নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ দশবছর পর সংস্কার কাজ হচ্ছে ফেনী গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পাগলামিয়া সড়কের (হাজারী সড়ক)। গতকাল রোববার সড়কটির সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজ। ১৪শ মিটারের এই সড়কটির সংস্কারে বরাদ্ধ ধরা হয়েছে সাড়ে ১১ কোটি টাকা। কার্যাদেশ পেয়েছেন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজটি বুঝিয়ে দিতে হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই। ফেনী পৌরসভার গুরুত্বপূর্ন এ সড়কটির সংস্কার কাজের অর্থায়ন করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
সড়কটি ‘হাজারী সড়ক’ নামে পরিচিত হলেও সরকারি ভাবে এর নাম ‘পাগলা মিয়া সড়ক’। ফেনী শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের পর আর সংস্কার করা হয়নি সড়কটির। এতে সড়কটি বর্তমানে চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সড়কটি নিয়ে দেশের অনেক মিডিয়ায় এক ও একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক আমার ফেনীতেও বেশ কয়েকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়। বাস্তবতা হলো ফেনীবাসীর জানাই ছিলোনা সড়কটি আসলে কার। সড়কটি কার এই প্রশ্ন জাগার একটিই কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় সড়কটির কাজ করেন এলজিইডি। তারপর সংস্কারের কাজ করেন ফেনী পৌরসভা। তারপর ড্রেন নির্মাণের কাজও করেন ফেনী পৌরসভা। গত দুই বছর ধরে প্রচারণায় ছিল সড়কটির দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। পরবর্তীতে সড়কও জনপদ বিভাগ বলেন, সড়কটি তারা এখনও বুঝে নেননি। সড়কটি নিয়ে কাঁদাছোঁড়াছুড়ির চলা কালে জনমনে সড়কটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের মাঝে সৃষ্টি হয় ব্যাপক ক্ষোভের। তারা বলেন, সড়কটি কার অধিনে তা তাদের দেখার বিষয় নয়। সড়কটি মেরামত করতে হবে সংস্কার করতে হবে এটাই তাদের দাবী।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল থেকে ফেনীতে প্রবেশের বিকল্প অন্যতম সড়ক পাগলা মিয়া সড়ক তথা হাজারী রোড। এই সড়কের অপর পাশে ঢাকা-চট্রগাম মহাসড়কের পুরনো সড়ক যা গ্যান্ড ট্রাংক রোড নামে পরিচিত। শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে প্রচুর যানজট থাকায় ২০০০ সালে এ সড়কটি তৈরী হরা হয়। যা শহরের যানজট নিরসনে ব্যপক ভূমিকা রাখে। এই সড়কের এক পাশে জেলা হেড কোয়াটারসহ প্রশাসনিক বিভিন্ন দপ্তর গুলো রয়েছে। ফেনীর কয়েকটি উপজেলা থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে যাতায়াতের সহজ সড়কও এটি। তৎকালীন ফেনী ২ আসনের সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী ২০০০ সালে একরাত ও একদিনে মাটি ভরাট করে এই সড়কটি নির্মান করেন। ঠিকাদার কুতুব হাজারী হাজার হাজার শ্রমিক নিয়ে তখন নির্মান করেন এই সড়কটি। কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে দলীয় লোকজনের পাহারায় জয়নাল হাজারী জনস্বার্থেই এই সড়কটি নির্মান করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি এলজিইডিকে দিয়ে সড়কটি পাকাকরণের কাজ করান। এরপর একবার ফেনী পৌরসভাও সড়কটির সংস্কার করেন। গত কয়েক বছর আগেও পৌরসভা সড়কটির ড্রেন নির্মাণ করেন। শহরের ভেতর সুন্দর একটি সড়ক নির্মাণ হওয়ার পর সেখানে হু হু করে কয়েকগুন বেড়ে যায় জায়গা জমির দাম। মানুষ অনেক স্বপ্ন নিয়ে সড়কটির আশপাশ এলাকায় জমি ক্রয় করে সেখানে তৈরী করে বহুতল ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এইখানে গড়ে উঠেছে শতাধিক বহুতল ভবন, শত শত দোকান পাট, কনভেনশন হল, কমিউিনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে ফেনী শহরের অধিকাংশ গাড়ির ওয়ার্কসপ এই সড়কটিতে অবস্থিত।
সড়ক ও জনপদ ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল জানান, ফেনী পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ন সড়কটির সংস্কার কাজের অর্থায়ন করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সাড়ে ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৪শ মিটারের সড়কটির সংস্কার কাজ পেয়েছেন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (এনডিই) নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আগামী ডিসেম্বরে সম্পূর্ণ কাজ বুঝিয়ে দিবে প্রতিষ্ঠানটি।
জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় এই সড়কের বিষয়ে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছিল। অবশেষে সড়কটি সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। আমি বলতে চাই ফেনীবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই পাগলা মিয়া সড়কটি। বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে ব্যবসায়ীরাসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চলাচল করে থাকেন। এটি সংস্কার হলে সকলেই উপকৃত হবে। পাশাপাশি ফেনীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হবে ও জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।