জমির বেগ
বিএনপির সাম্প্রতিক স্লোগান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ মানে ফের পাকিস্তানি চেতনায় ফেরত যাওয়া নয় কি? এই স্লোগানের মাধ্যমে বিএনপি কি বুঝাতে চেয়েছেন? সম্প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরী তারেক রহমান লন্ডন থেকে মাতৃভূমির ভৌগোলিক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসার ডাক দেন। এ স্লোগানের পরই টক বা দ্যা কান্ট্রি হয়ে যায় স্লোগানটি। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা শংকা করছেন এ শ্লোগানের মাধ্যমে বিএনপি কি আবার পেছনে মানে পাকিস্তানে ফিরে যেতে চায়।
এদিক টেক ব্যাক বাংলাদেশ স্লোগান বিরোধী বেশকিছু গ্রাফিতিতে ভরে গেছে রাজধানী ঢাকার দেয়াল। সেখানে দেখানো হয়, বাংলাদেশকে পিছনের দিকে টানছে বিএনপি নেতারা- জোরসে বলো হেইয়ো, টেকব্যাক বাংলাদেশ, পিছিয়ে দাও বাংলাদেশ। ঢাকার বিভিন্ন দেয়ালে শোভা পাচ্ছে আরও অনেক গ্রাফিতি। যার একটিতে দেখা যায় পাকিস্তানের পতাকা আকৃতির এক ডাইনোসরকে বাংলাদেশের মানচিত্র খেতে উদ্বুদ্ধ করছে তারেক জিয়ার আদলের এক ব্যক্তি। আর লেখা আছে-টেক ব্যাক বাংলাদেশ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তারেক জিয়া বাংলাদেশকে শেকল দিয়ে টেনে পিছনে নিতে চেষ্টা করছেন ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ স্লোগান দিয়ে।
বাংলাদেশকে পিছনে নেওয়ার স্লোগান দিয়ে কীভাবে আন্দোলন করছে দলটি- এই প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির বড় নেতাদের টেকব্যাক বাংলাদেশ এর অর্থ কী, তার ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে স্লোগানের বারবার ব্যাখ্যা দিয়ে পরিস্কার করতে হয় সেটি আসলে দুর্বল রাজনৈতিক অবস্থান।
সমালোচনা শুরু হয় তখন বিএনপি নেতা মোশাররফ বলেন, ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ বলতে আমরা বোঝাতে চেয়েছি এই বাংলাদেশের জন্য এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে ও শহীদ হয়েছে। গুটিকয়েক লোক ছাড়া এ দেশের মুক্তিযুদ্ধকে এ দেশের মানুষ সমর্থন করেছে; মা-বোনরা নির্যাতিত হয়েছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আমরা ফিরে পেতে চাই।’ বিএনপির সাম্প্রতিক স্লোগান ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ মানে ফের পাকিস্তানি চেতনায় ফেরত যাওয়া নয় বলে দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমান ভয়াবহ দুঃসময়ে গোটা জাতির মুলমন্ত্র হোক ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। সংশপ্তক আন্দোলনের মূল স্লোগান হোক ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’।
এদিকে খোদ বিএনপির একজনের ব্যাখ্যার সঙ্গে আরেকজনের ব্যাখ্যার মিল নেই উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, স্লোগান আপনার উদ্দেশ্য ও পথকে স্পষ্ট করে। সেই স্লোগান যখন অস্পষ্ট হয় এবং সেই স্লোগানের মানে যখন জনে জনে ধরে ব্যাখ্যা করতে হয় তখন সেটা রাজনৈতিকভাবে দুর্বল স্লোগান হিসেবে পরিচিত হয়।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, এখন যতই ব্যাখ্যা তারা দিক না কেনো, তারা কোন মানসিকতা থেকে স্লোগান নির্ধারণ করেছে সেটা সবার জানা। তাদের অন্তরে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার বাসনা সবসময়ই ছিলো। এই ঘাতক গোষ্ঠী বারবারই বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র করেছে। ফলে এই যে তারা বাংলাদেশকে পিছনের দিকে নিতে চায় তার শক্ত প্র্রতিরোধ হওয়া দরকার। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হলে এই স্লোাগান থেকে তারা সরে আসবে।