নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর দেবীপুরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জায়গা দখল করে পুলিশ ক্যান্টিনের নামে অভিজাত রেস্টুরেন্ট খুলে ব্যবসা করছেন শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ আলী। প্রতিষ্ঠানটি মহিপাল হাইওয়ে থানার সামনেই। অভিযোগ রয়েছে এ রেস্টুরেন্ট মূলত মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়ি ও কাগজপত্র বিহীন গাড়ি থামিয়ে দেনদরবার করেন মোহাম্মদ আলী।
মহিপাল হাইওয়ে থানার সামনে কুড়েঘর নামে রেস্টুরেন্টটি করা হলেও এর নেই হোটেল ব্যবসার কোন বৈধ কাগজপত্র। রেস্টুরেন্ট পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অন্তত ৬টি লাইসেন্স। জানা যায়, ইতোমধ্যে মোহাম্মদ আলী সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা রেস্টুরেন্টের জন্য তিনটি লাইসেন্স হাতিয়ে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স পেতে তিনি ভয়াবহ প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা যায়। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য জমা দেয়া আবেদনে তিনি রেস্টুরেন্টটিকে ‘পুলিশ ক্যান্টিন’ বলে উল্লেখ করেছেন। মূলত তার প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘কুঁড়েঘর কাবাব হাউজ এন্ড রেস্টুরেন্ট’। কোন রকম চুক্তিপত্র বা জায়গার দলিল ছাড়াই শুধু মাত্র নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি দিয়ে তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলেও রেস্টুরেন্টের জন্য অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান উপপরিচালক শওকত আরা কলি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়ক থেকে নিরাপদ দুরত্বে নির্মাণ করা হয় তিন তলা বিশিষ্ট মহিপাল হাইওয়ে থানা ভবন। ওই ভবন আর মহাসড়কের মাঝামাঝি স্থানে রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করেন ফেনী জেলা কাভার্ডভ্যান, ট্রাক-মিনিট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মোহাম্মদ আলী। তিনি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও ওয়ার্ড শ্রমিকলীগ সভাপতি।
তবে রেস্টুরেন্টটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন তার ছেলে মুন্না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, এ রেস্টুরেন্ট রাতারাতি গড়ে ওঠেনি। হাইওয়ে থানা পুলিশের সামনে দিবারাত্রি কাজ চালিয়েই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এটি গড়ে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী, সড়ক বা মহাসড়কের ৩০ ফুটের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু সেই আইনকে তোয়াক্কা না করে শহরের অদূরে দেবিপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষেই সওজের জায়গায় রেস্টুরেন্টটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সওজের জমি দখল করে নির্মিত হওয়া ‘কুঁড়েঘর কাবাব হাউজ এন্ড রেস্টুরেন্ট’ হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগায় অবৈধভাবে নির্মাণ করা হলেও পুলিশের ভূমিকা ছিল ও আছে রহস্যজনক।
জানতে চাইলে মহিপাল হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, আমি আনুষ্ঠানিকভাবে এব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। তবে তিনি জানান ‘পুলিশ ক্যান্টিন’ নামে ‘কুঁড়েঘর কাবাব হাউজ এন্ড রেষ্টুরেন্ট’ রয়েছে সেখান থেকে পুলিশ সদস্যরা নির্ধারিত দামেই খাদ্য ক্রয় করে থাকেন। তবে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায় রেস্টুরেন্টের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। রেস্টুরেন্টে কাগজপত্র বিহীন গাড়ি আটকের পর এখানে বসেই দেনদরবার করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা জোনের পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ বলেন, পুলিশ সদস্যদের চা-নাস্তার সুবিধার্থে মহাসড়কের পাশে নিকটতম স্থানে কোন রেষ্টুুরেন্ট না থাকায় সাময়িক ভাবে পুলিশ ক্যান্টিন হিসেবে এটির মৌখিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে কোন চুক্তিপত্র হয়নি। রেস্টুরেন্টটি সওজ এর জায়গায় হওয়ায় আমাদের কিছু বলার বা করার নেই।
ফেনী সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল জানান, সড়কের জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট কোন এখতিয়ার কারো নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি ট্রাক শ্রমিক ও মালিকদের কল্যানে কাজ করছি। হাইওয়ে পুলিশের সুবিধার্থে ক্যান্টিন চালু করেছি। সড়কের পাশে অব্যবহিত জায়গায় কয়েক লাখ টাকার বালি দিয়ে ভরাট করে তা ব্যবহার করছি। আমি যাই করি আমার নেতাকে জানিয়ে করি।