সোনাগাজী প্রতিনিধি
সোনাগাজীর আল হেলাল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুকের কারসাজিতে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় এক শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ও রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন আরেক শিক্ষার্থী। ইংরেজী প্রথম পত্রের পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন সিজান ধরা পড়লেও শিক্ষক ওমর ফারুকের প্রভাবে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। অভিযোগ উঠেছে ঘটনাটি কেন্দ্র সচিব, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তাকে অবহিত না করেই শিক্ষার্থী সিজানের পরিবারকে ম্যানেজ করে সমাধানের চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুকসহ অন্য শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আল হেলাল একাডেমীর নিয়মিত ছাত্র হিসেবে এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করেন শাখাওয়াত হোসেন সিজান নামের এক শিক্ষার্থী। তার রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ২০১১৫৬৬৬৩২, বাবার নাম বেলাল হোসেন পারভেজ ও মায়ের নাম শিউলি আক্তার। পরীক্ষায় অংশগ্রহনের জন্য প্রবেশপত্র নিতে আল হেলাল একাডেমীতে গেলে শাখাওয়াত হোসেন নামে আরেকজন অনিয়মিত শিক্ষার্থীর (শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০) প্রবেশপত্র দেওয়া তাকে হয়। যার রেজিষ্টেশন নম্বর ১৮১১৮৭৮৬৮০। পিতার নাম বেলাল হোসেন ও মাতার নাম লাইলি বেগম। রেজিষ্ট্রেশনের সাথে মিল না থাকায় প্রবেশপত্রটি নিতে অস্বীকৃতি জানায় নিয়মিত শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন সিজান। পরে কর্তব্যরত শিক্ষক ফয়েজ আহম্মদ তাকে প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুকের কাছে নিয়ে যায়। শিক্ষক ওমর ফারুক শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন সিজানকে এটা দিয়ে পরীক্ষা দিতে কোন সমস্যা হবেনা বুঝিয়ে তার হাতে প্রবেশপত্রটি তুলে দেন।
শাখাওয়াত হোসেন সিজান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কথামতে বাংলা প্রথম, দ্বিতীয়পত্র ইংরেজী প্রথম পত্র পরীক্ষা দেওয়ার সময় আমার কোন সমস্যা হয়নি। ইংরেজী দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দেওয়ার সময় হল পর্যবেক্ষকের হাতে ধরা পড়লে সে প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক স্যার আমাকে এ প্রবেশপত্র দিয়ে পরীক্ষা দিতে বলেছেন বলে জানান। পরে হল পর্যবেক্ষক ফারুক স্যারকে ডেকে আনলে বিষয়টি সমাধান হয় ও আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করি।
শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেন সিজানের মা শিউলি আক্তার বলেন, আমি ঘটনাটি জানতে পেরে প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুকের শরনাপন্ন হলে তিনি কাউকে না জানাতে অনুরোধ করেন। তিনি আমাকে বলেছেন কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে বিষয়টির সমাধান করে দিবেন। আমি অনড় অবস্থান নিলে তিনি ছেলের পিতার জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পরামর্শ দেন। আমি সেটা করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে তার রেজিষ্ট্রেশন কার্ডটি নিয়ে অনিয়মিত শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেনের রেজিষ্টেশন কার্ডটি তুলে দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা ও পরীক্ষা পরবর্তী ফলাফলের কোন সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। ছেলের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে আশংকায় রয়েছি তবে পরীক্ষায় অংশগ্রহনে অসুবিধা হওয়ার সম্ভাবনায় আপাতত চুপ থেকে পুরো বিষয়টি গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছি বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, আমার ছেলে প্রথম দুইটি পরীক্ষার উত্তরপত্রে তার রেজিষ্ট্রেশন নম্বার ব্যবহার করে কিন্তু ফারুক স্যারের পরামর্শে পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ব্যাবহার করেন। প্রধান শিক্ষকের কারনে আমার ছেলে অন্য শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ড ব্যবহার করে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয় কোচিং না করলেও তিনি আমার ছেলের কাছ থেকে ১৫শ টাকা কোচিং ফি আদায় করেন। তার ছেলের ফলাফলে সমস্যা হয়ে যদি শিক্ষা জীবনের বিপর্যয় ঘটে তবে ফারুক স্যার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলেও শিউলি আক্তার জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল হেলাল একাডেমীর এক শিক্ষক জানায়, ওমর ফারুক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে বিদ্যালয়টিতে একটার পর একটা কেলেংকারির জন্ম দিয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার না পাঠিয়ে অনিয়মিত ছাত্রের রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার পাঠানোয় সমস্যাটি তৈরী হয়। বিষয়টি তখন ধরা পড়লে আমরা তাকে সংশোধনের জন্য বললে তিন কিছুই হবেনা বলে এড়িয়ে যায়।
আল হেলাল একাডেমীর সহকারী শিক্ষক সেলিম আল দীন জানান, বিষয়টি বোর্ডে গিয়ে সংশোধন করা হয়েছে। এই বিষয়ে আর কোন সমস্যা নাই। প্রধান শিক্ষকসহ আমি বোর্ডে গিয়েছি। সারা কুমিল্লা বোর্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভুল ক্রুটি হলে অবশ্যই সংশোধনের ব্যবস্থা আছে। বোর্ডের কাজ হচ্ছে যে কোন সমস্যা হলে সমাধান করা। ভুলের ধরণ অনুসারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্যাংক ড্রাপ্ট জমা দেওয়া।
প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, বিষয়টি সমাধানের জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করা হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে লিখে দিয়েছেন। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেছেন-যেহেতু সে পরীক্ষা দিচ্ছে, পরীক্ষা দিক। পরীক্ষা শেষ করে স্ব-শরীরে তাকে নিয়ে বোর্ডে যেতে বলেছেন। যে রোলে সে পরীক্ষা দিচ্ছে, সেই রোলেই তার রেজাল্ট হবে। রেজিষ্ট্রেশন নম্বর সংশোধন করা হবে। শিক্ষার্থী ও তার মায়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সোনাগাজী মো. ছাবের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব জয়নাল আবদীন বলেন আমাকে হল সুপার বা হল পর্যবেক্ষক ঘটনাটি নিয়ে কিছুই জানায়নি। একই বক্তব্য দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন। তিনি বলেন ঘটনার বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। প্রতিবেদকের কাছে জানতে পেরে শিক্ষক ফারুককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করে সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে বলে আমাকে অবহিত করেন।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। এরকম হয়ে থাকলে শিক্ষক ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।