জমির বেগ
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচমাস বাকী। নির্বাচনের জন্য বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি না নিলেও আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ফেনীতে জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা ৩টি। ফেনী-২ আসন সদর আসন হওয়ায় এই আসনটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে ধরা হয়। মূলত এ আসনে যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনিই জেলা রাজনীতি অনেকটা নিয়ন্ত্রন করেন।
আওয়ামী লীগ: ফেনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন ফেনী-২ (সদর আসন)। এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ফেসবুক ও স্থানীয় পত্রিকার নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাশী দাবী করলেও তাদের মধ্যে অনেককেই আবার বলতে শুনা যায় নিজাম হাজারীর ব্যাপারে তাদের কোন আপোষ নেই। নিজাম হাজারী মনোনয়ন না চাইলেই তারা মনোনয়নের দাবীদার। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সকলেরই রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়েও বিন্দুমাত্র অবস্থান নেই বলেও জানা যায়। বাস্তবতা হলো এ আসনে আওয়ামী লীগে নিজাম হাজারীর বিকল্প এখনও তৈরী হয়নি বা নেই। নির্বাচনী মাঠ রয়েছে পুরো তাঁর নিয়ন্ত্রনে। শুধু ফেনী সদর আসন নয়, পুরো ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তার নিয়ন্ত্রনে। ইতোমধ্যে নিজাম হাজারীকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলার সর্বস্তরের আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে পুরো ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ একট্টা। তিনি আধুনিক ফেনীর রুপকার। এ আসনে নিজাম হাজারী ছাড়া অন্য কারও নাম ভাবাই যায় না। ফেনী সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল বলে অশান্ত ফেনীকে শান্ত ফেনীতে রুপান্তর করার নায়ক নিজাম উদ্দিন হাজারী। ফেনীর উন্নয়নের রুপকার নিজাম হাজারী। ফেনীতে নিজাম হাজারীর কোন বিকল্প নেই। কেন্দ্র যখন নাম চাইবে এই আসনের জন্য শুধু নিজাম হাজারীর নামই পাঠানো হবে। বৃহত্তর নোয়াখালীকে একসময় বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি বলা হলেও এ আসনটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এ আসনটি প্রায় সময় নিয়ন্ত্রনে ছিল আওয়ামী লীগের। এই আসনটি ফেনী সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ফেনী পৌরসভাকে নিয়ে গঠিত। স্থানীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী সদর উপজেলা ও ফেনী পৌরসভার সকল ইউনিটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই জনপ্রতিনিধি। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম জয়নাল আবেদিন হাজারী তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওয়ান ইলাভেনের সময় তিনি আতœ গোপনে চলে যান। আতœ গোপনে থাকা অবস্থায় নির্বাচন করে তিনি বিএনপি দলীয় প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন’র (ভিপি জয়নাল) কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ভিপি জয়নালের কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী বীনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি নির্বাচিত হন। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনী মাঠ গুছিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। স্থানীয় নেতা কর্মীদের প্রত্যাশা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পাবেন নিজাম হাজারী।
বিএনপি: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনী জেলা বিএনপি প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারনায় না নামলেও ভেতরে ভেতরে মাঠ গোছাচ্ছেন বলে জানা যায়। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেন তাহলে এ আসন থেকে তাদের দলের শীর্ষ স্থানীয় ৬ থেকে ৭জন নেতাসহ প্রায় ২৫ জন মনোনয়ন চাইতে পারেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনের জন্য বিএনপি ১৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছিলেন। ফেনী-২ (সদর আসন) থেকে এবারও কেন্দ্রীয় বিএনপির তাদের সাবেক দুই বারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদিনকে (ভিপি) মনোনয়ন দিবেন বলে অনেকে আশাবাদী। বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য জয়নার আবেদিন ফেনী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ আসন থেকে বিএনপি ঘরোনা থেকে যাদের নাম শুনা যায় তারা হলেন, জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক গাজী হাবিব উল্যাহ মানিক, বিএনপির সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেত্রী রেহানা আক্তার রানু, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জিয়া উদ্দিন মিষ্টার, এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার। এদিকে অভ্যন্তরীন কোন্দলে অনেকটা জর্জরিত ফেনী জেলা বিএনপি। জেলা যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনে বিরাজ করছে কোন্দল। তাদের প্রতিটি উপজেলায়ও রয়েছে কোন্দল। গত তিন বছর আগে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি করে দেয়ার পর তাদের প্রকাশ্য কোন্দল অনেকটা নিরসন হয়ে যায়। তারপরও দলটির শীর্ষ পদধারীদের মধ্যে কোন্দল ওপেন সিক্রেট। জয়নাল আবেদিন (ভিপি জয়নাল) বলেন, আমরা নির্বাচনের দিকে এখনও হাঁটছি না। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তখন তারা যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনিই নির্বাচন করবেন। এখানে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তই মূল সিদ্ধান্ত। আন্দোলন সংগ্রাম চাঙ্গা হলে বা দল নির্বাচনমূখী হলে দলের মধ্যে তখন থেকে কোন কোন্দল থাকবে না। সবাই আন্দোলন সংগ্রাম বা নির্বাচনে নেমে পড়বে।
অন্যান্য: এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঈদ শুভেচ্ছার পোষ্টার ছাপিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন জামায়াত ইসলাম। এ আসন থেকে জামায়াত ইসলামের সাবেক আমীর বর্তমান কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঞা নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানা যায়। এ আসনে জামায়াতের প্রায় ৭-৮ শতাংশের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। জাতীয় প্রার্টির এ আসনে তেমন কোন অবস্থান নেই। তারপরও এ আসন থেকে জাতীয় পার্টিও নির্বাচন করতে চায় বলে জানা যায়।