়ে যান। মৃত্যু নিশ্চিত করে আসামীরা তার কানের দুল, মোবাইল, আলমারী ও প্লাস্টিকের ব্যাংকে থাকা টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
    পুলিশ জানায়, প্রধান আসামী মোবারক হোসেন লক্ষীপুর জেলার টুমচর গ্রামের (বাদশার বাপের বাড়ি) মঈন উদ্দিনের ছেলে। সে বর্তমানে ফেনী সদরের মাথিয়ারা খালুর দোকানের পাশে, তারেকের বাড়াটিয়া হিসাবে ছিল। সহযোগী অপর আসামী আব্দুল আউয়াল উত্তর বারাহি গোবিন্দ গ্রামের হাজী সিরাজ মিয়ার ছেলে। আসামী ইয়াব হোসেন শুভ ফেনী সদরের মাথিয়ারা গ্রামের আফজল মেস্ত্রি বাড়ির মো. সেলিম ছেলে।
    প্রসঙ্গত, ১৩ ডিসেম্বর দাগনভূঞা থানাধীন জায়লস্কর ইউপিস্থ বারাহিগোবিন্দ গ্রামের গৃহকত্রী মমতাজ বেগম প্রকাশ পারুলকে (৫৬) তার বসত বাড়িতে অজ্ঞাতনামা আসামীরা হত্যা করে।

    আরও পড়ুন

    বন্যার্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ দিল সেতারা-হাশেম ফাউন্ডেশন 
    যুবকদের প্রশংসা করলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ
    ফেনীতে বন্যাদুর্গতদের বিজিবির চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান
    ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির কোথাও উন্নতি, কোথাও অবনতি
    বানের জলে ভাসিয়ে দেয়া হলো শিফুকে
    দাগনভূঞায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিলো বিনা
    মিরসরাইয়ের ঝর্ণায় ঘুরতে এসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই পর্যটকের মৃত্যু
    পরশুরাম ও ফুলগাজীতে তৃতীয় দফায় বন্যা