১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • জাতীয় >> টপ নিউজ >> সম্পাদকীয়
  • শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রা
  • শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিযাত্রা

    দৈনিক আমার ফেনী

    প্রফেসর ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার

    ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা, দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাবার সোনার বাংলা গড়ার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আলোকবর্তিকা হাতে বঙ্গবন্ধু কন্যা এদেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, উদ্ভাবনী জাতি এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গঠন করায় হবে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্পের প্রধান দিক।

    ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল দিবসের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার রূপকল্প-২০৪১-এর ঘোষণা করেন। ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এই সংকল্পের পুনরাবৃত্তি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং মাথাপিছু গড় আয় হবে ৫ হাজার ৯০৬ ডলারের ওপরে এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ ডলারের অধিক।’

    স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট স্বাস্থ্য, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট যোগাযোগ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট প্রযুক্তি ও স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলাকে বুঝানো হয়েছে। যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর, সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নে দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণসহ সরকারি বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হবে। ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক সাক্ষরতা অর্জিত হবে, তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি।

    স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক ও স্মার্ট হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা, উন্মুক্ত মন, বহুসাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীলতা, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অত্যন্ত নমনীয় এবং স্থিতিস্থাপক, পেশাদারিত্ব, উচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিকে একীভূত করে, জীবনমূখী শিক্ষা, উচ্চ মানব পুঁজি, উচ্চ স্নাতক তালিকাভুক্তির অনুপাতের ভিত্তিতে স্মার্ট নাগরিকের ধারণা সুস্পষ্ট হবে।

    পাশাপাশি স্মার্ট ইকোনমি উচ্চ উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক ডিএনএ ( ডিএনএ ইকোনমিক্স হল একটি বিশেষজ্ঞ অর্থনীতির পরামর্শদাতা যা ব্যবসা, কৌশল এবং নীতিগত দক্ষতাকে একত্রিত করে), নতুন উদ্ভাবন যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি দ্বারা সমর্থিত, পর্যটন, উচ্চ মূল্যবোধের সৃজনশীলতা এবং নতুন ধারণা, ভারসাম্যপূর্ণ এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আলোকিত উদ্যোক্তা নেতৃত্ব, জাতীয় ব্র্যান্ড বিকাশ ও সমর্থন করা, বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ, কৌশলগত বিনিয়োগ, স্থানীয়ভাবে চিন্তা করে, আঞ্চলিকভাবে কাজ করে এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা করে।এটি গড়ে তুলতে দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে প্রবাসী হেল্পডেস্ক চালু, সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম ত্বরান্বিতকরণে ডিজিটাল সেন্টারের নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে সাথী’ নেটওয়ার্ক সৃষ্টি, দেশের সব পরিষেবা বিল প্রদানের পদ্ধতি সহজীকরণে সমন্বিত পেমেন্ট প্ল্যাটফরম একপে’-তে আটটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নতুন পেমেন্ট চ্যানেল যুক্ত করা হয়েছে।

    স্মার্ট সরকারের বৈশিষ্ট্য হবে দায়িত্বশীলতা, প্রতিক্রিয়াশীলতা, জনবান্ধব নগর ব্যবস্থাপনা, ই-গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, টেকসই নগর উন্নয়ন কৌশল, অংশগ্রহণমূলক নীতি প্রণয়ন ও দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা। বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টারভিত্তিক ওয়ানস্টপ সেবাকেন্দ্র এবং প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পিপিএস ও আরএমএস সফটওয়্যার এবং অনলাইন রিপোর্ট ম্যানেজমেন্ট (আরএমএস) সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

    স্মার্ট বাংলাদেশের রুপকল্পের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হল স্মার্ট প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে বসবাস এবং তা রক্ষা করে, আকর্ষণীয় এবং প্রাকৃতিক স্থাপনা, প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ সংরক্ষণ, স্মার্ট পরিবেশ, দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার, বিনোদনের সুযোগ, সবুজ শহর ও পরিচ্ছন্ন শহর, পর্যাপ্ত এবং প্রবেশযোগ্য সর্বজনীন সবুজ স্থান গড়ে তোলাই হল স্মার্ট প্রকৃতির লক্ষ্য।

    বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল প্রকল্প, মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেয়। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে ও বাকি আটটি প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আগামী মাসে কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ অবকাঠামোয় নতুন মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যার টানা তিন শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির উন্নয়নমূলক চিত্র বাংলাদেশের অর্থনীতির বিগত ১৩ বছরের সামষ্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। যা বর্তমানে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২ হাজার ৭৯৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে।এই ধারাবাহিকতা দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তর করবে।

    দেশে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা বর্তমানে পুরোপুরি দৃশ্যমান। দেশব্যাপী ২৮টি হাইটেক পার্ক করা হয়েছে।মাত্র ১৩ বছরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৬ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ কোটি এবং মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ১৮ কোটির বেশি। এরই মধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটসহ কয়েকটি বড় প্রাপ্তি বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অন্যরকম উচ্চতায়। বাংলা গভর্নেট ও ইনফো সরকার-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে ১৮ হাজার ৫০০টি সরকারি অফিস নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। ৮০০ সরকারি অফিসে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ২৫৪ অ্যাগ্রিকালচার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (এআইসিসি) ও ২৫ টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নারী উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশে কেনাকাটা সংক্রান্ত ১২ হাজার পেজ চালাচ্ছেন নারীরা। স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্প বাস্তবায়নে মহাকাশ অর্থনীতি নামে আরেকটি খাত দেখা যেতে পারে।

    মানুষের দোরগোড়ায় সেবা প্রদানের জন্য সারা দেশে প্রায় ৪,৪০০টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
    ডিজিটাল সেন্টার থেকে বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৭০ লাখের বেশি মানুষকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নাগরিকরা ৪০ কোটিরও বেশি পরিষেবা পেয়েছেন ডিজিটাল সেন্টার থেকে। এর ফলে নাগরিকরা ৭৮.১৪% কর্মঘণ্টা, ১৬.৫৫% খরচ বাঁচাতে এবং ১৭.৪% ভ্রমণ ব্যায় থেকে রক্ষা পেয়েছে। কাগজবিহীন যোগাযোগের ফলে ই-ডকুমেন্টের মাধ্যমে ২ কোটি ৪ লাখের বেশি ফাইল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ই-মিউটেশন সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে ৪৫.৬৮ লক্ষেরও বেশি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ফলে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে। প্রায় ২৫০০ স্টার্টআপ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যারা আরও প্রায় ১.৫ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। শুধু সাত বছরে এ খাতে ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। অনলাইন কর্মশক্তিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ২য় স্থানে রয়েছে। প্রায় ৬, ৫০,০০০ প্রশিক্ষিত ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিং সেক্টর থেকে কমপক্ষে $৫০০ মিলিয়ন আয় করছে। ১৩ বছর আগে আইটি অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ২৬ মিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে তা ছাড়িয়ে গেছে ১.০৪ বিলিয়ন ডলারে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইসিটি খাতে ৩ লক্ষ কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

    শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর এক যুগ (২০১০-২২) ধরে বাংলাদেশ গড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ছয় বছর গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এ সময় কর্মসংস্থান বেড়েছে এবং দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। সরকার ধারণা করছে, ২০২২-২৩ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’ অনুযায়ী, দেশের বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় শেখ হাসিনাকে আয়রন লেডি উপাধি দেয় দ্য ইকোনমিস্ট।

    শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। বর্তমান ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ করেছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে “শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট”। বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫.২ শতাংশ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যা ছিল মাত্র ১৫ শতাংশের একটু বেশি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে মাথায় রেখে পুরো শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে ঢেলে সাজাতে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছে সরকার।দেশের ৮৭ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। কলেজ তথা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অবস্থা আরো ভালো—৯৮ শতাংশ কম্পিউটার বা আইসিটি সুবিধার আওতায় রয়েছে।

    সরকারি তথ্য মতে দেশে গত ১৪ বছরে ১১টি স্নাতকোত্তর সুপার বিশেষায়িত হাসপাতাল, কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি দেশে ৬০০ টির বেশি হাসপাতাল নির্মান করা হয়েছে।গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১৮,৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। হাসপাতাল থেকে ত্রিশ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সারাদেশে ৪৩টি হাসপাতালে টেলি-মেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে, যেখানে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়া পাঁচ লাখ অটিস্টিক শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১০৩টি সেবা কেন্দ্র রয়েছে।

    নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ু সহিষ্ণুতা ও প্রকৃতিভিত্তিক পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয়ভাবে বাস্তবায়নযোগ্য অভিযোজন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান ২০৩০’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বন অধিদফতর বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে ৭.২৭ কোটি গাছের চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সে জন্যে উপকূলীয় অঞ্চলের ৯ হাজার ৪০০ একর জমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়ন এবং সারা দেশে ১,৮০২ কিলোমিটার স্ট্রিপ গার্ডেনিংয়ের মাধ্যমে গাছের চারা রোপণ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শহরের তাপমাত্রা কমাতে ও পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

    ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-এর অধীনে, বর্তমান পরিকল্পনা সুনীল অর্থনৈতিক সম্পদ (মৎস্য, সামুদ্রিক শৈবাল, খনিজ সম্পদ) আহরণের ওপর সরকার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।

    বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রগামী দেশগুলোর উত্তম পদক্ষেপগুলো যাচাই করে স্মার্ট বাংলাদেশ : আইসিটি মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১’ এ মোট ৪০টি মেগাপ্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে যেসব কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম লক্ষ্য ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় অর্থনীতিতে আইসিটি খাতের অবদান অন্তত ২০ শতাংশ নিশ্চিত করা।

    ইতিমধ্যে এটুআইসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর/ সংস্থা স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। এটুআই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অংশীজনের সহায়তায় স্মার্ট ভিলেজ’, স্মার্ট সিটি’ এবং স্মার্ট অফিস’ কনসেপ্টের পাইলটিং শুরু করেছে। যথার্থ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন সিভিল সার্ভিস গড়ে তুলতে এটুআই পরিচালনা করছে সিভিল সার্ভিস ২০৪১: ডিজিটাল লিডারশিপ জার্নি’।

    তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল এদেশের বৃহৎ জনবলকে উৎপাদন কাজে যুক্ত করা, তাদেরকে দক্ষ করে তোলা,, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উপযুক্ত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, আমলা তান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস, দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এ যাওয়া। তবেই দেশের মানুষ উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার ভিত্তিতে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তরিত করবে।

    ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। আজ বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এখন যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন তাও শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যার এই অভিযাত্রায় যুক্ত হতে হবে দেশের সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষকে, স্ব – স্ব জায়গা থেকে নৈতিকতার সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব।

    লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

    আরও পড়ুন

    চলে গেলেন সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার
    নগদ প্রণোদনা চেয়ে বিসিক মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলন
    জাতীয়তাবাদী ওলামাদলের মতবিনিময় সভা
    আজকের তরুণরাই হচ্ছে আগামী দিনের স্টার- জেলা প্রশাসক
    মাতুভূঞায় জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
    ফেনীতে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালিত
    ইসলামী আন্দোলনের আমীর গণ বিপ্লবের মহানায়ক ছিলেন: মাও. জাফরী
    কোম্পানীগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে ছুরিকাঘাত, আহত-৪