নিজস্ব প্রতিবেদক
মালেকা বেগমের বয়স ৬৩ বছর। চাকরির কারণে ছেলে থাকে ঢাকায়। বাসে উঠতে পারেন না, বমি হওয়ার ভয়ে। আর বিমান ভীতির কারণে আকাশপথে চলাচল করেন না। তাই ছেলের বাড়ি যাওয়া হয়নি দীর্ঘ দিনেও। কক্সবাজার থেকে ট্রেন চলাচলের প্রথম দিনেও যাত্রী হয়েছেন তিনি। মালেকা বেগম বলেন, এক সময় ভাবতাম যদি ট্রেন থাকতো তাহলে ছেলের বাড়িতে যাওয়া যেতে। সত্যি সত্যি এখন ট্রেনে করে ঢাকায় যাচ্ছি, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। ৫/৭ দিন ছেলের বাসায় থাকার পর নাতি-নাতনি নিয়ে আবার ট্রেনে করে কক্সবাজার ফিরবেন বলেও জানান তিনি।
ঐতিহাসিক ট্রেন যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে খুশি কক্সবাজারের মানুষ। সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি যে, কক্সবাজার থেকে ট্রেনে ঢাকায় যাওয়ার। আজ সেটিই পূরণ হলো। কী যে আনন্দ হচ্ছে বোঝানো যাবে না।
অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা-কক্সবাজার রুটে স্বপ্নের ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার কক্সবাজার আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে। এতে যাত্রী ছিল ১ হাজার ৩০ জন।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী জানান, প্রথম ট্রেন শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এতে যাত্রী ছিল ১ হাজার ৩০ জন। ট্রেনটির রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ফিরতি ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলে যাত্রীবাহী ট্রেনের গতিসীমা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ চালুর লক্ষ্যে পর্যটন নগরীর ঝিলংজায় ঝিনুকের আদলে তৈরি করা হয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় আইকনিক রেল স্টেশন। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০২ কিলোমিটার নতুন নির্মিত রেলপথ গত ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ আগে থেকেই চালু আছে।
ঢাকা থেকে কক্সবাজারের পথে শোভন চেয়ারের ভাড়া ধরা হয়েছে ৫০৫ টাকা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্নিগ্ধা শ্রেণির জন্য গুনতে হবে ৯৬০ টাকা। আর এসি সিট ও এসি বার্থের জন্য ভাড়া ধরা হয়েছে যথাক্রমে ১১৫৬ টাকা ও ১৭৩১ টাকা। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী ৮১৪ নম্বর ট্রেনটির সাপ্তাহিক বন্ধের দিন সোমবার। আর কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ৮১৩ নম্বর ট্রেনটি বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রুটে ট্রেনের সব টিকেট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।