জমির বেগ
ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর ইন্সটাক্টর শাহ আলম’র বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনে শাস্তির দাবী করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২২ অক্টোবর শিক্ষার্থী মোশারফ হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ৩১ অক্টোবর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। ইনস্টিটিউটের শিক্ষক চন্দন কান্তিকে আহবায়ক, জয়নাল আবেদিন ও ইখলাস উদ্দিনকে যুগ্ন আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিযোগ দায়েরকারী শিক্ষার্থীকে চাপ প্রয়োগ করে অভিযোগটি তুলে নিতে বাধ্য করেছেন। এদিকে গত রোববার ২৫জন শিক্ষার্থী শিক্ষক শাহ আলমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে অধ্যক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ভারপ্রাপ্ত ইন্সটাক্টর ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম স্যার নানাবিধ অর্থ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত। তারা জানান, সপ্তম পর্বের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ি তারা প্রজেক্টের কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে ইন্সটাক্টর শাহ আল ওই বিষয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের চার-পাঁচটি প্রজেক্ট প্রস্তুত করতে বলেন। যার খরচ প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তাদের শ্রেণি শিক্ষক তাদের যে প্রজেক্টগুলো দিয়েছিলেন সেগুলে তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিলো। ইন্সটাক্টর শাহ আলম তাদের যে প্রজেক্ট দিয়েছেন তা তাদের সম্মিলিত ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তাই তারা এসকল প্রজেক্টের বিরোধীতা করেন। তখন স্যার তাদের টিসি, পিসি ও পিএফ কমিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। অভিযোগকারী মোশারফ জানান, আমরা যারা বিরোধীতা করেছি তাদের কয়েজনকে স্যার খারাপ চোখে দেখে। পরীক্ষার সময় আমাদের প্রজেক্ট মূল্যায়ন করা হয়নি। আমাদের শুধু একটা প্রশ্ন করা হয়েছে ‘এটা কি আমার দেয়া প্রজেক্ট ছিলো?’ পরবর্তীতে স্যার আমাদের সবাইকে গড়ে ৫০ মার্কের মধ্যে ২০ মার্ক দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক প্রজেক্ট তৈরী করলে ইন্সটাক্টর শাহ আলম তা মূল্যায়ন করেননি। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় অভিযোগ স্কিল কম্পিটিশন প্রোগ্রামে তাদের যে প্রজেক্ট দেয়া হয়েছিলো তার খরচ এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশত টাকা। ইন্সটাক্টর শাহ আলম স্যার এর জন্য তাদের কাছে চৌদ্দ হাজার টাকা দাবী করেন। স্যার তাদের বলেন, বাইর থেকে প্রজেক্ট বানিয়ে আনবেন। শিক্ষার্থীরা রাজি না হয়ে নিজেরা প্রজেক্ট তৈরি করায় তা বাদ দিয়ে দেন। পঞ্চম পর্বের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাইর থেকে একটা সেফটি হেলমেট কিনে প্রদর্শন করেন। যেখানে ছাত্রদের কোন অংশ গ্রহন ছিলো না। শিক্ষার্থীদের তৃতীয় অভিযোগ তার যে ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং করছেন সেখানে অন্যান্য ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা কেউ ৮০০ টাকা কেউ এক ১২০০ টাকা ও কেউ ১৫০০ টাকায় ট্রেনিং করছেন। সেখানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ৫০০০ টাকা। শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বলেছেন ইন্সটাক্টর শাহ আলম তাদের এক টাকাও কম নিতে নিষেধ করেছেন। শিক্ষার্থীরা উক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে ইন্সটাক্টর শাহ আলম স্যারের অর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক আছে ধারনা করছে বলে লিখিত অভিযোগে জানান। তারা ইন্সটাক্টর শাহ আলমের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বদলির অনুরোধ জানান কর্তৃপক্ষের কাছে।
অভিযোগকারী তাদের তিনজনের রোল নম্বর দিয়ে (রোল নং: ৪৮….., ৪৮…., ৪৮….) জানান, তাদের একাডেমিক স্কোর অনুযায়ি টানা ২-৫ম পর্ব প্রথম স্থানে ছিলো। দুইনম্বর সহপাঠীদের একজন জিপিএ ৩.৭-৩.৮ এর মত ফলাফল থাকে। অন্যজন জিপিএ ৩.৪-৩.৫ এর মতো থাকে। তারা অভিযোগের আবেদনে লিখেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় যদি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয় তার দায় কে নেবে।
অভিযুক্ত ইন্সটাক্টর শাহ আলম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি অভিযোগের ব্যাপারে জানেনই না। তিনি ট্রেনিংএ ঢাকায় আছে। প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ গুলো তিনি এই প্রথম শুনছেন। তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যে বলে জানান। তিনি বলেন, আমাদের ডিপার্টমেন্টে রাজস্বের কোন শিক্ষক নেই। আমরা মাস্টার রোলের টিচার দিয়ে ক্লাস করাই। মাষ্টার রোলের ছেলে একটি সাবজেক্টটা নিতো সে এখন চলে গেছেন। আমি ফক্সি ক্লাস নিচ্ছি। আমাদের ছাত্র প্রায় ৯০ জনের মতো। তাদের আমরা প্রজেক্ট দিয়েছি। তাদের দুই গ্রুপ করেছি। তাদের মতামত নিয়ে প্রজেক্ট ভাগ করে দিয়েছি। ছেলেরা আমাদের সাথে দেখা করে নাই, কোন কথা বার্তা নাই আমাদের বলেছে স্যার প্রজেক্ট তৈরী করেছি। পরীক্ষার দিন এসে দেখি তাদের কোন প্রজেক্ট নেই। সে প্রজেক্ট কি সেটাই জানে না। স্টারনাল এসেছে তাঁকে প্রজেক্ট দেখাতে হবেতো। প্রজেক্ট না দেখালে নম্বর দিবে কিভাবে? খাতায় স্টিমিট আছে না? যে ক্লাসে আসে না, প্রজেক্ট তৈরী করে না তাকে কিভাবে নম্বর দিবেন? প্রজেক্টের উপর মূল্যায়ন। তারা কোন প্রজেক্ট করেনি, প্রজেক্ট আনেওনি। ৭০ হাজার টাকার কিসের পজেক্ট। সরকার তাকে টাকা দিচ্ছেনা প্রজেক্টের জন্য। তাকে মাসে মাসে উপবৃত্তি দিচ্ছেনা পড়া লেখার জন্য। কলেজে ৯০ জনের মধ্যে আসে ১০-১৫ জন। নম্বর দিবে স্টারনালে। এখানে আমার কিছু করার নেই। ট্রেনিং আমরা চট্ট্রগ্রাম বিভাগের সব জায়গায় পাঠিয়েছি। ছাত্ররা দল বেঁধে এসে বলে তারা গাজীপুর যাবে। কারন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের বাড়ি সেদিকে। আমরা কোন ছাত্রকে বলিনি সেখানে যেতে। আমি বিভাগীয় প্রধান। আমাদের প্রধান হলো জয়নাল আবেদীন স্যার। তাঁর ছেলেওতো সেখানে গেছে। স্যার জানিয়েছে তারা এখানে বসে মারামারি করে চলে যাক সেখানে। তারা গিয়ে কন্ট্রাক্ট করেছে তারা ঠিকমতো ক্লাস করবে না সার্টিফিকেট নিবে ৫ হাজার টাকা দিবে। আর অনুমতি দিয়েছে অধ্যক্ষ স্যার। আমার নাম আসবে কেন? আমিতো কাউকে পাঠাইনি। ১ম ও ২য় শিফটের উভয় শিফটের ছাত্ররা সেখানে গেছে। জয়নাল স্যারের ছেলেও ৫হাজার টাকা দিয়ে ট্রেনিং করছে। আমার উপর কেন দায় আসবে? স্কিল কম্পিটিশনে ব্যাপারে আমাদের দুই দিন আগে বলেছে কম্পিটিশন হবে। আমরা তাদের বলেছি একটা প্রজেক্ট করতে। ডিসি অফিস থেকে বলেছে শব্দ দূষনের উপর একটি প্রজেক্ট দিতে। ছেলেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হয়েছে। তারা টাকা তুলে তারা প্রজেক্ট করেছে। সরকার টাকা দিয়েছে ৫শত টাকা করে। সেটাকা তারা পেয়েছে। এখানে আমার ভূমিকা কোন জায়গায়। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিবে। আমি কখন কোন অন্যায় করিনি।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক চন্দন কান্তি ও যুগ্ন আহবায়ক জয়নাল আবেদিন এর কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, শিক্ষার্থীকে চাপ প্রয়োগ করার প্রশ্নই উঠেনা। কারণ সে আমাদের ছাত্র। তার কাছে আমরা মার্কশীট দেখতে চেয়েছি। সে জানিয়েছে এখনও মার্কশীট হাতে আসেনি। সুতরাং মার্কশীট হাতে আসার আগে আমরা কিভাবে প্রমান করবো তাদের ২০ মার্ক করে দেয়া হয়েছে। ফলাফল বিবরণী হাতে আসার পর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। ইন্সটাক্টর শাহ আলমের বিরুদ্ধে আনিত অন্যান্য অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা জানান, এসব অভিযোগের ব্যাপারে তাদের জানা নেই। তাঁরা জানান, অভিযোগকারীর রেজাল্ট আগে ভালো ছিলো। বর্তমানে সে পড়া- লেখায় তেমন মনোনিবেশ করছে না। শাহ আলম স্যার যদি নম্বার কমও দিয়ে থাকে তাহলেও তার রেজাল্ট আরো ভলো হওয়ার কথা ছিলো। এক বিষয়ে নম্বর কম পেলে রেজাল্ট এমন হওয়ার কথা নয়। নিশ্চয় অন্যান্য বিষয়েও সে খারাপ করেছে।
ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী প্রদীপÍ খীসা জানান, মোশারফ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছে। আভিযোগ পাওয়ার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্ত কমিটি জানিয়েছে মার্কশীট আসার আগে কোন প্রতিবেদন তারা দাখিল করতে পারবে না। গত রোববার বেশ কয়েকজ শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ বরাবর আরেকটি অভিযোগ করেছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন।