কামরুল আরেফিন
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশির) সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল মাধ্যমিকের স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে পরীক্ষা নিতে হবে। মাউশির এমন নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলিকে দেখিয়েছেন ফেনী সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতি।
গত ২৮ মে ‘দৈনিক আমার ফেনী’ পত্রিকায় মাউশি’র নির্দেশনা মানছে না নবনির্বাচিত সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতি! শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও টনক নড়েনি সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির। অভিন্ন প্রশ্নপত্র প্রনয়নের বিষয়টি তখন প্রতিবেদকের কাছে শিক্ষক সমিতির শীর্ষ নেতা অস্বীকার করলেও সংগঠনটি অবৈধ প্রশ্নপত্র-প্রণয়ন, সরবারাহ ও বিক্রয় বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার পাঁচগাছিয়া এ. জেড. খাঁন স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজ, ফকিরহাট আবু বকর উচ্চ বিদ্যালয়, বাগেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, দৌলতপুর হক বাহাদুর উচ্চ বিদ্যালয়, ফাজিলপুর ডব্লিউ.বি.কাদেরী উচ্চ বিদ্যালয় ও কালিদহ এস.সি.উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, ৮ম-৯ম শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষার ও ১০ম শ্রেণির প্রাক-নির্বাচনী গনিত বিষয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র শুধু বিদ্যালয়ের নাম ছাড়া হুবহু মিল রেখে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখাযায়, সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির আওতাধীন শহরে অবস্থিত ফেনী সেন্ট্রাল উচ্চ বিদ্যালয়, ফেনী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, ফেনী পৌর বালিকা বিদ্যানিকেতন, ফেনী গিরিশ অক্ষয় একাডেমি, ফেনী শাহীন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ এবং শহরের সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও শহরের বাইরে লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরো আনুমানিক ১০-১৫টি বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষক কর্তৃক প্রণীত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও সদর উপজেলার ৬১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে আনুমানিক ৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতি প্রণীত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
৫০টির অধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিকট প্রণীত প্রশ্নপএ বিক্রয় বাণিজ্যের মতো অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ফকিরহাট আবু বকর উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ও পাঁচগাছিয়া এ. জেড.খাঁন স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে। জেলা শিক্ষক সমিতির অনেক শিক্ষক নেতা মাউশির নির্দেশনা বহির্ভূত বেআইনি তথা অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি করেন।
সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, হুবহু মিল রেখে প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ার বিষয়টি সম্বন্ধে আমার কোন ব্যক্তিগত মন্তব্য নেই। তিনি আরো বলেন স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছে এবং সেই মোতাবেক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী বলেন, জেলা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতিকে মৌখিকভাবে অবৈধ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন না করার জন্য অবগত করি। এছাড়াও তিনি অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফকির আহাম্মদ ফয়েজ প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মোবাইলের নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা দেখিয়ে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে প্রতিবেদকের মোবাইল নাম্বার থেকে করা কল গ্রহণ করেননি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হুবহু মিল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়ে থাকার বিষয়টি তদন্ত করা হবে। উক্ত অবৈধ কাজে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।