মোতাহের হোসেন ইমরান
সোনাগাজীতে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দায়িত্বহীনতার কারণে গতকাল রোববার উপজেলার ১১০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রায় ৩০টির বেশি বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। এজন্য শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসারকে দায়ী করছেন শিক্ষক-অভিভাবকগন।
জানা যায়, গত শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সোনাগাজীর ৪টি ইউনিয়নে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকার একটি আদেশ দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান। আদেশটি তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতেও প্রচার করেন। এরপর রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ ১৪ ও ১৫ মে বন্ধ থাকবে। তবে প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষকগণ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এ আদেশটি আসার পর কয়েকজন শিক্ষক তাদের ফেসবুক আইডিতে মন্ত্রনালয়ের আদেশটি প্রচার করেন এ নিয়ে শুরু হয় বিভ্রান্তি। কেউ ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছে বন্ধ থাকবে আবার কেউ দিচ্ছে বিদ্যালয় খোলা থাকবে তবে পাঠদান বন্ধ থাকবে। মন্ত্রনালয়ের আদেশটি আসার পরে রাতের মধ্যে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে এসেছেন আবার অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন বিদ্যালয় বন্ধ মনে করে বিদ্যালয়ে আসেননি।
বিদ্যালয় বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিরাবাদ ইউনিয়নের একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, রাতে ইউএনও স্যারের একটি আদেশে দেখলাম আমাদের বিদ্যালয়টি রোববার বন্ধ থাকবে। তাই আমি ফেসবুকে এনিয়ে একটা পোষ্ট দিই। সকালে ১০টার দিকে এক শিক্ষকের মাধ্যমে জানতে পারি আরেকটি আদেশ এসেছে মন্ত্রনালয় থেকে। এরপর আমি নিজে স্কুলে যাই তবে আমার স্কুলের অন্য শিক্ষকরা দূর-দূরান্তের হওয়ায় তারা কেউ আসেনি। শিক্ষা অফিস থেকে যদি এ নিয়ে রাতে আদেশ পেতাম তাহলে স্কুল বন্ধ থাকত না।
শাহাদাত হোসেন নামের একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, এটা খুবই হাস্যকর। যেখানে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা সেখানে প্রাইমারি খোলা।
শেখ ফরিদ রনি নামের একজন শিক্ষক জানান, এটি সঠিক হয়নি, সবার জন্য সমান অধিকার হওয়া উচিত ছিল। বন্ধ হলে সবার জন্য বন্ধ। খোলা হলে সবার জন্য খোলা থাকবে।
একজন সংবাদকর্মী এনিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন,‘ সঠিক নির্দেশনার অভাবে আজ সোনাগাজীর কিছু প্রাইমারী স্কুল খোলা-কিছু বন্ধ। প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ঘুমে আছে। এই অফিসে দায়িত্বশীল কেউ আছে বলে মনে হয় না।’
সোনাগাজী উপজেলা শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের নির্দেশনা রয়েছে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে কিন্তু শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে কারণ ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি খারাপ হলে যেন স্থানীয় বাসিন্দারা বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্র বা শ্রেণীকক্ষে এসে অবস্থান নিতে পারে। মন্ত্রনালয়ের সিদ্বান্ত আসতে দেরি হওয়াতে ইউএনও স্যার ৪টি ইউনিয়নের বিদ্যালয় সমূহ বন্ধ থাকার একটি আদেশ দেন। পরে মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত আসাতে একটু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আমরা শুনেছি কিছু বিদ্যালয় বন্ধ ছিল কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেনি, বিষয়টা ক্ষতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ আবার কিছু বিদ্যালয় খোলা থাকার বিষয়টা আমিও শুনেছি। এটা শুনে আমার খারাপ লেগেছে। সোনাগাজীর ৪টি ঝুকিপূর্ণ ইউনিয়নের বিদ্যালয় সমূহ রোববার বন্ধ থাকার একটি আদেশ রাতে দেয়ার কিছুক্ষন পর জানতে পারি মন্ত্রনালয় থেকে আরেকটি আদেশ এসেছে। আমি তখন মন্ত্রনালয়ের আদেশের কপি ইউএনও সোনাগাজীর ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট দিই সবাই দেখার জন্য এবং সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল সাহেবকে দিই আদেশটি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য।