১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
  • প্রচ্ছদ
  • টপ নিউজ >> ফেনী >> সম্পাদকীয়
  • মুরগি ও গরুর মাংসের দাম কমাতে এখনই আমদানি করা উচিত
  • মুরগি ও গরুর মাংসের দাম কমাতে এখনই আমদানি করা উচিত

    দৈনিক আমার ফেনী

    জমির বেগ
    ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংসের দাম কমাতে সরকারের উচিত এখনই আমদানির উদ্যোগ নেয়া। এসব পন্য আমদানি করলে যেহেতু কমদামে দেশের সাধারণ জনসাধারণকে তা খাওয়ানো যাবে, তাই এসব পন্য এ মুহুর্তেই আমদানি করে পন্যগুলোর দাম সহজলভ্য করা উচিত বলে মনে হয়।
    বাংলাদেশে গরু উৎপাদন, লালন-পালনে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দেশ। দেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠছে গরুর খামার, পোলট্রি খামার ও মাছের ঘের। অথচ পৃথিবীতে প্রতিটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশেই গরুর মাংসের দাম সবচেয়ে বেশি। ডুবাইতে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকা। ভারতে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় গরুর মাংস পাওয়া যায়। ডুবাইতে গরু উৎপাদন হয় না। তারা আমদানি করে যদি বাংলাদেশি টাকায় ৫০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে পারে তাহলে আমরা কেন ৭৫০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস কিনবো। ৭৫০ টাকা দরে গরুর মাংস কিনলে সেখানে পাওয়া যায় ৬০০ থেকে ৬৫০ গ্রাম মাংস। ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম নালার হাঁড় ও বাকীটা চর্বি। ভারতের মতো আমরাও গরু উৎপাদন করি। ভারতে যদি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করতে পারে আমরা কেন পারবো না। পোলট্রির মুরগি আমাদের কেন ২৮০ টাকায় কিনতে হবে। দেশিয় পোলিট্রি ও গরুর ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখতে মানে আমাদের মাংসের এ ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার এসব পন্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। তাদের সুবিধার্থে সরকার আমদানি বন্ধ রেখেছেন অথচ তারাই সঠিক দামে আমাদের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন না। দেশের কোটি কোটি জনগনের সাথে তারা বেঈমানী করছেন। তাদের ঠকাচ্ছেন।
    আমদানি করলে যদি বাজার দর স্বাভাবিক হয়ে যায় তাহলে আমদানি করাই এ মুহুর্তে উচিত। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ কি?

    উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠ, রাজ বল্লভ, ইয়ার লতিফ গংদের কেউই ছিলনা রাজনৈতিক লোক। তারা ছিল মুনাফাখোর। মুনাফা সন্ধান করাই ছিল তাদের কাজ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের বড় মুনাফা বা ব্যবসার লোভ দেখানোর পর তারা মীর জাফর ও মীর মিরনদের জন্ম দেয়। সাথে নেয় প্রতিহিংসাপরায়ন নারী ঘষেটি বেগমকে। ইংরেজদের প্রত্যক্ষ মদদেই তারা বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে আমাদের গোলামির শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলে। ২শত বছর ধরে আমরা ভারতবর্ষীরা ইংরেজদের গোলামি করেছি। একপর্যায়ে ভারত বিভক্তের পর পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর চালায় শোষন, করে নিপিড়ণ, করে অমানুষিক নির্যাতন। আমাদের ভাষা পর্যন্ত তাড়া কেড়ে নিতে চেয়েছিল। আমাদের গোলাম করে রাখতে চেয়েছিল। সেসময় যদি একজন বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি না হত তাহলে আমরা হয়তো পরাধীনই থেকে যেতাম। বঙ্গবন্ধু আমাদের সেখান থেকে মুক্তি দিয়েছেন। দিয়েছেন একটি স্বাধীন দেশ, একটি পতাকা। এখন ইংরেজদের যুগ ও পাকিদের যুগ না থাকলেও উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠ, রাজ বল্লভ, ইয়ার লতিফ গংদের প্রেতাত্নারা মীর জাফর, মীর মিরনদের জন্ম দেয়ার চেষ্টা রীতিমত করেই চলেছে।

    আমাদের দেশে পোল্ট্রি, মৎস ও পশুশিল্প এ তিনটি শিল্পকে নিয়ন্ত্রন করছে চারটি বড় কোম্পানি। তারা সাধারণ ব্যবসায়ীদের করে রেখেছেন জিন্মি। তারা সিন্ডিকেট করে নিজের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন এসব পণ্যের কাঁচামাল। বাধ্যহয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সাধারণ ব্যবসায়ীরা এ তিনটি কোম্পানির সাথে তাল মিলিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আরো অনেক অনেক বেশি। ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে পুঁজি করে তারা দাম রাখছেন নিজের খেয়াল খুশিমতো।
    প্রতিটি দেশেই আমরা দেখে আসছি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় প্রতিটি পণ্যে দাম একেবারে কমিয়ে দেয়। সুযোগ থাকলে ভুর্তকি পর্যন্ত দেয়। যেমন খ্রীষ্টানরা তাদের বড় দিনে সময় নিত্য পন্য আসবাবপত্র, পোষাকসহ প্রতিটি পণ্যে বিশেষ ছাড় দেয়। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতেও তাদের পূজা পাবনের সময় দেয় বিশেষ ছাড়। প্রতিটি শপিংমল সহ বড় বড় মার্কেটগুলোতে শোভা পায় এই পূজা উপলক্ষে এত পার্সেন্ট বিশেষ ছাড়। এটাইতো ধর্ম কর্ম। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ধর্মের দাবীদার আমরা মুসলমানরা। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশেও রয়েছে এই রেওয়াজ। রোজার মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বাসীন্দারা চেষ্টা চেষ্টা করেন সকলকেই নিজের পক্ষে ইফতার করাতে। যত পারেন ছাড় দেন। অন্তত দম বাড়িয়ে দেননা কেউ। আমরা এই বাঙলার মুসলমানরা আমাদের বিশেষ উৎসবে প্রতিবছর কী করি? আমাদের মানে মুসলমানদের বিশেষ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। আমরা ঈদুল ফিতরের সময় বিশেষ করে রোজার সময় যেসকল আইটেম দিয়ে আমরা ইফতার করি, সাহরী খাই রোজা আসার আগেই হু হু করে আমরা তার দাম বাড়িয়ে দিয়। রোজার শুরু দুই দিন আগে থেকেই বেড়ে যায়, বেগুন, শসা, গাজর, পাঁকা কলার দাম। বুট, পেয়াজু বানানো ডাল, ছনার ডালের দামতো বাড়েই। ঈদের আগে বাড়িয়ে দিয় পোষাকের দাম। আমরা এতো নষ্ট যে, ঈদের আগে আমাদের কিছু ব্যবসায়ী ধর্মীয় অনুভুতিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য যেমন জুতো, পাঞ্জাবী, শাড়ি, জামাসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকানে ৪০%-৫০% ছাড় বলে মাঝেমধ্যে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। দেখা গেল যেসকল দোকানে ছাড়ের এমন সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে সেখানে পন্য গুলোর যে দাম যা ছিল, তার চেয়ে তিন গুন বাড়িয়ে পন্যের গায়ে লাগান হয়েছে। মানে ৫০% ছাড়ের পরও ডাবল লাভ।
    এ বছর সরকার বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে আগে থেকে উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে পেয়েছেন সুফলও । এবার রমজানে ব্যবহার্য বেশিরভাগ নিত্যপন্য পর্যাপ্ত পরিমান মজুদ রয়েছে। খাতুনগঞ্জে নেই নিত্যপণ্যের চাপ। কোন পণ্যের ঘাটতি না থাকার পরও রোজার সুযোগ নিয়ে কিছু মির জাফর পন্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। চিনির শুল্ক কমানো হলেও পণ্যটির দাম একটাকাও কমেনি। বরঞ্চ বেড়েছে। কারন ছাড়াই পোল্টি মুরগির দাম বেড়ে দ্বিগুন হয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারকরা ব্যবসায়ীদের সাথে বসে পোল্ট্রি মুরগির দাম ১৯০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এখনও দাম কমেনি। তারাই জানিয়েছে ১৯০ টাকা হলেও তাদের লাভ থাকবে। তাহলে এতোদিন ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি করলো কেন? এখনও কেন দাম কমাচ্ছেনা। বানিজ্যমন্ত্রীর সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, ব্যবসায়ীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও দাম কমাননি। চিনি কেজি প্রতি ৫টাকা কমানোর কথা ছিল।
    প্রচার আছে সরকারের নীতিনির্ধারকরাই নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে অসাধু মুনাফাখোরদের সহযোগীতা করে। বাজার দর নিয়ে সরকার হুশিয়ারী দেয়, তারপরও দাম বাড়ে কিভাবে? এদেশে এই মুহুর্তে উমিচাঁদ, রায় দুর্লভ, জগৎ শেঠ, রাজ বল্লভ, ইয়ার লতিফ গং’র সদস্য কারা? মীর জাফর ও মীর মিরন কারা? জনগন শুধু জানতে চায়না, চায় তাদের চিহ্নিত করে প্রক্যাশ্যে বিচার করা হউক। প্রক্যাশ্যে কঠিন থেকে কঠিনতম বিচার না হলে সরকার যত উন্নয়নই করুক এর সুফল জনগন ভোগ করতে পারবেনা। সুফলে জনগণের ঘরে উঠবেনা।
    সরকার বার বার হুশিয়ারি করার পরও যেহেতু বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখা যাচ্ছেনা, সিন্ডিকেটের সদস্যরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করেই চলেছে। এখনই তাদের লাগাম টেনে ধরা উচিত। আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত।
    বাংলাদেশের কিছু মুনাফাখোর ও সিন্ডিকেট মুনাফাখোররা (ব্যবসায়ীরা) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে সকল পন্যের দাম দিন দিন বাড়াচ্ছে। তারা বলছে যুদ্ধের প্রভাব। এদেশের মানুষ বোকা তবে এতো বোকা নয়যে কোনটা আমদানী পন্য কোনটা নিজের দেশের পন্য তা বুঝে না। সিন্ডিকেট সদস্যরা আমদানি পন্য আর নিজের দেশের পন্য এসবের বাছবিচার না করেই দাম বাড়িয়ে চলছে।
    নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর তার ঘাতকদের একজন মীর জাফরের নামে এদেশে কোন মা-বাবা তার সন্তানের নাম পর্যন্ত রাখেনা। মীর জাফর ছিল সুন্দর একটি নাম, অথচ এই নামটি এখন ব্যবহার করা হয় বেঈমানের পরিভাষা হিসেবে। সরকার ব্যাবসা করুক এটি আমি কখনও ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করিনা। কারন সরকারের প্রায় প্রতিষ্ঠানই অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।
    সরকার গত বছরের মতো এবারও টিসিবির পন্য বিক্রি করছে। দেশের এক কোটি মানুষ টিসিবির পন্য পাচ্ছে। টিসিবির পন্য যেসকল সাধারণ মানুষ পাচ্ছেনা তারা কিন্তু কষ্ট করছে। সরকার নিত্যপন্য আমদানি করে ও দেশিয় পন্য বাজার থেকে ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করে টিসিবির মাধ্যমে সারা বছর সর্বসাধারণের কাছে বিক্রি করলেও দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণ থাকে।
    বর্তমান সরকার সকল কিছু জয় করেছেন, দেশে অনেক উন্নয়ন মূলক মেগাপ্রকল্প করেছে। আইনশৃঙ্খলাসহ সকল কিছু নিয়ন্ত্রনে রেখেছেন। বাজার দরটা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবেননা এটা কিছুতেই মেনে নেয়ার মত নয়।
    এ বছরই জাতীয় নির্বাচন। এ বছর যদি বাজার দর নিয়ন্ত্রনে রাখতে না পারে তাহলে নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব পরার সম্ভাবনা রয়েছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে যে বিভিন্ন পন্যের দাম হু হু করে বেড়েছে সেটাও সরকারকে প্রচার করতে হবে। বিশ্ব বাজারের ওপর সরকারের যে কোন হাত নেই সেটাও প্রচার করতে হবে। সরকার বিরোধীরা লাগাতার সরকারের বিরুদ্ধে যে বাজার দরের ব্যাপারে ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত ভাবে মিথ্যা প্রপ্রগান্ড প্রচার করে আসছে সে ব্যাপারে যুক্তিযুক্ত উত্তর দিয়ে খন্ডন করতে হবে। সবার আগে বাজারকে সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
    লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক আমার ফেনী।

    আরও পড়ুন

    মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বিএনপির দু’পক্ষের সংঘর্ষ
    ফুলগাজীতে গুড়িয়ে দেয়া হলো ইটভাটা, জরিমানা ৭ লাখ টাকা
    ফেনীতে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট গ্রেপ্তার-৯
    গ্রামের বাড়ি হলো পতিতা পল্লী
    ক্রীড়া সংস্থার কমিটি বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি
    জনসভাকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির প্রস্তুতি সভা
    ফাজিলপুরে যুবদলের কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল
    চাঁদাবাজির অভিযোগে জামায়াতের জাকির বহিষ্কার