জমির বেগ
ফেনীর জায়লস্করে বারাহিগোবিন্দ গ্রামে ছোট ফেনী নদী দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সিরাজুল হকের বিরুদ্ধে। সিরাজুল হক উত্তর বারাইগোবিন্দ গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহিগোবিন্দ মৌজার জেঃএল নং-৫৪, ২৬৫৩ খতিয়ানে ৬০ শতাংশ ও ২৬৫২ দাগে ৯০ শতাংশ জমি সিরাজুল হক হাঁস-মুরগি পালনের জন্য লিজ (বন্দোবস্তী) নেন। পরবর্তীতে হাল জরিপ চলাকালীন সময় ভূমি অফিসের যোগসাজসে ২৬৫৩ দাগের ৬০ শতাংশের পরিবর্তে মূল নদীর বিভিন্ন দাগে ১০৩ শতাংশ ভূমি তার নিজের নামে করে নেন। যে অংশটি সে নতুন করে নিজের নামে করে নেন তার সম্পূর্ণই নদীর বুকের অংশ। সে অংশটি পানি প্রবাহের মূল শ্রোতধারা।
স্থানীয়রা জানান, সরকারের কাছ থেকে নদীর পাশের কিছু অংশ ইজারা নেয়ার সময় সেখানে হাঁসের খামার করার কথা থাকলেও বর্তমানে সিরাজুল হক সেখানে নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন। প্রবাহমান ছোট ফেনী নদীর পাশের পতিত জমিটিই তাকে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য ইজারা দেয়া হলেও বর্তমানে সে পুরো নদীই দখল করে নেন। স্থানীয় বেলায়েত হোসেন জানান, সিরাজুল হকের ইজারাকৃত ভূমির নথির সাথে দখলকৃত ভূমির কোন মিল নেই। সে ৪৬৭ দাগে ২৫ শতাংশ, ১৫ দাগে ১৬ শতাংশ, ১৪ দাগে ৫১ শতাংশ ও ১০৫২ দাগে ১০ শতাংশ ভূমি দখল করে নিয়েছেন। এ দাগগুলো সম্পূর্ণ নদীর পানি প্রবাহের জায়গা। গতকিছুদিন আগে থেকে তিনি পুরো নদী দখল করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মানের জন্য সীমানা প্রাচীর নির্মান করেছেন। কিছুদিন পূর্বেও এখানে একটি কালাভার্ট ছিল। নদীর পানি এ কালভার্টের নীচ দিয়ে প্রবাহমান থাকায় স্থানীয়রা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করতো। কিন্তু গেল বছর সিরাজুল হক বালুর বস্তাদিয়ে কালভার্টটি ভরাট করে ফেলেন। এতে নদীর পানি প্রবাহের জায়গা না পেয়ে লোকালয়ে উঠে পড়ছে।
স্থানীয় নুরুল আমিন, আবদুর রশিদ, মো. শাহজাহান, আবদুল খালেক ও ফারুক জানান, এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট তারা ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তারা ছোট ফেনীর নদীর শ্রোতধারার মাঝখানে সিরাজুল হকের বহুতল ভবন নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা জানান, গত বছর পর্যন্ত বিজিবি ক্যাম্পের পানি ও স্থানীয় লোকালয়ের পানি এ ছোট ফেনী নদী দিয়ে প্রবাহিত হতো। বর্তমানে হচ্ছেনা। নদী ভরাট করে ফেলায় পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। মানুষের ঘর-বাড়িতেও পানি উঠে যাচ্ছে। এ নদীর পানি ব্যবহার করে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন ও দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বাসিন্দারা চাষাবাদ করতো। নদীর কালভার্টের মুখে বালুর বস্তা দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়ায় নদীটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তারা জানান, সিরাজুল হকের দেখাদেখি নদীর পাশের অন্যরাও নদী দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্থানীয় মো. শাহজাহান জানান, উক্ত নদীর পাশে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কাশিমপুরে তার ৫টি মাছের খামার রয়েছে। বর্ষাকালে লোকালয়ের পানি নদীতে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় তার মাছের খামারগুলো পানিতে ভেসে যাওয়ার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া সেখানে তার পারিবারিক পাঁচ একর জমি আছে। নদীর মুখ বন্ধ করে দেয়ায় সেখানে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় ওবায়েদ মেস্ত্রি বাড়ির আবুল হোসেন জানান, আগে যখন নদীটির কিছু অংশ ভরার করা হয়েছিল তখনও নদীর পানি ঠিকমতো প্রবাহিত হতে না পারায়, তার বাড়িতে পানি উঠে যায়। বর্তমানে নদীটির পানি চলাচলের মুখ পুরোদমে বন্ধ করে দেয়ায় এ বর্ষায় তার পুরো বাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে। সাবেক ইউপি সদস্য ফারুক জানান, নদীতে কিছুদিন আগেও পানির প্রচুর প্রবাহ ছিল। এখানকার মানুষরা নদীর পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করতো। বর্তমানে নদীটি বন্ধ করে দেয়ায় চাষাবাদ যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে গ্রামকে গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাবে।
এব্যাপারে সিরাজুল হক বলেন, ভূমিটি আমার লীজকৃত। বিএস খতিয়ানে জমিটি আমার ও আমার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানার নামে করা আছে।
এব্যাপারে জায়লাস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মিলন বলেন, স্থানীয়রা তার কাছে এব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত। নদীটি উদ্ধার করা সময়ের দাবী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, তিনি সরেজমিনে পরিদর্শণ করেছেন। সিরাজুল হককে ইজারাকৃত জমির বাহিরে গৃহ নির্মাণ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বলেন, ছোট ফেনী নদীর এ অংশটি এক ব্যক্তি দখল করে রেখেছেন ঘটনাটি সত্য। এটি দখলমুক্ত করে ছোট ফেনী নদীকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এখনই প্রয়োজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন বলেন, নদীটি আমরা কাউকে ইজারা দিয়নি। উপজেলা প্রশাসন থেকে দেয়া হয়েছে কিনা জানানেই। সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবো। ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল-হাসান বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। উপজেলা নির্বাাহী কর্মকর্তাকে ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নদী দখল করে কোন স্থাপনা করা যাবে না।