সোনাগাজী প্রতিনিধি
সোনাগাজীর আল-হেলাল একাডেমীর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. ফখরুদ্দিনের বিরুদ্ধে অবসর গ্রহন করার পর ও স্বপদে বহাল থেকে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তিনি জেলা জামায়াতে ইসলামীর শূরা সদস্য, উপজেলা ও পৌর জামায়াতের তত্ত্বাবধায়ক এবং আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক এসব পরিচয়ে তিনি বিদ্যালয়ের সকল বিষয়ে প্রভাব খাটিয়ে চলছেন বলে রয়েছে অভিযোগ। ষাটোর্ধ বলে খন্ডকালীন শিক্ষক নুরুল আমিন হামিদিকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয়া হলেও জামায়াত নেতা ফখরুদ্দিন এখনো বহাল তবিয়তে আছে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ১লা আগষ্ট শিক্ষক ফখরুদ্দিন অবসরে যান। অবসরে গেলেও স্বপদে বহাল থেকে আগের মতই পাঠদান করে যাচ্ছেন। এছাড়াও বর্তমানে আল হেলাল একাডেমীর হোস্টেল সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হোস্টেল সুপার হিসেবে বিদ্যালয় থেকে মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতন পান ও পাঠদানের জন্য ৮হাজার ৮শ টাকা বেতন পান তিনি। বিদ্যালয়ের ফায়েল-খায়ের ভবনের দ্বিতীয় তলায় তার জন্য একটি কক্ষ বরাদ্ধ রয়েছে। তিনি সেখানে রাত্রী যাপন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আল হেলাল একাডেমীর একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, শিক্ষক ফখরুদ্দিনের চাকুরীর ৬০ বছর ক’র্ণ হলেও আশ্চর্যের বিষয় তিনি একদিনের জন্যও অবসরে যান নাই। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই আল- হেলাল সোসাইটি এক প্রকার জোর করে প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুকের সহায়তায় ফখরুদ্দীনকে হোস্টেল সুপারের দায়িত্ব দেন। একই সাথে পূর্বের ন্যায় বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য মোখিক ভাবে খন্ডকালীন নিয়োগ দেন। তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষক থাকাকালীন যেভাবে বিদ্যালয় থেকে বেতন নিতেন ওইভাবে বেতন নিচ্ছেন। এমনকি বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। অপর এক শিক্ষক জানান, শিক্ষকতার ক্ষেত্রে ৬০ বছর পূর্ণ হলে এক্সটেনশনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। এ ছাড়াও উনার নামে ম্যানেজিং কমিটিতে অনেক অভিভাবক অসংখ্য অভিযোগ করেছিলেন। এতোকিছুর পরও প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক ও পরিচালনা কমিটি উনাকে শোকজ করার পরিবর্তে হোস্টেল সুপার দায়িত্ব দিয়ে পুরস্কৃত করলেন।
আল হেলাল একাডেমীর দাতা সদস্য ও অর্থ পরিচালক নুরুল আমিন হামিদি বলেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক মনসুরের মৃত্যুর পর পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল হক। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় জামায়াত নেতা কালিম উল্লাহ গং সহকারি শিক্ষক ফখরুদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। নিয়ম বহির্ভুত হওয়ার কারনে আমি জোরালো ভাবে এর প্রতিবাদ করি। আমার প্রতিবাদের মুখে পরবর্তীতে আব্দুল হককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষককে বাদ দিয়ে ফখরুদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক করা হয়। ফখরুদ্দিন অবসরে গেলেও বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি বিষয়ে পিছনে থেকে আধিপত্য বিস্তার করেন। সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার কথামতো।
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক ফখরুদ্দিন বলেন, পরিচালনা কমিটি আমাকে মৌখিকভাবে হোস্টেল সুপার ও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে থাকার জন্য বলেছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক কম থাকায় পাঠদান করতেছি। হোস্টেল সুপার পদে থাকার কারনে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাত যাপন করি। প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, ফখরুদ্দিন বর্তমানে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে আছেন। তার বিষয়ে পরিচালনা কমিটি এখনো কোন সিদ্ধন্ত নেয় নি। শিক্ষক কম থানায় উনি বিদ্যালয়ে আছেন। শিক্ষক নিয়োগ হলে উনি চলে যাবেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুল হক বলেন, গত ৯জুন পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বিদ্যালয়ে নতুন রুটিন করা হবে। রুটিন তৈরি করার জন্য ৩জন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নতুন রুটিনে ফখরুদ্দিনের নাম থাকবে না। রুটিন তৈরি হওয়ার পর খন্ডকালীন শিক্ষক এবং হোস্টেল সুপারের পদে ফখরুদ্দিন থাকবেন না। তিনি চলে যাবেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিন বলেন, একজন শিক্ষক অবসর গ্রহনের পর বিদ্যালয়ে পাঠদান করা নিয়ম বহির্ভুত। জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার শফি উল্লাহ বলেন, একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে থাকতে হলে শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগবে। অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতিত বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে থাকতে পারবেন না। শিক্ষক ফখরুদ্দিনের বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, এভাবেতো চলতে দেয়া যায়না। আমি এ বিষয়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলবো। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।