২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • এক্সক্লুসিভ >> জাতীয় >> টপ নিউজ >> দেশজুড়ে >> ফেনী >> ফেনী শহর
  • দোকান মালিকের তবে ভাড়া দেন শহর ব্যবসায়ি সমিতি!
  • দোকান মালিকের তবে ভাড়া দেন শহর ব্যবসায়ি সমিতি!

    দৈনিক আমার ফেনী

    বিশেষ প্রতিবেদক
    * ভাগ-বাটোয়ারায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একাট্টা
    * কমিউনিটি পুলিশের নামে আদায়কৃত চাঁদার নেই হদিস
    * চলছে সালিশ বানিজ্য ও ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়
    ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির বিরুদ্ধে সালিশ বানিজ্য, ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়, দোকান মালিকদের ঘর প্রভাব খাটিয়ে অন্যের কাছে ভাড়া দেয়া, সমিতির টাকা আত্নসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের শেষ নেই শহর ব্যবসায়ী সমিতির বিরুদ্ধে। তাদের অনিয়ম ও অগঠনতান্ত্রিক কার্যক্রমের কারণে সমিতির বেশ কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সমিতি থেকে বের হয়ে গেছেন বলেও জানাযায়। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ নেতা পারভেজুল ইসলাম হাজারী শহরের স্থানীয় বিএনপির প্রভাবশালী তিনজন ব্যবসায়ী নেতাকে নিয়ে পুরো সমিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে একাধিক ব্যবসায়ী জানান।
    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ী জানান, ব্যবসায়ী সমিতির অফিসটি বর্তমানে শালিস বানিজ্যের একটা আখড়ায় পরিনত হয়েছে। ব্যবসা সংক্রান্ত নয় এমন অনেক ঘটনাও দালালের মাধ্যমে এই অফিসে এনে টাকার বিনিময়ে সমাধান করে দেয়া হয়। সমাধানতো করা হয়না প্রভাবখাটিয়ে এক পক্ষের উপর রায় চাপিয়ে দেয়া হয় এমন অনেক ঘটনা এই অফিসে অহরহ ঘটছে।
    ফেনী শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে জমির মালিকের যুক্তিসংগত আপত্তি সত্বেও তার ভাড়াটিয়াদের তিন বছর করে দোকান ঘর ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছেন ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতি। শহর ব্যবসায়ী সমিতির লিখিত এ রায়ে বিস্ময় প্রকাশ করে দোকান ঘরগুলোর মালিক বয়োবৃদ্ধ ইফতেখারুল আলম। তিনি বলেন, দোকান ঘরগুলো আমার। পারভেজ হাজারী কিভাবে দোকানগুলোর ভাড়ার চুক্তিনামার মেয়াদ তিন বছর বাড়িয়ে দেয় তা আমার মাথায় কিছুতেই আসছেনা। তিনি ক্ষোভের সহিত বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে শহর ব্যবসায়ী সমিতির কাছে আপিল করেছি। দেড় মাস পার হয়ে গেলো অনেকবার ধরনা ও দিলাম এখনও কোন সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি তারা।
    শহরের শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কের পাঠান বাড়ির রাস্তার মুখে অবসরপ্রাপ্ত বীমা কর্মকর্তা ইফতেখারুল আলমের তিনটি দোকান ঘর রয়েছে। দোকান ঘরগুলো যথাযথভাবে ভাড়াটিয়া চুক্তিনামা অনুযায়ি তিনি ভাড়া দেন ফেরদৌস আরা চৌধুরানী ও লক্ষন চন্দ্র লদ’র কাছে। ফেরদৌস আরার সাথে চুক্তিকৃত দোকান দুটিতে রয়েছে জালালিয়া সুইটস এন্ড কনফেকশনারী ও মেসার্স চৌধুরী টাইলস্ নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অপর দোকান ঘরের ভাড়াটিয়া লক্ষন চন্দ্র লদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শ্যামলী ফার্মেসী।
    ইফতেখারুল আলম জানান, ফেরদৌস আরার সাথে তার দোকান ঘরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৫ মাস আগেই তিনি দোকান ঘরগুলো মেয়াদ শেষে ছেড়ে দেয়ার জন্য জানিয়েছেন। তখন ভাড়াটিয়া কিছু না বললেও পরবর্তীতে শহর ব্যবসায়ী সমিতির কাছে দোকান ঘরটির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি লিখিত অভিযোগ দেন। লক্ষন চন্দ্র লদের কাছে থাকা অপর দোকন ঘরটি (শ্যামলী ফার্মেসী) মেয়াদ এক বছর আগে শেষ হলেও তিনি কিছু দিনের মধ্যে ছেড়ে দিচ্ছি, ছেড়ে দিচ্ছি বলে এক বছর অতিবাহিত করে ফেলেন। পরবর্তীতে লক্ষন চন্দ্র লদও শহর ব্যবসায়ী সমিতির কাছে মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়ার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে জমি ও দোকান ঘরের মালিক ইফতেখারুল আলমও শহর ব্যবসায়ী সমিতির কাছে একটি অভিযোগ দেন। যাতে তিনি উল্লেখ করেন তার ভাড়াটিয়ারা দোকন ঘর ভাড়া নেয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দোকান ঘর ছেড়ে দিচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি শহর ব্যবসায়ী সমিতিকে লিখিত অনুরোধ করেন।
    শহর ব্যবসায়ী সমিতি দুই পক্ষের অভিযোগগুলো আমলে এনে তাদের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় বসার শুরুতেই দুই পক্ষ থেকে হাজিরার কথা বলে ব্যাবসায়ী সমিতির প্যাডে স্বাক্ষর নিয়ে নেন। এর কিছুদিন পর তাদের কাছ থেকে নেয়া স্বাক্ষর করা প্যাডে রায় লিখে দেন শহর ব্যবসায়ী সমিতি। রায়ের তারিখ লেখা ছিল ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। রায়ে স্বাক্ষর করেন সমিতির সভাপতি মোশারফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী, প্রচার সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন হেলালসহ সমিতির প্রভাবশালী ৫ কর্মকর্তা। রায়ে বিভিন্ন কারনে ভাড়াটিয়াদেরকে আরও তিন বছরের জন্য ব্যবসা চালিয়ে নিতে অনুমতি দেয়া হয়। রায়ে উল্লেখ করা হয় ১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৩০জুন ২০২৬ সাল পর্যন্ত ভাড়াটিয়াদের সাথে নতুন করে তিন বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। রায় আমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
    এদিকে রায়ের জন্য কোন সময় নির্ধারণ না করে জমির মালিককে না জানিয়ে ও প্রতারণার মাধ্যমে সাদা কাগজ ও প্যাডে স্বাক্ষর নিয়ে একতরফা ভাড়াটিয়ার পক্ষে রায় দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন দোকানের মালিক ইফতেখারুল আলম। তিনি দৈনিক আমার ফেনীর কার্যালয়ে এসে জানান, আমার ঘর, আমাকে না জানিয়ে, আমার অনুমতি ছাড়া শহর ব্যবসায়ী সমিতি কিভাবে নতুন করে ভাড়া দেন তা আমার আমলে আসছে না। সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারীকে বার বার জানিয়েছি এ ভাড়াটিয়াদের আমি রাখবো না। তাদের লেনদেন ভালো নয়। তাছাড়া তাদের সাথে আমার চুক্তির মেয়াদও শেষ। কিন্ত পারভেজ হাজারী আমার কথা আমলেই নিলেন না। আমি রায়ের বিরুদ্ধে দেড় মাস পূর্বে আপিল করেছি। এখনও এ ব্যাপারে সমাধান দিতে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না তারা। আপিল ফি বাবদও দুই হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
    জমি বা দোকান ঘর মালিকের অনুমতি বা ইচ্ছাছাড়া কোন ব্যবসায়ী সংগঠন এভাবে অন্যের দোকান ঘর ভাড়াটিয়ে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে ভাড়া দিতে পারে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক শহরের শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতানের (গোলাপ মার্কেট) স্বাত্তাধিকারী চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজিজ রাজীব বলেন, এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। দোকানের মালিক যদি ভাড়াটিয়ার সাথে চুক্তিনামার মেয়াদ নবায়ন না করেন, তাহলে কোন সমিতি, সংগঠন বা কোন কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব নয় চুক্তি মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া। তাছাড়া দোকান ঘরের মালিক চুক্তির মেয়াদ শেষ না হলেও ভাড়াটিয়াকে তিন মাস সময় দিয়ে দোকান ঘর ফেরত চাইতে পারে। তিনি বলেন আমিও ব্যাপারটি সম্পর্কে অবগত। পারভেজুল ইসলাম হাজারীর সাথে আমিও এ ব্যাপারে কথা বলেছি। তিনি মালিকের কথা মতো সমাধান করে দিবেন বলেছিলেন।
    ফেনী ‘ল কলেজ’র অধ্যক্ষ এডভোকেট এ কে এম মাজহারুল হক চৌধুরী বলেন, একজন ভাড়াটিয়া সব সময় একজন ভাড়াটিয়ায়। তিনি সব সময় মালিক কর্তৃক উচ্ছেদ যোগ্য। বাড়ি বা দোকান ঘরের মালিক তাকে চুক্তি অনুযায়ী বা নিজস্ব প্রয়োজনে নোটিশের মাধ্যমে উচ্ছেদ করতে পারে। এখনতো বিভিন্ন সমিতি অনাধিকার চর্চা করছে। তাদের কোন এখতিয়ার নেই বাড়ির মালিকের সম্মতি ছাড়া চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়ার। বিভিন্ন সমিতি একটি কাজই করতে পারে মালিক ও ভাড়াটিয়ার মনোমালিন্য হলে দুই পক্ষেকে বসানো উদ্যোগ নিতে পারে।
    বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিষ্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন বলেন, এ দেশে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আপনি ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে পারবেন। জমি বা দোকানের মালিক ভাড়াটিয়াকে চুক্তি অনুযায়ী ১, ২ বা ৩ মাস যা-ই থাকুক সেই সময়ের মধ্যে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে পারেন। লিখিত চুক্তি না থাকলে মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী নোটিশ দিতে পারেন। বাড়িওয়ালা নিজের প্রয়োজন ছাড়াও বেশ কিছু কারনে ভাড়াটেকে উচ্ছেদ করতে পারেন। ভাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ থাকলে, সাবলেট দিলে, ভাড়া বকেয়া থাকলে, ভাড়াটে-স্বত্ব অন্য লোকের কাছে হস্তান্তর করলে বিভিন্ন কারনে উচ্ছেদ করতে পারেন। মেয়াদ শেষে বা নোটিশ পাওয়ার পর ভাড়াটে যদি বাড়ির দখল না ছাড়ে তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। এ সম্পর্কে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৬ ধারায় বাড়ির দখল বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভাড়াটের ব্যর্থতাকে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। ভাড়াটে যদি বাড়ির দখল না ছাড়েন, তাহলে বাড়িওয়ালার অভিযোগের ভিত্তিতে আদালত তাকে ভাড়ার ১০গুন অর্থদন্ডে দন্ডিত করবেন। ভাড়াটের কোন অধিকার নেই মেয়াদ শেষে বা নোটিশ প্রাপ্তির পর বাড়ি দখল করে রাখার।
    এ দিকে মামলার রায়ের এক পাশে লেখা আছে অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী ও ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীর কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মামলার রায় নিয়ে যাতে কেউ ভয়ে মাথা না ঘামায় সে জন্য কৌশলে পারভেজুল ইসলাম হাজারী বড় বড় রায়গুলোতে এমপি মহোদয় ও মেয়রের নাম ব্যবহার করেন।
    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী জানান, এ পর্যন্ত কোন সালিশ আমাদের নলেজে দিয়ে করা হয় নাই, এটা আমি ওপেন বলতে পারবো। এটা আমার দপ্তরের বিষয়ও না। কারও ব্যক্তিগত সমস্যা ও অন্যায় নিজাম হাজারী এমপি ও স্বপন মিয়াজী নিবে না। আমাদের অবগত করার বা আমাদের অনুলিপি পাঠানোর কোন দরকারও নেই। আমরা কখনও এগুলো দেখিও না।
    এব্যাপারে জানতে চাইলে শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, এক দোকানী দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে। মার্কেটে তাদের ৪০ লাখ টাকার মতো পাওনা রয়েছে। লক্ষন বাবু প্রায় ৯ বছর ধরে দোকান করছেন। তার মার্কেটে প্রায় ১০ লাখ টাকা বাকী আছে। শহীদুল্লা কায়সার সড়কের দোকান মালিকরা তাদের ভাড়াটিয়াদের সাথে অন্যায় করছে। এসব দোকানিরা অনেক বছর ধরে ৪-৫ হাজার টাকা ভাড়ায় দোকান করে আসছে। এখন এসব দোকান কোটি কোটি টাকা সেলামিতে ও লাখ লাখ টাকায় ভাড়া হচ্ছে। তাই দোকান মালিকদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আপনি কি দোকান ভাড়ার চুক্তিনামার মেয়াদ বাড়াতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমার একক সিদ্ধান্ত নয়। ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ দুই পক্ষের মতামত শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে রায় দিয়েছেন।
    শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কমিউনিটি পুলিশের নামে আদায় করা লাখ লাখ টাকা আত্নসাতের। জানাযায়, ফেনী বাজারের প্রায় দুই হাজার ৫০০ দোকান থেকে কমিউনিটি পুলিশের চাঁদা আদায় করা হয়। চাঁদার পরিমান মাসিক ৪৫০ টাকা থেকে সর্বোনিম্ন ১৫০ টাক। মাসে চাঁদা আদায় হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে ১৮ জন কমিউনিটি পুলিশ, ব্যবসায়ী সমিতির তিনজন স্টাপকে বেতন ও অফিস ভাড়া দেয়া হয়। কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের বেতন ৮হাজার টাকা করে। কয়েকজনের বেতন ৯ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসে খরচ দুই লাখ টাকার নীচে হলেও বাকী লাখ লাখ টাকার কোন হদিস নেই।
    নিজকুঞ্জুরার ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ব্যবসায়ী নিফাস ফুডস এর মালিক ফজলুল বারী বলেন, তার সাথে খাইয়ার আহম্মদিয়া ফ্লাওয়ার্স মেইলের মালিক নাছির কোম্পানীর সাথে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। ফ্লাওয়ার্স মেইল থেকে তাকে একটি চালান পঁচা মাল দেয়ায় তিনি তাকে টাকা দিচ্ছেলন না। মাল ফেরত নিতে বলেছিলেন। এ নিয়ে ফ্লাওয়ার মেইলের মালিক নাছির কোম্পানীর সাথে তার একটু ভুলবুঝাবুঝি হয়। এক পর্যায়ে নাছির কোম্পানি শহর ব্যবসায়ী সমিতির শরনাপন্ন হয়। ব্যবসায়ী সমিতির অফিস থেকে একদিন আমাকে ফোন দিয়ে জানানো হয় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে আসতে হবে। নছির সাহেব অভিযোগ করেছেন। আমি তাদের জানিয়েছি আমরা কেউ শহর ব্যবসায়ী সমিতির আওতাধীন নই। একজন নিজকুঞ্জুরা ও একজন খাইয়ারার ব্যবসায়ী। শহর ব্যবসায়ী সমিতি কেন আমাদের বিষয় সালিশ করবে। এর মাস খানেক পর শহর ব্যবসায়ী সমিতি থেকে এক তরফা একটি রায় দেয়া হয় আমার বিরুদ্ধে। যখন নাছির সাহেবের সাথে আমার লেনদেনে ঝামেলা ছিল তখন নাছির সাহেব আমার কাছে পেতো ১৬ লাখ টাকা। ব্যবসায়ী সমিতি আমাকে প্রায় ১২ লাখ টাকা সুদসহ ২৮ লাখ টাকা দেয়ার জন্য রায় দেন। অথচ আমি তাদের সালিস আমলেও নিয়নি, সেখানে যাইওনি। ফজলুল বারী জানান, পরবর্তীতে আমি আদালতে মামলা করি। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
    এদিকে রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী ব্যবসায়ী সমিতির মেয়াদ দুই বছর। অথচ ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতি আজ ৬ বছর এক কমিটি দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক একতরফাভাবে সকল সিদ্ধান্ত নেয়ায় সমিতির যুগ্ন সম্পাদক জুয়েলারী ব্যবসায়ী কাজী আরিফ রুবেল, নির্বাহী সদস্য নাছির স্টোরের মালিক ছায়েদুল হক বাবুল ও সহ-সভাপতি শহিদ অনেক দিন ধরে সমিতির কোন কার্যক্রমে আসেন না। কাজী আরিফ রুবেল ব্যবসায়ী সমিতির সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্ণীতির সহ্য করতে না পেরে প্রায় দেড় বছর ধরে সমিতির কার্যালয়ে যান না বলে জানাযায়।
    জানাযায়, ইসলামপুর রোডের জাবেদ রাইসের স্বাত্ত্বাধিকারী পাশার মেইলটি পারভেজ হাজারী নিজ জিন্মায় ভাড়া দিয়ে দেন। পরবর্তীতে চাপ সৃষ্টি করে পাশা থেকে চুক্তি নামায় স্বাক্ষর করে নেন। এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ী সমিতির সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।
    ছয় বছরেও শহর ব্যবসায়ী সমিতির শাখা কমিটিগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ছয় বছর ধরে কমিটি না হওয়ায় শাখা কমিটিগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে। নেই তাদের কোন কর্মকান্ড। জানাযায়, পারভেজুল ইসলাম হাজারী প্রায় দুই বছর ধরে তাকিয়া রোড থেকে অবৈধভাবে পরিবহণ থেকে চাঁদা তোলায় পৌরকর্তৃপক্ষের সাথে তার মতানৈক্য হয়। পরবর্তীতে তিনি চাঁদা আদায় করা থেকে কেটে পরেন।
    ফেনী বড় মসজিদের সামনে থেকে টাংক রোড পর্যন্ত সড়কের দুুুই পাশে ও ফেনী বাজারে ফুটপাতের দোকান থেকে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের নামে চাঁদা আদায় করা হয় বলে জানাযায়। সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত সহচর ও ব্যবসায়ী সমিতি অফিসের স্টাফ আবুল কাশেমের মাধ্যমে বাজারের ফুটপাতের চাঁদা আদায় করা হয়। ট্রাংক রোডের চাঁদা আদায় করে কৃষ্ণা, বিজয়সহ আরো কয়েকজন। চাঁদাবাজীর কথা প্রচার হয়ে যাওয়ায় একদিন একজনে দিয়ে চাঁদা আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফুটপাতের সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর দিলে আমাদের রিজিক শেষ হয়ে যাবে। চাঁদা দিয়ে দোকান করি একথা বললে আমরা দোকান নিয়েও বসতে পারবো না।
    বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী সবগুলো অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন বাজারে কমিউনিটি পুলিশের সংখ্যা ৩০ জন। কমিউিনিটি পুলিশের বেতন ও আনুষাঙ্গকি খরচ বাবদ প্রতি দোকানের এক সাটার থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। প্রয়োজনে ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে এসে সরেজমিনে তদন্ত করে দেখুন। আপনাদের জন্য সব উন্মুক্ত। ফুটপাতের চাঁদাবাজীর ব্যাপারে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। যদি ভিডিও ফুটেজ বা কারো কোন কথা রেকডিং থাকে প্রমান করুন। কৃষ্ণা, বিজয় এসব নামে কাউকে আমি চিনিও না। কারও কাছ থেকে অভিযোগ পেতেও পারেন, অভিযোগ সত্য কিনা তা যাচাই করতে হবে।

    আরও পড়ুন

    নরসিংদী কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৬ জঙ্গির তথ্য প্রকাশ
    তারেকের ভুলে বিএনপি নেতাকর্মীরা আবার বিপদে
    এ পোড়ানীতি কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের
    নিম্ন-মধ্যবিত্তের মানুষের পাশে খাবার হাতে নিজাম হাজারী
    এই তান্ডবের ‘গড ফাদার’ কে?
    হামলা-অগ্নিসংযোগে শুধু দুই সংস্থারই ক্ষতি ৮০০ কোটি টাকা
    আন্দোলন অব্যাহত রাখতে মরিয়া শিবির-ছাত্রদল
    মেধার অন্ধ অহংকারে অন্যকে অসম্মান করার অদম্য স্পৃহা থেকে বের হয়ে আসুন