মোতাহের হোসেন ইমরান
সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের রিয়াজ উদ্দিন মুন্সিরহাট কেরামতিয়া (আর এম হাট কে) উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই বছর মেয়াদী পরিচালনা কমিটি গঠিত হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে। এ বছরের ডিসেম্বর মাসে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। পরিচালনা কমিটি গঠনের পরপর কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও গত ১৬মাসে কোন উপ-কমিটি গঠন করেনি। গত ১৩ এপ্রিল সভাপতি সভা ডেকে ৪টি উপ-কমিটি গঠন করেন। দ্রুত সভা ডেকে অর্থ উপ-কমিটি, ক্রয় উপ-কমিটি, ক্রীড়া উপ-কমিটি, আইনশৃঙ্খলা উপ-কমিটি গঠন করা হয়। বিদ্যালয় পরচালনা কমিটির ৪জন সদস্যকে ৪টি উপ-কমিটির প্রধান করা হয়।
এদিকে বিদ্যালয় পরচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য ও শিক্ষকদের অভিযোগ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাইফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী হারুন ও প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের সিদ্ধান্তে সবকিছু হয়ে আসছে। সভাপতি-প্রধান শিক্ষক নিজেরা সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিচালনা কমিটির অন্য সদস্যদের জানিয়ে দেন। কারো মতামতের গুরুত্ব দেয়া হয় না। উপ-কমিটি করেছে নামমাত্র। তাদের কোন কাজ বা ক্ষমতা থাকবে না।
এ বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিচালনা কমিটি গঠনের পর থেকেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে দৈনিক আমার ফেনী পত্রিকায় কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহলে তীব্র-নিন্দার ঝড় উঠে। একজন অভিভাবক বিদ্যালয়ের সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। অভিভাবকের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষাবোর্ড গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) অনিয়মগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য জিয়াউর রহমান শিপন বলেন, বছরে ৪বার অর্থাৎ প্রতি ৩ মাস পর পর স্কুলের অভ্যন্তরীন অডিট হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমান কমিটির মেয়াদ ১৬মাস পার হলেও আয়-ব্যায়ের কোন অডিট করা হয়নি। কমিটির সদস্যরা বারবার বলার পরেও আয়-ব্যয়ের কোন হিসাব দেয়া হয়নি। ১৬মাস পর এসে এখন ৪টি উপ-কমিটি গঠন করেছে নামমাত্র। এছাড়া ২০২২ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষনের জন্য অভ্যন্তরীণ আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষন কমিটি গঠন করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম তুষার নামের বিদ্যালয়ের একজন্য চুক্তিভিত্তিক শিক্ষককে অভ্যন্তরীণ আয়-ব্যায়ের হিসাব নিরীক্ষন কমিটির সদস্য করা হয়েছে যা নিয়মের মধ্যে নেই। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক অডিট কমিটির সদস্য হতে পারে না। প্রধান শিক্ষকের অনুসারী হওয়ায় ওই শিক্ষককে অডিট কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মো. খায়রুল আলম শিপন বলেন, ইউএনও তদন্ত করতে বিদ্যালয়ে আসার কথা শুনে তড়িঘড়ি করে দ্রুত সভা ডেকে ৪টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনুমোদনের পর পর বিভিন্ন উপ-কমিটি গঠনের মাধ্যমে কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন দায়িত্ব বন্টনের কথা থাকলেও কমিটি গঠনের ১৬মাস পর উপ-কমিটি করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন, তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন। পরে জানাবেন বলে (শনিবার রাত ৯টায়) ফোনটি কেটে দেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. নুরুল আমিন বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে একটা কমিটি গঠনের পর পর সদস্যদের নিয়ে কয়েকটি উপ-কমিটি করে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া। সবাই মিলে কাজ করলে কাজে স্বচ্ছতা থাকে। অনিয়মের সুযোগ কম থাকে। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক বিদ্যালয়ের অডিট কমিটির সদস্য হতে পারে না, এটা নিয়মবহির্ভূত।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান বলেন, ১৬মাস পরে এসে উপ-কমিটি গঠন ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক অডিট কমিটির সদস্য হয়েছে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। কয়েকদিনের মধ্যে এ বিদ্যালয়ের সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করা হবে।