৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
শিরোনাম
সিলোনিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩, আহত ১০ ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২ ব্যবসায়ীসহ ৪ জনের জরিমানা শিক্ষার্থীদের ভীতি দূর করতে গণিত ফেস্টিভ্যাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- গোলাম মো. বাতেন দাগনভূঞায় পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত কক্সবাজারে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন মোটবীতে তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহায়তা বিতরণ সোনাগাজীর পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার দলীয় কর্মীর চেহারা যারা বিকৃত করে দেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা দেশের চেহারা বিকৃত করে ফেলবে বইনামা লেখক পুরস্কারের জন্য পাণ্ডুলিপি আহ্বান পরশুরাম উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ঢাকায় গ্রেপ্তার 
  • প্রচ্ছদ
  • এক্সক্লুসিভ >> জাতীয় >> টপ নিউজ >> দাগনভূঞা >> ফেনী
  • ছোট ফেনী নদী গিলে খেলো প্রভাবশালীরা
  • ছোট ফেনী নদী গিলে খেলো প্রভাবশালীরা

    দৈনিক আমার ফেনী

    জমির বেগ
    ছোট ফেনী নদীর জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহি গোবিন্দ অংশটির একসময় প্রস্থে চড়া ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ ফুট। স্থানীয়রা জানান, নদীটি প্রস্থে চড়া ছিল ২১৫ লিং থেকে ২৪০ লিং পর্যন্ত। কালের আবর্তে সেখানে এখন নেই নদীটির স্মৃতিচিহ্নও। শতশত প্রভাবশালী গিলে খেয়েছে নদীটি প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ।
    বৈশ্বিক ঊষ্ণায়নের প্রভাবে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ দুর্যোগ আসছে, তার মধ্যে নদী হত্যা অন্যতম কারণ। বিভিন্ন নদীতে নাব্যতা কমে যাওয়ার পর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার নিচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ। সরকার ইতোমধ্যে ৮০০ কিলোমিটার নদীপথ খনন করেছেন। বড় প্রকল্পগুলো হাতে নেয়ায় অনেক নদীর নাব্যতাও ফিরে পাচ্ছে। আর সেখানে ফেনীতে একের পর এক নদী দখল করা হচ্ছে।
    জানা যায়, নদীর মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড হলেও বিভিন্ন প্রশাসনের নীতিমালায় উপজেলা প্রশাসন নদী পারে ভূমি দিতে পারেন বন্দোবস্ত। সে সুযোগে বিভিন্ন সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে নদীর পাড়ে হাঁস-মুরগীর খামার ও কৃষি কাজ করা কথা বলে কেউ কেউ নিয়েছেন নদীটির বিভিন্ন অংশ বন্দোবস্ত। নদীর পাড় বন্দোবস্ত নিয়ে এক সময় তারা দখল শুরুয করেন মূল নদী। গিলে খেয়ে ফেলেন পুরো নদী। আবার কেউ কোন রকম বন্দোবস্ত ছাড়াই দখল করে আছেন নদীটি। নদীটিতে বর্তমানে রয়েছে রাস্তা, দোকানপাট, মানুষের ঘর-বাড়ি। জানাযায়, বর্তমানে মোল্লাঘাটা থেকে সদর উপজেলার কাশিমপুর পর্যন্ত নদীর উপর দিয়ে রয়েছে ৮টি সড়ক। ২৬৫৩ দাগেই রয়েছে এলজিইডির ৪টি সড়ক।
    নদীর উপর বাড়ি নির্মানকারীদের মধ্যে একজন জায়লস্কর হাই স্কুলের অফিস সহকারী রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার স্বামী জমিটি বন্দোবস্ত নেয়ার পর থেকে (১৯৮৯ সাল থেকে) আমরা এখানে বাড়ি-ঘর করে বসবাস করছি। ২০০১ সালে আমি এখানে পোলট্রি ফার্মও করেছি। বাড়ি-ঘর শুধু আমরাই তৈরি করিনি আমাদের মতো শতশত লোক এখানে বন্দোবস্ত নিয়ে বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, একটি মহল আমার কাছে টাকা চায়, চাঁদা দাবী করে, তারা আমার কাছে জমি চায়। আমি না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমাকে সরকার যোগ বিয়োগ করেই জমিটি দিয়েছে। সরকার যদি নদী উদ্ধার করে তাহলে শুধু আমার জমি কেন পুরো নদীই উদ্ধার করতে হবে। বর্তমান ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়ক হওয়ায় রাস্তার পাশে ড্রেন ও কালভার্টটি সড়কে নিয়ে যায়। সেজন্য এখানে এখন কালভার্টটিও নেই।
    স্থানীয় ৮ নং জায়লস্ক ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বারাহি গোবিন্দ গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে মো. সিরাজুল হক বলেন, দাগনভূঞা থানার ১৩৬ নং বারাহি গোবিন্দ মৌজার বি.এস ১৬১০ নং খতিয়ানের ১৫ দাগের ভূমি হইতে এক বা ততোধিক মাইলের মধ্যে তার কোন কোন বসত ঘর নাই। ১৫ দাগে অবস্থিত বসতঘর জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় এবং পাকা রাস্তা থেকে নীচু হয়ে যাওয়ায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাই চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বসতঘর নির্মারে জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন । আবেদনের পর তিনি বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করেন।
    সিরাজুল হক বলেন, ২৬৫৩ দাগে ৭২-৭৩ সালের নথি আছে। খতিয়ান নম্বার ৩২৩। ৮৫-৮৬ সালে আমি আবেদন করেছি। ৮৮তে আমাকে বন্দোবস্ত দিয়েছে। তখন থেকে আমি এখানে বসবাস করতেছি। আমার পূর্বে দক্ষিন দিকে অনেকে বন্দোবস্ত নিয়েছেন। প্রভাবশালী আবদুল গোফরান মেম্বার, তার ভাইয়ের নামে নিয়েছেন, আবদুর রব বিক্রি করেছেন উনারা নিয়েছেন। অন্যান্য যারা প্রভাবশালী তারা বিনা দলিলে জমি দখল করে রেখেছেন। বিডিআর ক্যাম্পের সেখানে তখন মরা নদী ছিল, সেখানে কিছু ছিলোনা। বিডিআরের রাস্তা করার জন্য এতো বড় ক্যাশ টাকা ছিলোনা। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে রাস্তা করে দেয়া হয়েছে। জহির উদ্দিন চিশতীর নাম ২৬৫৩ দাগে আড়াই একর নথি আছে। মোতালেবের নামে ৫০, আবু তাহের, নিজাম উদ্দিনের নামেও বন্তোবস্ত আছে। ফেনী সাবেক চেয়ারম্যান কোব্বাদ আহম্মদ ও ১০ একর জায়গা বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এভাবে কমপক্ষে ১০০ জনের নামে বন্দোবস্ত আছে। হাবিব উল্যাহর নামে আছে, আবুল কালাম, ওহাব চেয়ারম্যান, মনু মিয়া, ইদ্রিস মিয়া, এরশাদ উল্যাহর নামে আছে, ওদুদের নামে আছে। এ নদী শুধু আমি বন্দোবস্তী নিয়নি। শতশত ব্যক্তি বন্দোবস্ত নিয়েছে। অনেক প্রভাবশালী বন্দোবস্ত ছাড়াই দখল করে রেখেছে। ২৬৫৩ দাগে প্রায় ১২শ একর জমি আছে। বিজিব ক্যাম্পে আছে ৫ একরের মতো।
    জানাযায় নদীটির ২৬৫২ দাগে প্রায় দুই হাজার একর ও ২৬৫৩ ও ২৬৫৪ দাগে আরো বেশি জমি আছে। নদীটির বারাহি গোবিন্দের পুরো অংশই দখল হয়ে গেছে। বারাহি গোবিন্দের আগে পরে নদীটি আবার ঠিকমতো আছে।
    বন্দোবস্তকারি ও অবৈধ দখলকারীদের মধ্যে অনেকে বলেছেন ১৯৭২ সালের পর থেকে নদীটি মরতে শুরু করেছে। বর্তমানে বারাহি গোবিন্দ অংশে নদীটির অস্তিত্ব নেই সত্য। তারা আরো বলেন, যাথাযথ নিয়ম অবলম্বন করেই তারা নদীটির পাশের বিভিন্ন অংশ বন্দোবস্ত নিয়েছেন।
    স্থানীয় নুরুল আমিন, আবদুর রশিদ, মো. শাহজাহান, আবদুল খালেক ও ফারুক জানান, নদীটি বিভিন্ন ব্যক্তি দখল করে রেখেছে। সিরাজুল হক নামে এক ব্যক্তি নতুন করে যেখানে কালভার্ট ছিল সেখানে বাড়ি নির্মাণ শুরু করলে তারা দাগনভূঞা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তারা ছোট ফেনীর নদীর শ্রোতধারার মাঝখানে সিরাজুল হকের বহুতল ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা জানান, গত বছর পর্যন্ত বিজিবি ক্যাম্পের পানি ও স্থানীয় লোকালয়ের পানি এ ছোট ফেনী নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো। তারা জানান, সিরাজুল হকের দেখাদেখি নদীর পাশের অন্যরাও নদী দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মান করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
    পরিবেশবাদীরা বলেন, নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে যেতে হবে আরও কঠোর অবস্থানে। নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয়সহ সব জলধারাকে দখলমুক্ত করে এতে পানি ধারনের ব্যবস্থা না করলে দেশ অগ্রসর হবে অপূরনীয় ক্ষতির দিকে। জলবায়ু উদ্বাস্ত হবে উপকূলীয় এলাকার কোটি কোটি মানুষ। দেশ থেকে নদী হারিয়ে গেলে বিপন্ন হবে পরিবেশ।
    দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, ছোট ফেনী নদীর এ অংশটি দখল হয়ে গেছে এটি খুবই দুঃখের ব্যাপার। এটি দখলমুক্ত করে ছোট ফেনী নদীকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এখনই প্রয়োজন।
    পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, নদীটি আমরা কাউকে ইজারা দিইনি। উপজেলা প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে কিনা জানা নেই।
    ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, নদীতো এভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কথা নয়। আমরা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবো।

    আরও পড়ুন

    সিলোনিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৩, আহত ১০
    ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২ ব্যবসায়ীসহ ৪ জনের জরিমানা
    শিক্ষার্থীদের ভীতি দূর করতে গণিত ফেস্টিভ্যাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- গোলাম মো. বাতেন
    দাগনভূঞায় পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
    কক্সবাজারে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন
    মোটবীতে তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহায়তা বিতরণ
    সোনাগাজীর পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার
    দলীয় কর্মীর চেহারা যারা বিকৃত করে দেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা দেশের চেহারা বিকৃত করে ফেলবে